ফলোআপ-২
বিশেষ প্রতিবেদন : রাজধানীসহ সারা দেশে অবস্থিত ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এবং ড্রাগ প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে নকল, ভেজাল ও নিম্মমানের ওষুধের রমরমা বাণিজ্য চলছে। অবৈধ, নকল, ভেজাল ও নিম্মমানের ওষুধের বিষাক্ত ছোবল দেশে মহামারির আকার ধারণ করেছে। এই মহামারি সাম্প্রতিক কালের করোনা ভাইরাসকেও হার মানিয়েছে। চীনে করোনা ভাইরাসে মানুষ মৃত্যুবরণ করছে অপরদিকে অবৈধ, নকল, ভেজাল, ও নিম্নমানের ওষুধের বিষাক্ত ছোবলে মানুষ ধুকে ধুকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর সাথে চিকিৎসা ব্যায় মিটাতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মৃত ব্যক্তির পরিবার ও পরিজন। বিশেষ করে বলবর্ধক, শক্তিকারক, রুচিবর্ধক, ও যৌনশক্তি বর্ধক, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপ সেবনে ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হওয়ার কারণ স্বরুপ জানা যায়, ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ প্রতিষ্ঠান মালিক পক্ষ কাঁচা টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে ভিটামিন ওষুধে ডেক্সামেথাসন, সিপ্রোহেপ্টাডিন, থিয়ভিট ও ষ্টোরয়েড জাতীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। যৌন উত্তেজক সিরাপে সিলডেনাফিন সাইট্রেট ও ট্রাডালাফিন সাইট্রেড ব্যবহার করার কারণে মানবদেহের লিভার, কিডনি ও হার্টের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ফলে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের আপমর জনগণ। আর এই জন্য দায়ী ড্রাগ প্রশাসনের কতিপয় দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা। কোন কোম্পানি যৌন উত্তেজক ওষুধ সামগ্রীতে সিলডেনাফিন সাইট্রেট, ট্রাডালাফিন সাইট্রেড, কেফেইন বা অন্যকোন যৌন উত্তেজক কেমিক্যাল সনাক্ত হলে ওই কোম্পানিকে নাম-মাত্র শাস্তি দেয় ওষুধ প্রশাসন। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করে, পুনরায় গোপন সমঝোতায় বাতিল আদেশ প্রত্যাহার ও হয়। এসব বিষয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে জাতীয় পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নমুনা কপি সংযুক্ত করে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বরত ওষুধ তত্ত্বাবধায়কদের ওই সকল কোম্পানির উল্লেখিত ওষুধ বাজার থেকে সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষার জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করার জন্য এক লিখিত আদেশ দেন। এ আদেশের পর জেলা পর্যায়ের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক এবং চিহ্নিত নকল ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ পরস্পর যোগসাজশে বাজার থেকে ওষুধ এর নমুনা সংগ্রহ না করে কোম্পানী মালিক পক্ষের নিকট থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিতর্কিত কোম্পানী থেকে নমুনা নিয়ে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে প্রেরণ করেন। ফলে জাতীয় ও জনস্বার্থে গৃহীত সাবেক মহাপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের পদক্ষেপ ভেস্তে যায়। অন্ধকারে থেকে যায় রাগববোয়াল নকল-ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী চক্র। এরপর নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান যোগদান করার পর থেকে অদ্যবধি তিনি জাতীয় ও জনস্বার্থে কল্যাণকর মহোতি সব পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। এর মধ্যে বহুল আলোচিত ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ডা. আলমগীর মতির মডার্ন হার্বালের কারখানায় ভেজাল বিরোধী অভিযান ও পরিচালনা করেন। একই সাথে অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাষ্ট্রিজ এ অভিযান পরিচালনা করে দেশের নকল-ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকারীদের ভীত কাঁপিয়ে দেন। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা বেশ কিছু ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে লিখিত নির্দেশ প্রদান করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে প্রাপ্ত হয়ে বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জেলা পর্যায়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত ওষুধ তত্ত্বাবধায়কদের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বাজার থেকে ঐ সকল কোম্পানির নমুনা সংগ্রহ ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবে গুণগত মান যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। মহাপরিচালকের এই নির্দেশ প্রদানের পর বিভিন্ন জেলায় ও রাজধানীর বিতর্কিত ওষুধ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট দেনদরবার শুরু করেছেন বলে কোম্পানির মালিকদের একটি সূত্রে জানা যায়। বিতর্কিত এসব কোম্পানির মধ্যে সান ড্রাগ ইউনানী, মাইসান ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, রোজমার্ক ইউনানী, ম্যাবকোফার্মা ইউনানী, ঢাকা অর্গানিক ফার্মা ইউনানী, জেবিএল ড্রাগ ইউনানী, আল সাফা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, নাফিউ ফার্মা ইউনানী, একরাম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), রবিন ফার্মাসিটিক্যাল (আয়ু), আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, আধুনিক ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, সিকো আয়ুর্বেদিক, বিসমিল্লাহ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, জিএম ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, ওষুধী ল্যাবরেটরিজ (আয়ু), সুরমা ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, র্যাম ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, সেইফকো ফার্মাসিটিক্যালস ইউনানী, এমী ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), দিদার ফার্মাসিটিক্যালস (আয়ু), ম্যান হার্ট ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, জেন ফার্মা ইউনানী, জে-এন্ড-টি ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, বিএন ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, জেনেসিস ফার্মাসিটিক্যালস (আয়ু), দিহান ফার্মাসিটিক্যালস (আয়ু), ইউনিটি ফার্মাসিটিক্যালস ইউনানী, রয়েল ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইগোফার্মা ইউনানী, ইউনিক ল্যাব ইউনানী, মিষ্টিক ফার্মা ইউনানী, একটিভ ইউনানী, জীনি ইউনানীক, নিকো আয়ুর্বেদিক, আরকে ইউনানী, কেইউ ফার্মা ও শ্রীপুর দাওয়া খানা উল্লেখ যোগ্য। এসকল কোম্পানির মধ্যে ইন্ট্রা ফার্মা ইউনানী ও বিসমিল্লাহ ল্যাবরেটরিজ এর উৎপাদক লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে ওষুধ প্রশাসন তবে সরেজমিনে এই দুইটি কোম্পানির ওষুধ প্রতিনিয়ত সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক বলেছে কোম্পানি বন্ধ, কাগজে কলমেও বলেছে বন্ধ কিন্তু, দেশের আনাচে-কানাচে গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিসমিল্লাহ জিনসিন এবং ইন্ট্রা ফার্মার জিনসিন প্লাস, রুবিকর্ড ও আরক লাহামিনা মুড়ি-মুড়কির মত বিক্রি হচ্ছে।