মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর হেফাজতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সময় শেখ সাহেব একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জাতিকে, অঙ্গিকার করেছিলেন এটা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের জীবনে বড় অর্জন ছিলো। সেটা হলো সত্তুরের নির্বাচনের আগে তিনি তার দলীয় নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা করেছিলেন আমরা নির্বাচনে পাশ করতে পারলে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাস করবো না। ৭২ সালে তিনি সে প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
আমি গোপালগঞ্জের মাটি ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমিতে দাড়িয়ে চ্যালেঞ্জ করে বলে গেলাম সত্তুর সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে একথা না থাকে আগামী দিনে মানুষের সামনে মাইকে কোন কথা বলবো না।
আজ শনিবার ( ৭ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩ টায় গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরা নিলামাঠ মদিনাতুল উলুম মাদরাসার পাশের মাঠে গোপালগঞ্জ উলামা পরিষদে’র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনের এক বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সত্তুরের নির্বাচনে যে ঘোষনা দিয়েছিলেন এটা জাতির সাথে অঙ্গিকার ছিলো, ওয়াদা ছিলো এই কমিটমেন্ট ছিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বাহাত্তর সালে ভারতের চাপে বাংলাদেশের সেই অঙ্গিকার, সেই ওয়াদা বরখেলাপ করা হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে ইসলাম বিরোধী ধর্ম নিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করে সত্তরের নির্বাচনে ওয়াদার সাথে গাদ্দারি করা হয়েছে।
সেই থেকে সমস্যা বাংলাদেশের। ১৯৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে ভারত তার সংবিধানের মূল নীতি গুলো আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানের উপর চাপিয়ে দিয়ে গোটা বাংলাদেশকে তার সেবা দাসে পরিনত করতে চায়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদেশ্য তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখন কানে পানি ঢুকছে। আমরা এত বছর ধরে চিৎকার করি আমাদের কথা তখন ভালো লাগে নাই। এখন সবাইকে ডাকতেছে, তাও ভালো। মরার আগে অন্তত একটু সতর্ক হয়েছেন, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন আপনারা চিন্তা করেছেন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের আধিপত্য থেকে কিভাবে দেশকে হেফাজত করা যায়। সকলকে ডেকেছেন আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু আপনারা যেটা চান সেটা কোন দিন হবার নয়। গাছের শেকড়ে পানি ঢালবেন আর উপরে গাছ কেটে বিষ বৃক্ষের ছায়া থেকে মুক্ত হবেন? এটা কস্মিন কালেও সম্ভব হওয়ার নয়।
শুধু বিষ বৃক্ষের ডাল কাটলে হবে না, শিকড় শুদ্দু উপড়ে ফেলতে হবে। আর সেই শিকড় হলো বাংলাদেশের সংবিধানের মধ্যে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন এবং নীতিমালা করার যে ওপেন স্পেস তা বন্ধ করতে হবে।
ভারতীয় সংবিধান থেকে পাচারকৃত ভারতীয় মাল ধর্ম নিরপেক্ষতা বাংলাদেশ সংবিধান থেকে দিল্লিতে ট্রান্সপার করতে হবে।
বাংলাদেশ সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাতিল করে আল্লার উপর আস্থা বিশ্বাস ইমানের ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সংবিধান সংস্কারের সম্পর্কে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের কথা চলছে , এই সুযোগে একটা কথা বলতে চাই, সেখানে এমন একটা ধারা থাকতে হবে,যেই ধারার মাধ্যমে কোরআন সুন্নার বিরোধী যে কোন আইন, যে কোন নীতি, যে কোন বিধান বাতিল ও অকার্যকর বলে গন্য হবে। ইসলাম বিরোধী ও শরিয়ত বিরোধী কোন আইন বা নীতিমালা চলবে না। সেটা জাতিসংঘ করুক, বা ওআইসি করুক ইভেন সার্ক করুক যে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাই করুক।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা সব সময় আমাদেরকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। আপনাদের কিছু পরামর্শ দিয়ে যাই কিছু উপদেশ দিয়ে যাই, আপনাদের কল্যাণ কামনা করে যাই, সেটা হলো এই,আপনাদের অনেক ভুল সেটাতো আপনারা মানেন? ভুল ত্রুটি সবার থাকে আমাদেরও আছে। আপনাদের সব থেকে বড় ভুল যেটা ৫০ বছর যাবত করে আসছেন। আশা করি এইবার হোচট খাওয়ার পর একটু হুশ আপনাদের ফিরবে। আপনারা সেই ভুলটা সংশোধন করার চেষ্টা করবেন। সেটা হলো, আওয়ামী লীগের সব চেয়ে বড় ভুল আলেমদের কাছ থেকে কোন রাজনৈতিক কথা তারা সহ্য করতে পারেনা। আলেমদের কাছে থেকে তারা মাশলা মাশায়েত শুনতে পছন্দ করে, আলেমদের খতম শুনতে পছন্দ করে, আলেমদের কাছ থেকে মিলাদের সুর শুনতে পছন্দ করে, ওয়াজ শুনতে পছন্দ করে। কিন্তু আলেমরা যখন কোরান সুন্নাহের আলোকে রাজনৈতিক কথা বলে তখন আপনাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। এই নিয়ে আপনাদের সাথে আমাদের অনেক বার লড়াই হয়েছে। আপনারা আমাদের কন্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা করেছেন। আপনারা এক দলের রাজনীতি করেন আমরা এক দলের রাজনীতি করি।
আমাদের পূর্বসুরি শামসুল হক ফরিদপুরির কন্ঠ সে যুগের স্বৈরাচারীরা বন্ধ করতে পারে নাই। তার আদর্শিক সন্তান উত্তরসূরিদের কন্ঠ রোধ করতে পারবেনা। তাই যদি পারেন এগুলো সংশোধন করে পুনরায় আসতে পারেন আইসেন। তা না হলে আমাদের সাথে আপনাদের লড়াই শেষ হবে না।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য আরো বলেন, আমরা আপনাদের একটা পরামর্শ দেই ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর আমাদের হিম্মত অনেক বৃদ্ধি এখন। যে জাতির সন্তানেরা জালিমের বুলেটের সামনে নিজের বুক পেতে দিতে পারে। যে জাতির মায়েরা আবু সাইদের মত সন্তান গর্বে ধারন করতে পারে। লক্ষ আবু সাইদ বাংলার ঘরে ঘরে আছে। এর পরে বিপ্লব হবে আল্লার জমিনে আল্লাহর কোরানের শাসন কায়েম করার বিপ্লব। এর পর বিপ্লব হবে ইসলামি খিলাফত কায়েম করার বিপ্লব। সে বিপ্লবের জন্য দুই হাজার নয়, দুই লক্ষ নয়, দুই কোটি যুবক সাহাদাত বরনের জন্য জমায়েত হবে । ইনশাল্লাহ আমরা জেগে আছি। বাংলাদেশ ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত হবে না।
গোপালগঞ্জ উলামা পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে উলামা পরিষদের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদেশী মেহমান মক্কা শরীফ থেকে আগত শায়েখ রউফ বিন আব্দুল হাফিজ মাক্কী, মদিনা শরীফ থেকে আগত শায়েখ আহমাদ বিন আব্দুল অহিদ মাদানীসহ ওলামা পরিষদের স্থানীয় ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।