!! কাস্টমসের মারুফের হাতে ‘আলাদিনের চেরাগ !! অবৈধ আয়ে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা !! সরকার পতনে আ’লীগের ফান্ডে দিয়েছেন শত কোটি টাকা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মো. মারুফুর রহমান।


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিনিধি, (চট্টগ্রাম) :  এ যেন ‘আলিফ লাইলা’র বাংলাদেশ সংস্করণ। আলাউদ্দিনের ভূমিকায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মো. মারুফুর রহমান। তিনি পদ-পদবীর অপব্যবহার করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।

তার ধন সম্পদের সাম্রাজ্য বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিস্তৃতি পেয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়। নিউইয়র্ক-লন্ডনের অভিজাত এলাকায় তার রয়েছে বাড়ি-ফ্ল্যাট। সংগ্রহে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। তার সৌখিনতা বিলিনিয়দেরও হার মানিয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে শত কোটি টাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ফান্ডে।


বিজ্ঞাপন

মারুফুর রহমানের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র তুলে ধরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছেন মুজিবুর রহমান খান নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন- যুগ্ম-কমিশনার মারুফুর রহমান একজন ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ, স্বর্ণ চোরাচালানকারী ও মাদক ব্যবসায়ী। পদ-পদবীর অপব্যবহার করে বনেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রাম কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মারুফুর রহমান মানিকগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি এবং যুবলীগের সদস্য ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আগের কমিশনারকে কাস্টমস হাউজ বন্ধ রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তার নির্দেশে জেটি কাস্টমস এবং গেইট ডিভিশন বন্ধ রাখা হয়। এতে করে দেশের ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়। তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগকে ফেরাতে ১’শ কোটি টাকা দিয়েছেন দলটির ফান্ডে। তার অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে দুদক ও অন্যান্য সংস্থায় বার বার অভিযোগও দেয়া হয়েছে। টাকা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি অভিযোগের সব ফাইল চাপা দিয়েছেন। এভাবে পার পেয়ে কাস্টমসের অনিয়ম দূর্নীতির বরপুত্র হয়েছেন যুগ্ম কমিশনার মারুফুর।

জানা যায়, পিএসসি’র ড্রাইভার আবেদ আলীর কাছ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মারুফুর রহমান। পরে কাস্টমস ক্যাডারে যোগদান করেন। চাকুরীতে যোগদানের পর পদ-পদবীকে পরিণত করেছেন অবৈধ টাকা আয়ের মেশিনে।

তিনি ঢাকা, বেনাপোল ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের নানান পদবীকে ব্যবহার করে গড়েছেন বিপুল সম্পদের পাহাড়। অবৈধভাবে আয় করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। কাস্টমসের অবৈধ আয় দিয়ে তিনি মানিকগঞ্জের সদর বেতিলা মিউরায় কিনেছেন দুই’শ কাঠা জমি। শিবালয় উপজেলায় কিনেছেন ৫০ কাঠা জায়গা। নবগ্রাম, কৃষ্ণপুর, মহাবেদপুর, ঘিওর এলাকায় কিনেছেন চারশত বিঘা জমি।

২০২২ সালে ঢাকার অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিকের ‘আই’ ব্লকে কিনেছেন ২০ কাঠা জমি। ঢাকার পূর্বাচলের ১৩ নং ব্লকে রয়েছে চার কাঠা জায়গা। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে বিনিয়োগ করেছেন ১’শ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে রয়েছে তিনটি সোনার দোকান। এসব দোকান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেন সোনা চোরাচালানের অবৈধ সাম্রাজ্য।

সিরাজগঞ্জে ২০ কোটি টাকা মূল্যের মারুফ এগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার রয়েছে। মানিকগঞ্জের ডেরা রিসোর্ট ও স্পা’য় রয়েছে বড় বিনিয়োগ। তিনি চট্টগ্রামে চলাচলের জন্য ব্যবহার করেন কোটি টাকা দামের টয়োটা ভেলফায়ার ও প্রিমিও গাড়ি। অভিজাত গুলশান ক্লাবে তিনি ১ কোটি টাকা দিয়ে সদস্য পদ নিয়েছেন। নিজের পাশাপাশি দুই স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে অঢেল সম্পদ।

ঢাকার খিলক্ষেতে প্রথম স্ত্রীর নামে রয়েছে ছয়টি ফ্ল্যাট। রয়েছে দুটি হ্যারিয়ার প্রাইভেট গাড়ি। যার নং ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৪-২৬২৯ এবং ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৫৪৬৫। তবে তিনি বেশির ভাগ সময়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। বিশ্বের ব্যয় বহুল এ শহরে তার রয়েছে বেশ কিছু ফ্ল্যাট ও গাড়ি।

তিনি বসবাস করেন নিউইয়কের অভিজাত ‘সিএন টাওয়ারে’। যার ফ্ল্যাট নম্বর- ব্রঙ্কস-আইডি-৮৯১৯৫৯ সিএন টাওয়ার (৪র্থ তলা)। দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে শুলশানের অভিজাত এলাকায় রয়েছে একটি সাত তলার বাড়ি। রয়েছে একটি ‘সিআরভি’ প্রাইভেট গাড়ি। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ ২৬-৯৮৪৫। এই স্ত্রীর নামে লন্ডনে রয়েছে বাড়ি গাড়ি। তার নামে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা।

তার লন্ডনের বিচমন হিলে রয়েছে একটি বাড়ি। তার ছোট ভাইয়ের জন্য কিনে দিয়েছেন টয়োটা এবং প্রাডো’র মত দামি গাড়ি। এসব গাড়ির আনুমানিক বাজার মূল্য কমপক্ষে ছয় কোটি টাকা। মারুফুর কাস্টমস হাউজের প্রতি জেটির ‘এআরও’দের কাছ থেকে মাসোহারা নেন দুই লাখ টাকা। কোন ‘এআরও’ মাসোহারা দিতে অনিহা প্রকাশ করলে বদলী চাকুরিচ্যুত করার হুমকী দেন যুগ্ম-কমিশনার মারুফুর।

‘আরও’ নাজমুলের মাধ্যমে তিনি সকল অবৈধ ঘুষের লেনদেন করেন। কাস্টমস সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনের নামে প্রতি সপ্তাহে আদায় করেন ৫০ লাখ টাকা। যদিও মোয়াজ্জেম হোসেনের মত সৎ কর্মকর্তা ঘুষের এ টাকা গ্রহণ করেন না। তাই পুরোটাই নিজের পকেটে ভরেন।

একইভাবে কাস্টমসের বর্তমান কমিশনারের নামে তিনি আদায় করেন প্রতি সপ্তাহে ১ কোটি টাকা। যার পুরোটাই রেখে দেন মারুফুর। প্রতিটা ফাইল থেকে তিনি আদায় করেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। কেউ তা দিতে অপ্ররগতা প্রকাশ করলেই আটকে দেয়া হয় ফাইল। অবৈধ এ টাকা দিয়ে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার হোটেল রিজেন্সিতে একজন সহকারি কমিশনার এবং ‘এআরও’কে নিয়ে করেন নৈশপার্টি। ওই পার্টিতে অংশ নেন রেশমা, প্রীতি, রুনা খানের মত উঠতি কয়েকজন মডেল।

সম্প্রতি গুলশানের একটি ক্লাবে তাকে দেখা যায় বিদ্যা সিনহা মিম এবং মডেল পিয়াসার সাথে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হোটেল ও ফ্ল্যাটে নিয়মিত নৈশ পার্টির আয়োজন করেন মারুফুর। মদ ও নারীতে ভরপুর ওই সব পার্টিতে কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী লোকজন অংশ নেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- যুগ্ম-কমিশনার মো. মারুফুর রহমান পদ-পদবী ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছে। তার নেতৃত্ব দেয়া সিন্ডিকেটের কারণে আগে ঢাকা কাস্টমস হাউজ এবং বেনাপোল কাস্টমস হাউজ সরকার হাজার হাজার রাজস্ব হারিয়েছে। বর্তমান চট্টগ্রাম কাস্টমসে সে ধারা অব্যহত রয়েছে। অবৈধ আয় দেশে বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে।

আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- মারুফুর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে থাকার জন্য আইন উপদেষ্টাকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে তিনি নিজেই বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছেন। একথা বলে তিনি উর্ধ্বতন এবং অধস্তনদের সব সময়ে ভয়ের মধ্যে রাখেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *