নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩৮২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮০৭৩৫ জনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভাইরাসটি এবার বাংলাদেশেরও হানা দিয়েছে। দেশে ৩ জন করোনায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এছাড়াও আরও ৩ জনকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন ধূমপায়ীরা। গবেষকরা বলছেন, ধূমপান ফুসফুস রোগের কারণ। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপি-ের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আর এতে যদি কোন ধূমপায়ীরা আক্রান্ত হয় তাহলে তার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো- হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশি। তবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলে ঝুঁকি বেশি। তাই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধরে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতীতের সার্স ও চলমান করোনাভাইরাসের মতো মহামারিতে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বয়স্করা। তবে এর সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকরা। তবে গবেষকরা এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মনে করছেন, ধূমপান ও দূষণের কারণে এদের তরতাজা ফুসফুস এখনও সক্ষমতা হারায়নি। এবং এই বয়সে তাদের ডায়াবেটিস ও ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিসেসের (সিওপিডি) মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’স কিরবি ইনস্টিটিউটের বায়োসিকিউরিটি বিভাগের প্রধান রেইনা মকন্টায়ার। এই অধ্যাপক বলেছেন, যাদের ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ভাইরাস খুবই নির্দয়।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সনজয়া সেনানায়েক বলছেন, যদিও করোনাভাইরাস ও ধূমপানের মধ্য এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি, তারপরও ধূমপান অন্যান্য সমস্যা তৈরি এবং করোনা মোকাবিলায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি জানান, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস ও হৃদপি-ের রোগসহ অন্যান্য রোগের কারণ ধূমপান। আর এ ধরনের রোগ থাকলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১০৪টি দেশ ও অঞ্চলে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে চীনের পরে আছে ইতালি। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে ৩৬৬ জন মারা গেছে। এরপর রয়েছে ইরান। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫১, যুক্তরাষ্ট্রে ২২, ফ্রান্সে ১৯, স্পেনে ১৭, জাপানে ৭, ইরাকে ৬, যুক্তরাজ্যে ৩, নেদারল্যান্ডসে ৩, হংকংয়ে ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৩, সুইজারল্যান্ডে ২, মিশরে ১, তাইওয়ানে ১, থাইল্যান্ডে ১, সান মারিনোতে ১, আর্জেন্টিনায় ১ ও ফিলিপিন্সে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডায়ামন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। পরে চীনের সীমানা ছাড়িয়ে এটি অন্যান্য দেশেও থাবা বিস্তার করেছে। এখনও পর্যন্ত এই রোগেও কোনও ওষুধ ও প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় মারাত্ম ঝুঁকিতে রয়েছে গোটা বিশ্ব।
