নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার অলিগলিতে চলছে সাকরাইন উৎসবের প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) শুরু হবে সাকরাইন উৎসব। সাকরাইনকে ঘিরে বেড়েছে ঘুড়ি বেচাকেনার ধুম। তরুণ-তরুণীরা ছুটছেন ঘুড়ি-নাটাই, সুতার টানে।
শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি কিনতে এসেছেন গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা তপন কুমার ও তার বন্ধু। তারা বলেন, ‘সাকরাইন আমাদের অতি আনন্দের একটি উৎসব। পুরান ঢাকার উৎসবগুলোর মধ্যে আমরা তরুণরা এই উৎসব বেশি উপভোগ করি। এবার করোনার কারণে পরিবার থেকে নিষেধ করা রয়েছে। তাই সীমিত পরিসরে বন্ধুরা মিলে বাসার ছাদে ঘুড়ি উড়াবো।’
তারা জানান, ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি তারা পৌষ সংক্রান্তির পিঠা উৎসব করে থাকেন।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, লক্ষীবাজার, গেন্ডারিয়া এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঘুড়ি-নাটাইয়ের দোকানিরা। সাকরাইন উপলক্ষে তারা বাজারে এনেছেন রঙ-বেরঙের ঘুড়ি।
শাঁখারীবাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে চিলঘুড়ি, বাদুড়ঘুড়ি, ময়ূর, চানঁতারা, পাঞ্জাব, চোখদার, পানদার, কথাদার, মালাদার, পঙ্খিরাজ, চলনদার, পেটিদার, পাংদার, প্রজাপতি, দাপস, বাদুড়, চিলসহ বিভিন্ন নকশা ও আকৃতির ঘুড়ি সাজানো রয়েছে।
আকার ও দাম ভেদে বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি রয়েছে। সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা দামের ঘুড়ি আছে। এ ছাড়া বাদুড়ঘুড়ি ও বড় চিলঘুড়ির দাম ২০০ টাকা এবং ছোট চিলঘুড়ির দাম ১০০ টাকা।
ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের সুতা। যেমন- ক্যাঙারু, বিচ্ছু, ড্রাগনসুতা ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য খুবই ভালো। সুতা গজ হিসেবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। মান অনুযায়ী ৬০০ গজ সুতা ৭০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বিভিন্ন আকারের নাটাই রয়েছে। নাটাই সাধারণত দুই ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। বাঁশের নাটাই দিয়ে তৈরি করা একটি নাটাইয়ের সর্বনিম্ন দাম ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ দাম ৭০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এছাড়া রুপার ও লোহার তৈরি নাটাই পাওয়া যায়। সেগুলোর দাম আকার ভেদে ৩০০ টাকার উপরে হয়।
শঙ্খশ্রী দোকানের স্বত্বাধিকারী রিপন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এবার অ্যান্য বছরের তুলনায় ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। অর্ডার কমে গেছে, তারপরও মোটামুটি চলছে। আমরা বছরজুড়েই ঘুড়ি-নাটাইয়ের ব্যবসা করি। সাকরাইন উপলক্ষে একটা অন্যরকম আমেজ সৃষ্টি হয় ব্যবসায়। আমাদের মূল ক্রেতা তরুণ-তরুণীরা। তবে এবার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পরিবার থেকে বাচ্চাদের হাতে সেভাবে টাকা দেয়া হচ্ছে না।’
শাঁখারীবাজারের ব্যবসায়ী বিষ্ণু সেন বলেন, ‘প্রতি বছর সাকরাইন উপলক্ষে ঘুড়ি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়। ঘুড়ি বিক্রির সময় ছেলে-মেয়েদের আনন্দ আমাদেরকে শৈশবে নিয়ে যায়। আমি অপেক্ষাকৃত কম দামে ঘুড়ি বিক্রি করে দেই।’
বৃহস্পতিবার শুরু হবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন বা পৌষ সংক্রান্তি। মহাভারতে যেটাকে মকরক্রান্তি বলা হয়ে থাকে। এখন পুরান ঢাকা ছাড়াও ঢাকার অ্যনান্য এলাকায় এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাকরাইন পালন করে থাকলেও এখন বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে সব ধর্মের মানুষ এটি পালন করে থাকেন।’