নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণার পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছেনপ্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরের দিকে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছে সরকার। আপাতত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তাই এ সিদ্ধান্ত। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যদি ঘরের বাইরে যায়, তাহলে এ সিদ্ধান্ত কাজে আসবে না। তাই তাদের ঘরের মধ্যে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গ্রীষ্মের ছুটি, রোজার ছুটির সঙ্গে প্রয়োজনে এ ছুটিকে সমন্বয় করা হবে। তখন ছুটি কমে আসতে পারে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী ১৮ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জরুরি বৈঠক শেষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এ ঘোষণা দেন।
এদিকে দেশে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরের দিকে রাজধানীর মহাখালীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি জানান, এর আগে জার্মানি ও ইতালি থেকে আসা যে দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, নতুন করে আক্রান্তরা তাদের একজনের আত্মীয়।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নতুন করে আক্রান্ত এই তিনজের উপসর্গ খুবই কম। তাদের বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া যেতো। কিন্তু তাদের মাধ্যমে অন্যরা যাতে আক্রান্ত না হন, তাই তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে দুইজন ইতালি ফেরত প্রবাসী ছিলেন। বাকি একজন ছিলেন ওই আক্রান্তদের একজনের স্ত্রী। পরে গত শুক্রবার আইইডিসিআর জানায়, আক্রান্ত তিন ব্যক্তির মধ্যে তিনজনই সুস্থ হয়েছেন।
এরপর শনিবার (১৪ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো দুজনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান।
প্রসঙ্গত, চীনের উহান থেকে বিস্তার শুরু করে গত আড়াই মাসে বিশ্বের ১৪৫টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনে করোনার প্রভাব কিছুটা কমলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
রোববার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫১৫ জন। অপরদিকে ৭৭ হাজার ৭৫৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৩ জন।
এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৮৬০ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ২১৩ জন। তবে এখন চীনে এই হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন।