স্বপ্নপূরণের পথে বাংলাদেশ

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবাক বিস্ময়ে বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখছে। অনুকরণ করছে এদেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র। এখন মানুষ স্বপ্ন দেখে না। বাস্তবতার জয়গান গায়। শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। শুরুতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য তিনি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে এর আগে এতবড় কোন প্রকল্প শুরু করার অভিজ্ঞতা যেমন ছিলো না। ঠিক তেমনি ছিলো টাকার অভাব। এতটাকা আসবে কোত্থেকে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের জন্য অর্থ সহায়তা চান। নানান মারপ্যাচে আটকে দেয়া হয় সে প্রকল্প। কাজ শুরুর আগেই অভিযোগ তোলা হয় দুর্নীতির। দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ জাতিপিতার কন্যা কারো আর্থিক সহায়তার চিন্তা বাদ দেন। চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন তিনি। ঘোষণা দেন এই প্রকল্প কারো সহায়তা ছাড়াই তিনি সম্পাদন করবেন। করলেনও তাই। পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের দৃশ্যমান এক বাস্তবতা। ৭০ শতাংশ কাজ সমাপ্তির পর দেশের মানুষ এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন এই প্রকল্প সমাপ্তির জন্য। দেশের অর্থনীতি রাজনীতির সবচেয়ে বড় মাইলফলকটি কবে উম্মোচিত হবে সেদিকে। পদ্মাসেতু। আহা স্বপ্নের পদ্মাসেতু। শতাব্দীর বঞ্চনার অবসান ঘটানোর স্বপ্নপূরণের কাহিনী।
প্রধানমন্ত্রীর ১০ উদ্যোগ এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছে। সারা বিশ্বে মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে দেশ। বিভিন্ন সূচকে দেখা যাচ্ছে, দেশ অন্য কয়েকটি দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এবং সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের দিক থেকে ভারতসহ অগ্রসর ও বিকাশমান অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্প নিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় বার্তা সংস্থার (বাসস) ইনফোটেইনমেন্ট সার্ভিস এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের (আরডিসিডি) আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প শেখ হাসিনার ১০টি উদ্যোগ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতা শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ এখনো করোনা মুক্ত হয়নি, আবার বিশ্বে করোনায় নাস্তানাবুদ হয়েছে যে দেশগুলো সে তালিকাতেও বাংলাদেশ নাই। বরং করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমশ একটি দৃষ্টান্ত বা রোল মডেল রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। করোনার সঙ্গে বসবাস করে অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং গরিব মানুষকে প্রণোদনা দিয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে রাখার যে কৌশল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছিলেন, সেই কৌশল এখন প্রশংসিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। শেখ হাসিনার এই ম্যাজিক কৌশলের কারণেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
করোনা পরবর্তী বিশ্বে যে দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং যে দেশগুলো করোনায় বিপর্যস্ত হয়নি, সেই দেশগুলোর তালিকায় প্রথমদিকে থাকছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ৮ মার্চ।এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।
প্রথমত, তিনি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় দুই মাস বাংলাদেশ সাধারণ ছুটির মধ্যে ছিল। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সব ধরণের সভা, সমাবেশ এবং গণজমায়েত হতে পারে এ ধরণের সব কর্মসূচী বন্ধ রাখা হয়েছিল। হোটেল রেস্তোরাঁ সহ পর্যটন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যেটি করেছিলেন, সব মানুষের জন্য নানা রকম প্রণোদনা। গরীব মানুষদের যেমন আর্থিক, খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তেমনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে একেবারে বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তা পর্যন্ত নানা রকম আর্থিক ঋণ ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা যখন দেখতে পেলেন বাংলাদেশে করোনার মাত্রা সহনীয় এবং মৃত্যু হার কম। তখন তিনি করোনার সঙ্গে বসবাসের কৌশল গ্রহণ করেন, সেই কৌশলের সুফল আজ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
এই সময়ে যে সমস্ত বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিল এবং বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাদের সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আপাতত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ম্যাজিকের কারণে পাঁচটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ আছে। প্রতিদিন নতুন রোগী হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ সুস্থও হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুর হার ১.৩২ এর আশেপাশে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ সবকিছু বন্ধ না রেখে করোনার সঙ্গে বসবাসের যে নীতি ও কৌশল, সেই নীতি কৌশল অব্যাহত রেখেছে। একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনার সঙ্গে এই বসবাসের কৌশলের ফলে মানুষের মধ্যে যেমন আবার নতুন করে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তেমনিভাবে মানুষও এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে চাইছে।
করোনার প্রথম থেকেই শেখ হাসিনার লক্ষ্য ছিল করোনার কারণে অর্থনীতি যেন বিপর্যস্ত না হয়ে পড়ে। অর্থনীতি যেন সচল থাকে। এজন্য প্রথম দিন থেকেই অর্থনীতির বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যারা করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বিপুল অংকের টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। অর্থনৈতিক গতি আনতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যার সুফল এখন বাংলাদেশ পাচ্ছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
শেখ হাসিনার অন্যতম ম্যাজিক কৌশল ছিল কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়া। করোনার সময় যেন কৃষি উৎপাদন বন্ধ না থাকে- সেদিকে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে নজর দিয়েছিলেন। বোরো ধান উৎপাদনের সময় তার নির্দেশেই রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ এই করোনাকালীন সময় বোরো ধান কাটা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলো। বাংলাদেশে খাদ্য মজুত যা আছে, তা সন্তোষজনক। বাংলাদেশকে কোন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে না।
বাংলাদেশে রপ্তানি বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিতা এবং ম্যাজিক কৌশলের কারণেই করোনা সংকটের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা ও পরামর্শ উপেক্ষা করে গার্মেন্টসগুলো খুলে দেওয়া হয়। এখন দেখা যাচ্ছে গার্মেন্টসে সংক্রমণ হার অনেক কম। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প বিশ্ব বাজারে একটা ভালো প্রতিযোগিতার দিকে যাচ্ছে। করোনা সংকটের কারণে অভিবাসনে একটা ধ্বস নামতে পারে, শেখ হাসিনা এটা প্রথম থেকেই অনুমান করেছিলেন। সে কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনি নতুন বাজার অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। করোনা পরবর্তী বিশ্বে বাংলাদেশ অভিবাসন খাতে যেন পিছিয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে তিনি সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। গত দুই মাসে বাংলাদেশ রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে এক নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। আর সে কারণেই বাংলাদেশ করোনায় নাস্তানাবুদ হয়নি। বরং করোনাকে সঙ্গে নিয়েই অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি ওয়েবসাইট ও উন্নয়ন পরিকল্পনার নথিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদ-েই উন্নীত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন