!! বিশেষ প্রতিবেদন  !!  ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড: রফিকুল আমিনই কি একমাত্র !বাধা  ?

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত কর্পোরেট সংবাদ জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক  :  সোমবার, ২ জুন,  এক সময়ের বহুল আলোচিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (MLM) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ ও বাস্তবতার বিশ্লেষণ  :  প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমিনকে কেন্দ্র করে নতুন করে অভিযোগের তীর ছোঁড়া হয়েছে, যেখানে তাকেই কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় একমাত্র বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ২০১২ সালের মামলার পর থেকে তার কার্যকলাপ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।


বিজ্ঞাপন

ডেসটিনির উত্থান ও পতনের নেপথ্যে রফিকুল আমিন : ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড যখন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে, তখন লাখ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে, অভিযোগ উঠেছে যে, শুরু থেকেই এর মূল কুশীলব মো. রফিকুল আমিন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করেন, যা পরে প্রতারণামূলক কাঠামোতে পরিণত হয়। তার নেতৃত্বে পরিচালিত এই কার্যক্রমের ফলেই অসংখ্য গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং দেশের আর্থিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।


বিজ্ঞাপন

কারাবাসের পর নতুন প্রতারণার জাল  :  ২০১২ সালে রফিকুল আমিন কারারুদ্ধ হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সহজ-সরল মানুষকে কাজে লাগিয়েছেন। ট্রিপল ডায়মন্ড সেরাজাম মুনির এবং ডিপ্লোমাধারী ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলামের সহযোগিতায় ১৬০টি নতুন কোম্পানি তৈরি করে একেক জন ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। এই টাকার বিনিময়ে তাদেরকে এমডি, চেয়ারম্যান, মার্কেটিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর পদ দেওয়া হয়েছিল। জেল থেকে বের হওয়ার পর যখন বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা ফেরত চান, তখন তাদেরকে রাজনীতিতে বিভিন্ন পদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধাবিত করা হয়।

ডেসটিনি ও রাজনীতির নতুন মোড়  :  ডেসটিনির কার্যক্রমে ১২ বছর ধরে লাখ লাখ মানুষকে পথে বসিয়ে রফিকুল আমিন জেলে যান। কিন্তু তার কারাবাসের এই ১২ বছরেও হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, আইনি বা নৈতিকভাবে ডেসটিনিতে তার ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই, তখন তিনি রাজনীতিতে মনোযোগ দেন। তথাকথিত “গাধা মার্কা অ্যাসোসিয়েটরা” যখন বুঝলেন তাদের কোনো কিছুই হচ্ছে না, তখন তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। রফিকুল আমিনও যখন দেখলেন ডেসটিনি বা ডিটু অ্যাসোসিয়েটস থেকে আর কোনো টাকা আসবে না, তখন তিনি রাজনীতিতে ইউ-টার্ন করলেন।

বৈশাখী টিভি নিয়ে প্রশ্ন এবং বোর্ডের নিষ্ক্রিয়তা  :  কারাগার থেকে বের হয়ে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মালিকানাধীন বৈশাখী টেলিভিশনে বসে নিয়মিত ডেসটিনির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বৈশাখী টিভি কি তার পৈত্রিক সম্পত্তি? না, এটি ৪৯ জন মালিকানাধীন ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের সম্পত্তি। হাইকোর্ট নিযুক্ত বর্তমান বোর্ডের ১০১, ১০২ ও ১০৩তম বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যে সকল পরিচালক কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করতে বাধাগ্রস্ত করছে, তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার অনুরোধ করা হয়েছে।

৪৫ লাখ বিনিয়োগকারীর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও বোর্ডের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন  :  ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ৪৫ লাখ বিনিয়োগকারী এবং ডিস্ট্রিবিউটররা এখনো কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। হাইকোর্ট নিযুক্ত বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কোম্পানি চালুর প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, যা তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের মূল অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমিন। তাদের মতে, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের স্বচ্ছ, আইনানুগ ও টেকসই ব্যবসা পরিচালনার পথে প্রধান ও একমাত্র বাধা তিনিই। তার নেতৃত্বে গঠিত প্রতারণামূলক কাঠামোর মাধ্যমেই লাখ লাখ গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, অনলাইনে কিছু ব্যক্তি রফিকুল আমিনের পক্ষে ডেসটিনি চালুর পথে বাধা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি, হাইকোর্টের ১৭১/২২ রায় বাস্তবায়নের বিপক্ষে রফিকুল আমিন গং যেন ব্যবসা শুরু করতে না পারে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

বোর্ডের বর্তমান কার্যকলাপ নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমান বোর্ডের একটি অংশ রফিকুল আমিনের সাথে মিশে কোম্পানি চালু করতে কালক্ষেপণ করছে এবং ধীরে ধীরে তারা ফ্যাসিবাদী পরিচয় দিচ্ছে।

দ্রুত সমাধান চান বিনিয়োগকারীরা :  এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা দ্রুত এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, ৪৬ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করা হোক এবং ১৭৩/২২ আইন অনুযায়ী দ্রুত কোম্পানি চালু করা হোক।

এই বিষয়ে হাইকোর্ট নিযুক্ত বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা আপডেট পাওয়া যায়নি। তবে, বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাপ এবং উদ্বেগের কারণে, এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ভবিষ্যৎ এবং ৪৫ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য এখন কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপের উপর নির্ভরশীল।

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের এই দীর্ঘসূত্রিতা কি ৪৫ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বপ্নকে চিরতরে বিলীন করে দেবে, নাকি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেবে এখন সেটাই দেখার বিষয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *