বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হকের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা : ব্যবস্থা নেই প্রশাসনের !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর “দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের” (সিআরডিপি-২) প্রকল্প পরিচালক মো. হামিদুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ভয়াবহ অভিযোগ উঠলেও এখনো পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের দাপুটে এই নেতা আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে তোলপাড় এলজিইডি : এলজিইডির অভ্যন্তরে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এখন ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,


বিজ্ঞাপন

“হামিদুল হক বিগত সরকারের সময় দাপুটে আচরণ করে নিজের ও দলীয় স্বার্থে অঢেল ফায়দা লুটেছেন। এখনো বহাল তবিয়তে ক্ষমতার আসনে বসে আছেন। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়া হবে।”


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে মো. হেমায়েত উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি গোয়েন্দা সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রে হামিদুল হকের অনিয়ম, ঘুষ, দরপত্রে কারচুপি, স্বজনপ্রীতি, এবং পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্যের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

কমিশন বাণিজ্যই ছিল রুটিন কাজ’ : অভিযোগে বলা হয়েছে,
হামিদুল হক দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দরপত্র আহ্বান, ঠিকাদার নিয়োগ, এবং কাজ বণ্টনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের কমিশন আদায় করেছেন।
নিজস্ব বলয়ে “ঠিকাদার সিন্ডিকেট” তৈরি করে প্রকল্পের টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। অভিযোগকারী হেমায়েত উদ্দিন লিখেছেন, “সিআরডিপি-২ প্রকল্পের প্রতিটি ধাপ তদন্ত করলে হামিদুল হকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের সব প্রমাণ উঠে আসবে।”

আওয়ামী ছত্রছায়ায় সম্পদ সাম্রাজ্য : তদন্তে জানা গেছে, এলজিইডির এই প্রভাবশালী প্রকল্প পরিচালক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে ‘হামিদ ভিলা’ (বাড়ি নং ২১০/বি, রোড নং ৪) নামে এক বহুতল বাড়ির মালিক।

এছাড়া তাঁর স্ত্রী আরমানা ইসলামের নামে রয়েছে সলিমুল্লাহ রোডে (১১/১৬) আরেকটি দোতলা বাড়ি এবং শেখের টেক প্যারামাউন্ট হাউজিংয়ের ১০ নম্বর ভবনে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
এছাড়া পরিবারের নামে রয়েছে একাধিক প্রাইভেট কার, কোটি টাকার এফডিআর এবং গ্রামের বাড়িতে অঢেল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

অভিযোগ অনুযায়ী, এসব সম্পদ তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। হামিদুল হক ও তাঁর পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সম্পদের অনুসন্ধান চালানোর জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধও জানানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে।

দাপুটে পরিচয় : বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা , হামিদুল হক দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ এলজিইডি শাখার সদস্য (নম্বর ৩৬) ছিলেন। তিনি আওয়ামী সরকারের আমলে দাপুটে কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান এবং “বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির” ৭ নম্বর সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ঠতা ও নিয়মিত অর্থদানের সুবাদে তিনি প্রকল্প পরিচালকের পদটি বাগিয়ে নেন বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও অদম্য দাপট : রাজনৈতিক পালাবদলের পরও হামিদুল হক নিজের অবস্থান শক্ত রেখেছেন। এলজিইডির অভ্যন্তরে তাঁর প্রভাব এতটাই যে, এখনো তিনি দাপটের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগপত্রের সর্বশেষ অংশে বলা হয়েছে—“বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের এই নেতার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়টি তদন্তপূর্বক দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

মন্তব্য করতে রাজি নন’ হামিদুল হক : এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হামিদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি বা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া নিয়েও কোনোহ বক্তব্য দেননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

উপসংহার :   দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দলীয় প্রভাব বিস্তার করে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলা এলজিইডির এই প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখন টক অব দ্য ডিপার্টমেন্ট।
প্রশ্ন উঠেছে— প্রশাসন কি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে, নাকি আগের মতোই অদৃশ্য ছায়া তাঁকে রক্ষা করবে?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *