ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে বিক্ষোভে উত্তাল ভারত। গত এক সপ্তাহের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৬ জন। উত্তর প্রদেশেই মারা গেছে ১৭ জন। যে ইস্যুতে আন্দোলনে নেমেছে ভারতের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই ইস্যু নিয়ে অনেকটা সুর নরম করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এনআরসি ইস্যুতে পিছু হটতে পারেন মোদি-অমিত শাহরা। তবে ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার’ বা এনপিআর এর কাজ বন্ধ করছে না বিজেপি সরকার। খবর আনন্দবাজারের।
মোদি সরকারের বক্তব্য, ২০২১-এর জনগণনার সঙ্গেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক এনপিআর-এর পরিমার্জনা ও সাম্প্রতিকতম তথ্য সংযোজনের কাজ করা হবে। আগামী বছরের এপ্রিল থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদমশুমারি এবং এনপিআর পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ২০২০-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কাজ চলবে। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর জন্য প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর হতে পারে। আদমশুমারির জন্য আট হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা এবং এনপিআর পরিমার্জনায় তিন হাজার ৯৪১ কোটি টাকা খরচ হবে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে ইতিমধ্যেই এনপিআর তৈরির প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। তৃণমূল, সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, এনপিআর-এর ভিত্তিতেই আগামী দিনে গোটা দেশে এনআরসি তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আসামের মতো গোটা দেশেই এনআরসি হবে এবং তার মাধ্যমে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে। তাই এনপিআর তৈরির প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া জরুরি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ সূত্রের অবশ্য দাবি, সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকত্বের বিষয়টি কেন্দ্রের আওতায় পড়ে। ফলে কোনো রাজ্যই এনপিআর তৈরির কাজে বাধা দিতে পারে না।
‘এনপিআর’ কী
-এ দেশের বাসিন্দাদের পরিচিতি বহনকারী সার্বিক তথ্যভাণ্ডার।
-কোনো এলাকায় গত ছয় মাস ধরে বসবাসকারী ও পরের ছয় মাস সেখানেই থাকতে পারেন, এমন বাসিন্দার তথ্য নেওয়া হয়।
-২০২১-এর আদমশুমারির সময় আসাম বাদে অন্যত্র এনপিআর-এর জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে ২০২০ এর এপ্রিলে। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
– এনপিআর-এ নাম নথিভুক্ত করা ও তথ্য জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
-২০১১ সালে আদমশুমারির সময় প্রথম বার এনপিআর তৈরি হয়। ২০১৫-য় তা পরিমার্জন হয়।
এনপিআর-এ কে এই দেশের নাগরিক, কে নন, তা যাচাই করা হচ্ছে না। এনআরসি হলে নাগরিকত্ব যাচাই হবে।
দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে মোদি সরকার এনআরসির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি করলেও সরকারি কর্তারা বলছেন, এনপিআর-এর ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব ইন্ডিয়ান সিটিজেন’বা সর্বভারতীয় এনআরসি তৈরি হতে পারে। এনপিআর-এ এ দেশের বাসিন্দাদের নাম নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেখানে নাগরিকত্ব যাচাই করা হয় না।
তবে সরকারি সূত্রের খবর, এবার এনপিআর তৈরির সময় বাবা-মায়ের জন্মের স্থান ও তারিখ জানতে চাওয়া হবে। ২০১১ সালে যখন প্রথম বার এনপিআর তৈরি হয়, তখন এই সব তথ্য চাওয়া হয়নি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সে সময় ১৫টি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এবার ২১টি তথ্য চাওয়া হবে। বাবা-মায়ের জন্মের স্থান, তারিখ ছাড়াও শেষ ঠিকানা, পাসপোর্ট, আধার, প্যান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার কার্ড, মোবাইল নম্বর চাওয়া হতে পারে। এনপিআর থেকেই যে এনআরসি-এর ভিত তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে, এই সব তথ্য সংগ্রহ করা থেকে তার ইঙ্গিত মিলছে বলে অনেকের দাবি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য, এনপিআর জরুরি ভিত্তিতে পরিমার্জন করা দরকার। এক, অপরাধীদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা এবং দুই, সঠিকভাবে সরকারি প্রকল্প তৈরি ও রূপায়নের জন্য। কিন্তু সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর—সবই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। এনপিআর তৈরি করে আগে সন্দেহজনক নাগরিকদের চিহ্নিত করা হবে। তার পরে এনআরসি এনে তাদের বাদ দেওয়া হবে।’
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, কংগ্রেস এখনো এনপিআর-এর বিরোধিতা করছে না। কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে এনপিআর-এর কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়নি। মনমোহন সরকারের আমলেই প্রথম ২০১১ সালে আদমশুমারির সঙ্গে এনপিআর তৈরির কাজ হয়। তারপর ২০১৫ সালে তাকে ‘আপডেট’করা হয়। কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য যুক্তি, এনপিআর তৈরির জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল বাজপেয়ী সরকার। ২০০৩-এর ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে ‘সিটিজেনশিপ (রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেনস অ্যান্ড ইস্যু অব ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) রুল’ জারি হয়।