নিজস্ব প্রতিবেদক : অভিজাত এলাকা গুলশানের নামকরা শপিং সেন্টার পিংক সিটি। ন্যায্যমূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য কিনতে ঈদের আগে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে দিন থেকে রাত অবধি। এই সুযোগে পিংক সিটির কিছু ব্যবসায়ী দেশি পণ্যকে বেশি দামে বিদেশি স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করে আসছিল। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ে জরিমানা গুণতে হলো অসাধু এই ব্যবসায়ীদের। ঢাকার জিঞ্জিরা ও চকবাজার থেকে বাচ্চাদের খেলনা কিনে চায়নার তৈরি বলে স্টিকার লাগিয়ে বিক্রির দায়ে জরিমানা করা হয়েছে কয়েকটি দোকানকে।
রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযানে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। পিংক সিটির ২৫ প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
স্বর্ণ, শাড়ি ও কসমেটিকসের দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সদস্যরা।অভিযান সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, যেসব দোকান বিদেশি শাড়ি বা কসমেটিকস বলে পণ্য বিক্রি করছিল তারা কোনো আমদানি করা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। খেলনার দোকানদার মেড ইন চায়না বলে স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করলেও দোকানদার স্বীকার করেছে এসব তারা চকবাজার, জিঞ্জিরা থেকে কিনে বিক্রি করছেন। এজন্য জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা বিভাগের কার্যালয় সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান এবং সহকারী পরিচালক আতিয়া সুলতানা।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘গুলশানের পিংক সিটি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান; এখানে বেশিরভাগ বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিক্স ও খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশি বলে বিক্রি করছে। কিন্তু আমদানিকারকের কোনো স্টিকার নেই। তথ্যও দিতে পারছে না।’
তিনি বলেন, এটি আসলে বিদেশি নাকি দেশি নকল পণ্য। যদি বিদেশি হয়েও থাকে তাহলে অবৈধ পন্থায় ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে এনেছে। বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স বিক্রি করছে, যার আমদানিকারকের স্টিকার নেই ও বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। এটি আসলে বিদেশি নাকি নকল পণ্য এটিও নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই।
‘এখানে যেসব খেলনা বিদেশি বলে বিক্রি করছে তার বেশিরভাগই এনেছে চকবাজার ও জিঞ্জিরা থেকে, যা তারা বিদেশি বলে ইচ্ছামতো মূল্য লিখে বিক্রি করছে। এতে ভোক্তারা ঠকছে, যা আইন অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। এ অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় ২৫ প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
কোন প্রতিষ্ঠানকে কত জরিমানা
জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেলিব্রেশনকে ৫০ হাজার টাকা, জেমস গ্যালারিকে ৫০ হাজার, পরী শাড়িকে ১০ হাজার, ভিবা বাড়িকে ১০ হাজার, সাবরিনাকে ১০ হাজার, স্রোতধারাকে ১০ হাজার, মানা বিকে ১০ হাজার, নিডেন ওয়ার্ককে ১০ হাজার ও কুন্দনকে ১০ হাজার। রেইনবো পারফিউম অ্যান্ড কসমেটিক্সকে ১০ হাজার, ডানহিল অপটিক্সকে ১০ হাজার, কিডস ওয়েকে ১০ হাজার, হীরা ফেব্রিক্সকে ৫ হাজার, গোল্ডেন ওয়াল্ডকে ১০ হাজার, অঞ্জলি জুয়েলার্সকে ১০ হাজার, সাবিহা ফ্যাশন ১০ হাজার, ভিভো ১০ হাজার, সিমরান ডিজাইনারকে ৫ হাজার, গয়না ঘরকে ৫ হাজার, স্টাইল ওয়ার্ল্ডকে ২০ হাজার, আব্রুজ ৫ হাজার, পরিণীতা গোল্ডকে ১০ হাজার, কিওর জুয়েলার্স ১০ হাজার, বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার, শোভা ফেব্রিক্সকে ১০ হাজার ডালিমসকে ১০ হাজার টাকাসহ ২৫ প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরনের অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী তাদের দ্বিগুণ জরিমানাসহ সিলগালা করে দেয়া হবে বলে জানান তারা।
বাজার অভিযানের সার্বিক সহযোগিতা করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)- ১১ এর সদস্যরা।