মুগ্ধ খন্দকার : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা আমাদের দেশকে মনে করলেও যার বেশ কিছু প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি হলো বেকারত্ব। চলুন আজকে একটু দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কলকবজা নড়াচড়া করে দেখি, চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজ করতেই বেশ সংগ্রাম করে যাচ্ছে পাস করে বের হওয়া টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার শিক্ষার্থীরা। আমাদের দেশে চাকরির চাহিদা যত বেশি এরজন্য কোনো সঠিক যোগান নাই বললেই চলে। কে না চায় একটা সরকারি চাকুরী?ফ্রিলান্সিং করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বড় কথা নয় তবে কথা হচ্ছে সরকারি চাকুরীজীবি জামাই ও ফ্রিলান্সার জামাইয়ের রাত দিন তফাৎ। চাকরি দিতে না পারলেও অন্ততত পক্ষে নিজে সাবলম্বী হওয়ার যে পথটি করে দিচ্ছেন ফ্রিলান্সিং সেটি একটু মর্যাদাপূর্ণ করে তুলুন। একটা চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়লে দেখা যায় চাকরি প্রার্থীদের উপচে পড়া ভীড়, কম্পিউটার এর দোকান গুলোতে সিরিয়াল পাওয়াও হয়ে যায় বেশ কঠিন। ২০১৭ সালের এক জরীপের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রায় ২৭ লাখ মানুষ চাকরির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশে। যার অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত ।
বর্তমানে সঠিক সংখ্যাটাও নির্ণয় করা বেশ কঠিন।আর এর মধ্যেই যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ এর ছোবল আর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই মহামারীর শুরুর দিক থেকে নিয়মিতভাবে চাকরি হারাচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষিত চাকরিজীবীরা। আবার দেখা গেছে দেশের নাম করা বিভিন্ন কোম্পানি গুলোও কর্মী ছাঁটাইয়ের মত কঠিন সিন্ধান্ত নিয়েছে এবং এখনো নিয়ে চলেছেন। ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরাও মহামারীর কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনুদান এর অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি যেখানে টিউশনি,ফ্রিলান্সিং ইত্যাদি করে নিজ খরচ সহ পরিবারকে ছোট্ট করে সাহায্য করত, তাদেরও এই প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে বিশাল সংকটে দেখা যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বোঝা যায় দেশের বেকারত্ব এর হার নিশ্চয়ই কমে নাই বরং বেড়ে যাওয়ার কথা। বিবিএস এর এক তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের এপ্রিল-জুলাই সময়ে দেশে বেকারত্ব হার প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গেছে । আমরা আগে পড়েছি পানির অপর নাম জীবন তবে এখন এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাড়াচ্ছি যেনো একটা চাকুরির অপর নাম জীবন। কারন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে বেকার দিনযাপন না করতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে অনেকেই। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর উচ্চ শিক্ষা শেষ করছে আর অংশ গ্রহণ করছে চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতায়।
আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায়, আমরা আমাদের শিশুদের /আমরা নিজেই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তিই হই ৬/৭ বছর বয়সে। মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করতে করতে জীবনের ১৬ থেকে ১৭ বছর গত করে ফেলি। তারপর ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এরপর ১৯ থেকে ২০ বছরের দিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হই, যেখান থেকে বের হতেই লাগে কমপক্ষে পাঁচ/ছয় কিংবা সাত বছরও লাগতে পারে একজন প্রথম সারির শিক্ষার্থীর ও লাস্ট ব্রেঞ্চ বসা অমনোযোগী ছেলের হিসেব অনুযায়ী।। আবার দেশের উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের আশীর্বাদপুস্ট সেশনজট। কোন কারণ ছাড়াই কেড়ে নেয় এক/দুই আবার কখনো তিন বছর। আর এই কারনেই একজন শিক্ষার্থীর চাকরির বাজারে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতে করতে জীবনের ২৫ থেকে ২৭টি বছর গত হয়ে যায়৷ আবার এই কোভিড ১৯ এর কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সেশন জটের কবলে পড়ে একটা বছর অলরেডি হারিয়ে ফেলছে। আবার আমাদের দেশের চাকরির বাজারে আবেদনেরও একটা সময়সীমা বিদ্যমান যা ৩০ বছর আবার কিছু ক্ষেত্র বিশেষ ৩২ করা হয়েছে। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা শেষে আপনার জীবনটা নির্ধারণ হয় সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ বছরের চাকরির যুদ্ধে।
ধরলাম সব ঠিক আছে এবার আসুন আরেকটু গভীরভাবে ভাবি একজন সম্মান শেষ করা শিক্ষার্থী চাকরির আবেদন করার জন্য চাকরি নিয়োগ খুজছেন তখনই দেখলেন আবেদনের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ৪/৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে কিংবা উক্ত পদের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে আবার কখনো লেখা হয়ে থাকে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে। সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা করে দেখুন তো, যেখানে উচ্চ শিক্ষা শেষ করতেই আপনাকে আমাকে ২৫ থেকে ২৭ বছর পার করে দিতে হচ্ছে সেখানে চাকরি আবেদনের বয়সসীমা আবার ৩০, সেখানে দুই, তিন, চার বছরের অভিজ্ঞতা খোঁজা কতটা যৌক্তিক হতে পারে? অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই প্রয়োজন, চাকরির হয়ে গেলে ২৫% বেতন দিয়ে ১ বছরের ট্রেনিং এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় না কি? এভাবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার রিকোয়ারমেন্ট, সেশন জট শিক্ষার্থীদের উপর জুলুম ছাড়া আর কিছু মনে করি না৷