ইনসেটে আলোচিত ও সমালোচিত এলজিইডি’র ধনকুবের গাড়ি চালক রুহুল আমিন সরদার।

নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি কিংবা দুটি নয়; রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ২১টি ফ্ল্যাটের মালিক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডি’র এক গাড়ি চালকের ! বেতন সর্বসাকুল্যে ৩৪ হাজার টাকা।

রুহুল আমিন সরদার নামের এই গাড়ি চালক ১৯৯৬ সালে এলজিইডি-তে দৈনিক ৬০ টাকা হাজিরায় চুক্তিভিত্তিক চাকুরি নেন। কিন্তু সেই চাকরি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। চাকরিতে যোগদানের পর পরই বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং চাকরি হারান। যদিও তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারনে তিনি চাকরি হারান।

গত ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৫ আগস্ট আবারো এলজিইডির চাকরিতে ফিরে আসেন রুহুল আমিন। নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এখন বেতন ৩৪ হাজার টাকা। গাড়ি চালক হিসেবে পুণ:নিয়োগ পেলেও এখন আর তিনি গাড়ি চালান না! রাজনীতি এবং তদবির বানিজ্য করেই দিন কাটান। আর এভাবেই তিনি রীতিমত অল্প দিনেই ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যায়। বিশেষ করে এলজিইডিতে নজিরবিহীন সুযোগ-সুবিধা আদায় করে কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাঝে কয়েক বছর চাকরিতে না থাকলেও এলজিইডিতে তার পদচারনা থেমে থাকেনি। তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এলজিইডি’তে বিভিন্ন তদবির করে দু’হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছেন এই গাড়ি চালক। বিভিন্ন ঠিকাদারকে গোপনে টেন্ডারের তথ্য পাচার, গাড়ির তেল চুরির সিন্ডিকেট চালানোসহ নানা অভিযোগ। আর সেই অর্থে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একতা ও চন্দ্রিমা হাউজিং- এ গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। পাশাপাশি তিনি জমি কেনা-বেঁচা ও ফ্ল্যাটের ব্যবসায় নেমে পড়েন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসি’র কাছ থেকে রুহুল আমিন সরদারের নামে অন্তত ২১টি ফ্ল্যাটে বিদ্যুতের মিটার থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে মোহাম্মদপুরের একতা হাউজিং এর ৪, ৫, ৭, ৮ নম্বর রোডে রয়েছে তার জমি এবং প্রায় আটটি ফ্ল্যাট। একসঙ্গে চলছে তার তিনটি থেকে চারটি বিল্ডিংয়ের কাজ। আর চন্দ্রিমা হাউজিং এ রয়েছে তার দুটি ফ্ল্যাট। এগুলো হলো, একতা হাউজিং এর ৫ নম্বর রোডের ১০১ নম্বর ‘জয়েন্ট টাওয়ারে’, চন্দ্রিমা মডেল টাউনের এভিনিউ-২, ব্লক- ই, বাড়ি নম্বর ১৮ ‘রয়েল প্যাসিফিক টাওয়ারে’, একই মডেল টাউনের ব্লক-বি, রোড: ২, প্লট নম্বর ১০/৭ এ তার ফ্ল্যাটের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরেও রয়েছে অনেক সম্পত্তি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলজিইডি’র স্তরে স্তরে যে লাগামহীন দুর্নীতির মহোৎসব চলছে, তারই নমুনা এই কর্মচারীর সম্পদ।
অভিযোগের বিষয়ে রুহুল আমিন সরদার গণমাধ্যম কে জানান, তারা ১৮জন মিলে একটি বাড়ি তৈরি করেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের ভুলের কারনে ১৮টি ফ্ল্যাটের বিদ্যুতের মিটার ও একটি কমন মিটার তার নামে হয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী আরো একটি ভবনের দুটি বিদ্যুতের মিটার তার নামে ইস্যু করা হয়েছে। অর্থাৎ ২১টি মিটারের মধ্যে তার মাত্র একটি মিটার রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।