বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সিট ফাঁকার অন্তরালে ! 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী শিক্ষাঙ্গন স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  বাংলাদেশে বর্তমাতে চালু রয়েছে ৬৭ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। এর মাঝে ছেলেদের জন্য রয়েছে ৬১ টি মেডিকেল কলেজ ও মেয়েদের জন্য ৬৭ টি। এসব মেডিকেল কলেজের সিট সংখ্যায় রয়েছে বিশাল তারতম্য। সর্বনিম্ন ৫০ টি ও সবোর্চ্চ ১৫৫ সিট রয়েছে মেডিকেল কলেজ গুলোতে। ৬৭ টি মেডিকেল কলেজের সর্বমোট আসন সংখ্যা ৬২৯৩।


বিজ্ঞাপন

এবছর ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদনকারীগণকে মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর নির্বাচিত করেছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য। মনোনীত প্রার্থীগণকে নিশ্চিত করার আবশ্যকতা ছিল যে তিনি যে কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সেই কলেজে এবং পরবর্তীতে মাইগ্রেশনের সময় তার অধিকতর পছন্দের কলেজের জন্য নির্বাচিত হলে সেই কলেজে ভর্তি হলে সম্মত আছেন। প্রথমবার নিশ্চায়নের জন্য নির্ধারিত তারিখ শেষে শূন্য থাকা আসন সমূহে দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দের নিশ্চিতকরণের সময়সীমার পরে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় মনোনয়ন প্রাপ্ত নিশ্চায়নকারী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীগণ সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি প্রদান করে নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যথেষ্ট ভর্তিচ্ছু থাকা স্বত্ত্বেও সর্বমোট ৪৬৭ টি সিট ফাঁকা রয়েছে। এতগুলো সিট ফাঁকা থাকার ফলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে শিক্ষার্থীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরনে। জাতি বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমান ডাক্তারের সেবা থেকে। আর যেহেতু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহ শিক্ষার্থীদের ফিসের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। তাদের জন্য এটি ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতি, যা গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে অন্তরায় হতে পারে।


বিজ্ঞাপন

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহের একটি দাবি ছিল যেহেতু ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী যথেষ্ট ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্তী রয়েছে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় নিশ্চায়নের পরেও ভর্তির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেবেন। এটি সংশ্লিষ্ট মহলে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য পুনরায় অনলাইন পোর্টাল উন্মুক্তকরণ নামে পরিচিত। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য পুনরায় অনলাইন পোর্টাল উন্মুক্তকরণের বিবেচনার বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

পোর্টাল উন্মুক্তকরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পোর্টাল উন্মুক্তকরণের ব্যাপারে যথেষ্ট নমনীয় ও সহনশীল ছিলেন এবং এ ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রাইভট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পার্টাল উন্মুক্তকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে ঘুষ দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করে চাঁদা আদায় শুরু করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাজধানীর উপকণ্ঠের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিক জানিয়েছেন, এসোসিয়েশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এক কোটি টাকা সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন। চাঁদাবাজীর এই তথ্য সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছালে তারা পোর্টাল উন্মুক্ত করতে রাজি হন নি।

সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পোর্টাল উন্মুক্ত করলে চাঁদাবাজীর অংশীদারের দুর্নামের ভাগীদার হবার শংকা থেকেই তারা পোর্টাল উন্মুক্ত করতে রাজি হন নি। এসোসিয়েশনের নেত্রবৃন্দ চাঁদাবাজি করে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ প্রদানের অভিযোগ বেশ পুরানো। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন কিংবা সিট বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা আহরন করে কিছু পরিমানে ক্ষমতাশীলদের দিয়ে বাদবাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঘুষের সুবিধা নিজেরা গ্রহণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপিএমসিএ’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের মালিকানাধীন ২০০০ সালে স্থাপিত ইষ্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, ঢাকার সিট সংখ্যা ১২৭ টি। বর্তমান সভাপতি এম এ মুবিন খানের মালিকানাধীন ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর এর সিট সংখ্যা ১৩০ টি। বর্তমান অর্থ সম্পাদক মো. হাবিবুল হকের মালিকানাধীন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত তায়রুন নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের সিট সংখ্যা ১০৫ টি। অথচ ১৯৯৮ সালে স্থাপিত গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সিট সংখ্যা ৫০ টি, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব এপ্লাইড হেলথ সায়েন্স, চট্টগ্রামের সিট সংখ্যা ৮০ আর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার মেডিকেল কলেজ ফর ইউমেন্স এর সিট সংখ্যা ৯৫ টি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *