নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে গত ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক কারখানার অধিকাংশই বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিনের ছুটি থাকায় ওইসব বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বিরাট একটা অংশ গ্রামে চলে যায়। এই সময়কালে গণপরিবহণও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়।
এদিকে এ সিদ্ধান্তের ফলে বিপত্তিতে পড়ে ছুটিতে বাড়ি চলে যাওয়া গার্মেন্টস কর্মীরা। কেননা গণপরিবহন বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হলেও, তাদের ছুটি বাড়েনি। হিসেব মতে ৫ এপ্রিল (রোববার) কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে তাদের। ফলে উপায় না পেয়ে ‘লক ডাউনের’ মধ্যে দল বেঁধে পায়ে হেঁটেই রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা।
কিন্তু, দেশ যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হুমকির মুখে তখন এ ধরনের জনস্রোত বড় বিপদের কারণ হতে পারে। ফলে এর সমালোচনায় দেশব্যাপী মুখর হয়ে ওঠে মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বইতে শুরু করে সমালোচনার ঝড়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের গণজমায়েত বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে শনিবার দিনগত রাতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সভাপতি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। তাতে নতুন মোড় নেয় সমালোচনা। নানা জন নানা ভাবে সমালোচনা করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
তাদের বক্তব্য, শ্রমিকদের নিয়ে খেলছেন গার্মেন্ট মালিকরা, আর দেশবাসীকে ফেলেছেন করোনার নতুন সংক্রমণের হুমকিতে।
ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, শ্রমিকদের নিয়ে খেলা হচ্ছে। তাদের বাড়ি থেকে ঢাকায় আনার পর বললো, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ।
একটি গ্রুপের পেজে বলা হয়, আর কতো দেখতে হবে! হায়রে বাংলাদেশ, হায়রে সচেতন নাগরিক।
এই পেজেই এক ব্যক্তি বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হকের সমালোচনা করে লিখেছেন, মিস রুবানা, আপনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন নিয়ে যে ছিনিমিনি খেললেন এবং অযোগ্য নেতৃত্বের পরিচয় দিলেন, আপনার পদত্যাগ করা উচিত।
এক সংবাদমাধ্যমকর্মী লিখেছেন, করোনায় এ কেমন তামাশা! গার্মেন্টস বন্ধ না করলে শ্রমিকরা ঢাকায় থাকতো। এখন তাদের বাড়ি পাঠিয়ে যাওয়া-আসার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটানোর আয়োজন করেছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, আমাদের সবার জীবন হুমকিতে ফেলা হলো। এর মানে কী? বুঝলাম ব্যবসা নষ্ট হবে, বায়ার/ব্র্যান্ডের সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হবে, আপনার লাভের আয় হবে না, দেশের রপ্তানি আয় কম হবে, প্রবৃদ্ধি কম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, এখন কী সেসব বিবেচনার অবস্থায় আমরা আছি? প্লিজ বলবেন না যে, ফ্যাক্টরি না খুললে শ্রমিকের বেতন দিতে পারবেন না। অর্ডার বাতিল হয়েছে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলারের। গত বছর মোট পোশাকের ৩৪ বিলিয়ন ডলার রফতানির হিসেব করলে ১০ শতাংশ অর্ডারও তো বাতিল হয় নাই। সব ফ্যাক্টরির অর্ডার বাতিল হয় নাই, কিছু অর্ডার বাতিল হয়েছে।
এক চিকিৎসক লিখেছেন, গাধা পানি খায়, একটু ঘোলা করে। এক লেখক লিখেছেন, মধ্যরাতে ঘোষণা: আজ খুলছে না গার্মেন্টস। ২৫ লাখ হতদরিদ্র শ্রমিককে নিয়ে এই তামাশা তামাশা খেলার কী উত্তর দেবেন রুবানা হক? কী জবাব দেবে রাষ্ট্র!!? কে নেবে তাদের ভোগান্তির দায়! কোথায় পাবো উত্তর!
আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়ার মানে হলো, দ্রুত করোনার বিস্তার ঘটানো। একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য।
এক সিনিয়র সাংবাদিক যেখানে রুবানা হক ও করোনা ভাইরাসের ছবি এক্সপ্নগে পোস্ট করে লিখেছেন, করোনা আর রুবানার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?
করোনা পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট খাতে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার প্রতি ইঙ্গিত করে এক কলামিস্ট লিখেছেন, পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেবেন, আবার সবচেয়ে আশংকাজনক সময়ে গার্মেন্টস খুলে দেবেন, এ কেমন কথা!?
এরকম আরও হাজার হাজার স্ট্যাটাসে ভরে উঠেছে ফেসবুক।
এ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, করোনার এই প্রকোপের মুখে হেঁটে, ট্রাক বা পিক-আপে একসাথে মানুষের গাদাগাদি করে চলাচল মানে সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনা। এইসব মানুষের একজন করোনা পজিটিভ হলে তার মাধ্যমে কারখানা কিংবা বাসাবাড়িতে ভাইরাস ছড়াবে।
এর আগে গত ২৬ মার্চ দিনগত রাতে এক বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান।