সুমন হোসেন, অভয়নগর : অভয়নগরের চলিশিয়া ইউনিয়নে জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) পুরাতন কার্ড নিয়ে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ৩দিন ব্যাপি সকাল থকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। বিগত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৩দিনে ইউনিয়নের ১২হাজার সাধারন মানুষের হাতে বিনামূল্যে এই স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সারাদেশের ন্যায় বিনামূল্যে জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) কার্ড সংগ্রহ করে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ প্রজেক্টের মাধ্যমে একটি টিমের ২৮জন অপারেটর, ২জন আনসার সদস্য ও ২জন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা মাঠে উপস্থিত থেকে এই স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুরাতন কার্ড গুলো সংগ্রহ করে, নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র স্মার্ট কার্ড ইউনিয়নের সাধারন মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক একজন অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গায় মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হয় নি। যার ফলে অনেকে বিষয়টি সর্ম্পকে জানেন না। পুরাতন এনআইডি কার্ড না থাকলে পাশ্বের টেবিলে বসা ২জন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সরকারি ফি- ৩শ’ টাকা, ভ্যাট- ৪৫টাকা ও সার্ভিস চার্জ বাবদ- ১৫টাকা। মোট ৩শ’ ৬০টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের জানা নেই এই টাকা কোথায় যাচ্ছে। একটি নতুন স্মার্ট কার্ড হাতে দিলে কয়েকজন বহিরাগত এসে আবার তাকে ঘিরে ধরছে, তাদের কাছ থেকে লেমিনেটিং করার জন্যে। লেমিনেটিং ফি প্রতি টি কার্ডের জন্যে ২০টাকা। অনেকে লেমিনেটিং না করতে চাইলে, তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও শোনা যায়।
৯নং ওয়ার্ডের নতুন ভোটার ইজিভ্যানচালক আলামিন বিশ্বাস বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থানে মাইকের মাধ্যমে কোনো প্রচার করা হয় নি। লোকের মুখে শুনে নতুন স্মার্ট কার্ড নিতে ইউনিয়নে এসেছি। সকাল থেকে রোদে লাইনে দাড়িয়ে ৫ঘন্টা পর এখন বলছে ২০১৯ সালের ভোটারদের কার্ড আসে নি। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। দিন মজুর মানুষ আমরা, খেয়ে না খেয়ে পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে সংসার চালাই। বিষয়টি মাইকের মাধ্যমে প্রচার করলে আমার পরিবারের এমন ক্ষতি হতো না।
৭নং ওয়ার্ডের ভোটার দলিল লেখক মোঃ মুজিবর রহমান বলেন, পুরাতন এনআইডি কার্ড জমা দিয়ে নতুন স্মার্ট কার্ড পেয়েছি। আমার খুব ভালো লাগছে। কার্ড হাতে পওয়ার পর কয়েকজন এসে বললো, দেন ২০টাকায় লেমিনেটিং করে দিবো। তাকে বলেছি পরে লেমিনেটিং করবো।
স্মার্ট কার্ড বিতরণ প্রজেক্টের টিম ম্যানেজার মোঃ মোতাহার উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড বিতরণ প্রজেক্টের আওতাধীন আমি সহ ২৮জন লোক দ্বারা গঠিত মাঠ পর্যায়ে একটি টিম বিতরণ কার্যক্রম করছে। আমি ম্যানেজার, ১৫জন কম্পিউটার অপারেটর, ১২জন টিম সহকারীসহ মোট ২৮ জন সদস্য প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ করছি। ৩টি ধাপে একজন সাধারন মানুষের হাতে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ১ম ধাপ- যাচাই ধাপে একজন অপারেটর পুরাতন এনআইডি কার্ড নিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী টোকেন লাগাবে, ২য় ধাপে- গ্রাহককে বায়োমেট্রিক ও আইরিস দিতে হবে এবং ৩য় ধাপে- পুরাতন নিয়ে গ্রাহককে নতুন স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। ২০১৯ সালের যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তাদেরকে নিদের্শনা অনুযায়ী স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে পরে।
স্মার্ট কার্ড বিতরণের দায়িক্তে থাকা মো. তহিদুর রহমান বলেন, বিনামূল্যে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যাদের পুরানো এনআইডি কার্ড হারিয়ে ফেলেছে, তাদেরকে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে নতুন স্মার্ট কার্ড নিতে হচ্ছে।
চলিশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাদির হোসেন মোল্যা বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদে থেকে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছি। সব সময় মনিটরিং করছি। ইউনিয়নের সাধারন মানুষ নতুন স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে অত্যন্ত খুশি। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
উপজেলা নির্বাচন কমিশনার এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের মহতী উদ্দ্যেগে পুরাতন জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) কার্ড সংগ্রহ করে বিনামূল্যে সাধারন মানুষের হাতে নতুন স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়া হচ্ছে। ৩দিনে চলিশিয়া ইউনিয়নে প্রতি দিনে ৪হাজার করে, মোট ১২হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। স্মার্ট কার্ড বিতরণের বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সকল চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যেমে কয়েকদিন আগে মিটিং করে বলেছি। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তারপরও যারা কার্ড সংগ্রহ করা থেকে বাদ পড়ে যাবে, তাদেরকে পুনরায় নির্বাচন অফিস থেকে দেওয়া হবে। জানতে চাইলে ৩শ’ ৬০টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এই টাকা সরকারি ফি হিসেবে জমা দিতে হবে। আমাদের কিছু করার নেই।