পূর্বাচলের প্লটখেকো সেই রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান।
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এ যেন সোনার খনি। চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসতে পারলেই উত্তরা, পূর্বাচল কিংবা ঝিলিমিল প্রকল্পে প্লট নিশ্চিত। তাও আবার যেন তেন প্লট নয়, পূর্বাচলে বাগিয়ে নেওয়া যায় ১০ কাঠার প্লট। রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে অবশ্য ১০ কাঠার প্লট পাওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে প্লটের আকার ৫ কাঠা। ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট তো নস্যি!
গত ১৫ বছরেও সরকারি প্লট বাগিয়েছেন সংস্থাটির অনেক চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগেভাগে যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন সেই আনিসুর রহমান মিয়ার পছন্দ ছিলো পূর্বাচল। তিনি এখানেই নিয়েছেন ১০ কাঠার প্লট।
রাজউকের প্লট বা বাড়ি বরাদ্দের একটি বিধি রয়েছে। কেউ রাজউকের চেয়ারম্যান হলেই সরকারি প্লট পাবেন-এমন কোন ধারা এই বিধিতে নেই। তবে এই বিধির ১৩(এ) ধারায় বিশেষ ক্ষমতাবলে যে কোন সময় যে কাউকে প্লট দিতে পারে সরকার। এই বিধির একটা গালভরা নামও আছে, ‘বিশেষ কোটা’।
এই ধারা অনুসারে সরকার রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাষ্ট্রীয় কাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তি, শিল্পী-সাহিত্যিক ও সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিকে প্লট বা বাড়ি দিতে পারে। রাজউকের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ পর্যায়ের আমলা কিংবা মন্ত্রী-এমপিগণ সাধারণত রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ অবদান রাখার ক্যাটাগরিতে প্লট নেন।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়া রাষ্ট্রীয় কাজে কেমন বিশেষ অবদান রেখেছেন তা কেউ নিশ্চিত নন। তবে তিনি একটি বিশেষ কাজ করেছেন। তা হলো পূর্বাচল উপশহরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ৬ জনের প্রত্যেকের নামে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ দিয়েছেন।
এই বরাদ্দ দিতে গিয়ে তিনি একবারও প্রশ্ন করেননি যে, রাজউক শেখ রেহানাকে গুলশানে একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। তাই তিনি রাজউকের আরেকটি প্লট পাওয়ার যোগ্য নন। কিংবা একবারও প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেননি যে, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে প্লট বরাদ্দ অনৈতিক।
তবে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করার মতো দুঃসাহস কার আছে ! এর চেয়ে বরং নিজেও প্লট নিয়ে নেওয়াকেই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেছেন আনিসুর রহমান।
অবশ্য গত ১৫ বছরে এভাবে প্রায় দেড় হাজার প্লট বরাদ্দকে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসাবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য এসব প্লটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।
রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যম কে জানিয়েছেন, সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়া যদি একই কায়দায় প্লট নিয়ে থাকেন তাহলে সেই বরাদ্দও বাতিল হতে পারে।
সাধারণত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদেরকেই রাজউকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তাই এই কর্মকর্তাদের মধ্যে সবসময় প্রতিযোগিতা থাকে রাজউকের চেয়ারম্যান হওয়ার।
অবশ্য সরকার চাইলে অন্য কোনো সংস্থা বা আমলাতন্ত্রের অন্য কোনো কর্মকর্তা কিংবা তাদের বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দিতে পারে।