গ্রেফতার ৬
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ই-কমার্সের নামে ২৬৮ কোটি টাকার প্রতারণায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- আলামিন প্রধান (এমডি ও সিইও), মোঃ জসীম, নির্বাহী অফিসার, মোঃ মানিক মিয়া, ম্যানেজার (হিসাব), মোঃ তানভীর আহম্মেদ, ম্যানেজার (প্রোডাক্টস), মোঃ পাভেল সরকার,সহকারী ম্যানেজার( প্রোডাক্টস) ও নাদিম মোঃ ইয়াসির উল্লাহ, অফিস সহকারী।
মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর, ২০২০) সকাল ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম-বার।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, SPC World Express Ltd নামে একটি কোম্পানি ই-কমার্সের নামে লাইসেন্সবিহীন পিরামিড আকৃতির অনলাইনভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পরিচালনা করে। সাধারণ মানুষকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর গত ২৬/১০/২০২০ তারিখ রাজধানির কলাবাগান থানাধীন এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে ডিবি (সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টীম অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযান থেকে ০৪ জনকে গ্রেফতার করে। এ সংক্রান্তে কলাবাগান থানায় মামলা রুজু হয়। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে তাদের দেয়া তথ্যমতে, গত ০২/১১/২০২০ তারিখ মোহাম্মদপুর এলাকা হতে মূলহোতা আলামিন প্রধান ও মোঃ জসীমকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে, ১ টি হ্যারিয়ার গাড়ী, ২টি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ৬টি ল্যাপটপ, ২টি রাউটার, ২টি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও কোম্পানির সার্ভারের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, SPC World Express Ltd নামের এই কোম্পানি ১লা জানুয়ারি ২০২০ ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান একসময় ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এ সক্রিয় ছিল। ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক প্রতারনা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ডিএমডি, ডিরেক্টর, অফিসার সম্মিলিতভাবে মাত্র ১০ মাস সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুজি করে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে মোট ২২,২৬,৬৬৮ ( বাইশ লক্ষ ছাব্বিশ হাজার ছয়শত আটষট্টি ) মেম্বার আইডি থেকে প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন App ভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭ টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় ৫ লাখ মেম্বার রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, কোম্পানির এমডি আলামিন প্রধান ও কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি গাড়ী, বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ০৮ টি একাউন্ট রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।
এলএমএম কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, তারা মূলত কোম্পানির Website (http://main.spcworldexpress.com), Facebook Page ও Youtube শত শত পোস্ট এর মাধ্যমে ই কমার্সের কথা বলে সাধারণ জনগণকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীদের Playstore বা ইন্টারনেট SPC World Express Ltd. থেকে নামে একটি মোবাইল App ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রশন করতে হয়। রেজিঃ করার সময় বাধ্যতামূলক পূর্ববর্তী রেজিঃকৃত আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে কোম্পানি প্রদত্ত Bkash, Nagad, Rocket নাম্বারে এ্যাকাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২০০ টাকা প্রদান করতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরণের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) এর ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।
পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন সম্পর্কে সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মীর মোদাছ্ছের হোসেন জানান, যে রেফার করে সে তার নিচের ০৩ টি আইডি থেকে ৪০০ টাকা করে কমিশন লাভ করবে। তারপর ঐ ০৩ আইডি থেকে যখন ৩x৩=৯ আইডি হবে তখন আপলিংকের আইডি ২০% কমিশন পাবে। তারপর তার ডাউনলিংকে যত আইডি হবে আপার আইডি ১০% হারে কমিশন পাবে। যা মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরণের ব্যবসা বাংলাদেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই অবৈধ ব্যবসা করে তারা যাতে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত না করতে পারে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এমএলএম ব্যবসা আড়াল করার কৌশল সম্পর্কে সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান ডিএমপি নিউজকে জানান, কোম্পানিটি নামে মাত্র কয়েকটি পন্য (এলোভেরা শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুড়া ইত্যাদি) শুধুমাত্র তাদের রেজিস্টার্ড মেম্বারদের কাছে বিক্রি করে থাকে এবং তার লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। গ্রেফতারকৃতরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করায় যে তারা ই-কমার্স করছে ।