সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রহিমা খাতুন (৩০) নামের আর এক নারীযাত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ছাতক উপজেলার বাউয়ালী গ্রামের মফিজ আলীর মেয়ে।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা চলাকালে তিনি মারা যান। এনিয়ে ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আটজনে।
নিহতদের মধ্যে এনা পরিবহনের ও লন্ডন এক্সপ্রেস নামের দুই চালক, এনার সুপারভাইজার ও হেলপার রয়েছেন। এছাড়া ওই ঘটনায় আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান (৩৩) নামের একজন চিকিৎসকও মারা গেছেন। তিনি তার চিকিৎসক স্ত্রী শারমিন আক্তার অন্তরাকে নিয়ে বিশেষ বিসিএসের (স্বাস্থ্য) পরীক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুর নামক স্থানে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের বাস ও সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন।
এতথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের।
তিনি বলেন, বাস দুটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৩৬ জন আর চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার ছিলেন ৬। এরমধ্যে এনা বাসে ৮ জন যাত্রী এবং চালক, সুপারভাইজার হেলপারসহ মোট আরোহী ছিলে ১১ জন। লন্ডন এক্সপ্রেস বাসে যাত্রী ছিলেন ২৮ জন এবং চালক সুপারভাইজার ও হেলপারসহ আরোহী ছিলেন ৩১ জন।
এ ঘটনায় অপর নিহতরা হলেন-সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান (৩৩), এনা পরিবহনের বাসের চালক ওসমানীনগর উপজেলার ধরখা গ্রামের মঞ্জুর আলী (৩৮), এনার সুপারভাইজার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামের সালমান খান (২৫), হেলপার ধরখা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪), লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দি পশ্চিম পাড়ার রুহুল আমিন (৫০), ঢাকার ওয়ারি এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্র নাদিম আহমদ সাগর (১৯) ও সিলেট নগরের আখালিয়া নায়াবাজার এলাকা শাহ কামাল (৪৫)।
গুরুতর আহতরা হলেন-ডা. শারমিন আক্তার অন্তরা (২৯), শেখ মো. রুহেল আহমদ (৩০), মো. শাহ নেওয়াজ, নিহত সাগরের বড়ভাই ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ওয়ারি এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসান (৩৫), তার ভাই জাহেদ ইসলাম (৩৩), আইয়ান হাসান, বোন সুর্বনা পারভিন (৩০), সীমা পারভিন (২৮), শান্তা (২৫), সেলিনা পারভিন (৩২), তাদের মা চান বিবি, তার নাতি মাহি, নগরের দর্শনদেওরি এলাকার কামরুজ্জামান (৩২), রেজাউল করিম (৪৫), শামীম আহমদ (২৪), জসিম উদ্দিন (৩০), মো. আলা উদ্দিন (৬০), এসএ সালাম (৩৫)।
লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রী জসিম আহমদ জানান, ঢাকা থেকে আসার পথে বারবার বাসের চালক ওভারটেক করছিলেন। তাকে কয়েকবার সর্তকও করা হয়। কিন্তু কথা শোনেননি। তিনি বাসটি খুব দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন বলে জানান জসিম।
সুমন নামে আরেক যাত্রী জানান, লন্ডন এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসে ২৮-৩০ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের সবাই আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন।
ফায়ার সার্ভিস সিলেটের (উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কোবাদ আলী সরকার বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আমরা এসে ১০ জনকে উদ্ধার করেছি। এরমধ্যে সাতজনের মরদেহ রয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন হতাহতকে এর আগেই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’