নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, গতকালও (রোববার) আমরা দেখলাম প্রেসক্লাবের সামনে একা একজন পুলিশকে পেয়ে কীভাবে পেটানো শুরু হয়েছিল। তা সবাই দেখেছেন। সেখানে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
সোমবার ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’ উপলক্ষে মিরপুর-১৪ পুলিশ স্টাফ কলেজের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ কোনোদিন প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢোকে না এবং এদিন যেভাবে ইটপাটকেল ছুড়ছিলো সে সময় সে সময় দু-একজন হয়তো ঢুকেছে। কিন্তু যেভাবে ইট-পাটকেল ও মারামারির সৃষ্টি হয়েছিলো সেখানে উচিত ছিলো মারামারি না করা। চরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে পুলিশ।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে ও উন্নয়ন নিরাপত্তা স্থিতিশীল রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ বাহিনী শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে না, জঙ্গি নির্মূলে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গি উত্থানের সময় পুলিশকে আহত করা হয়, সে চিত্রও আমরা রাজশাহীতে এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দেখেছি। গতকালও আমরা দেখলাম প্রেসক্লাবে।
মন্ত্রী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য মারা যাচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। ২০২০ সালে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদের ৪৫৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে ২০৮ জন কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি নিহত ও মৃত্যুবরণকারী শোক সন্তপ্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি শোক-সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যরা আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগে দায়িত্ব পালনের যে অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন, সেজন্য পুলিশ বাহিনীসহ সারাদেশবাসী গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ বাহিনী তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অগ্রযাত্রায় প্রথম দরকার আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেটা পুলিশ সঠিকভাবেই করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধান যে কাজটি দরকার সেটা আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশ কিন্তু সেটা সঠিকভাবে করে যাচ্ছে। সেই কাজটি যদি মুখ থুবড়ে পড়ে তবে মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা। পুলিশ শুধু আজ নয়, সব সময় পুলিশ তাদের অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, করোনায় যখন আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম, যখন আমাদের কাছে করোনার কোনো প্রতিষেধক ছিল না, করোনায় মৃত্যুবরণকারী মায়ের ডেড বডি হাসপাতাল থেকে সন্তান যখন নিতে আসছিল না, তখন পুলিশ সেই মায়ের ডেড বডি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছে। করোনায় দুস্থ অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সর্বদা পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের পরিবারের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রত্যেক পরিবারকে এককালীন আট লাখ টাকা করে দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় স্থায়ী অক্ষম ও অবসরে গেলে চার লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপি, শিবির, হেফাজত ও দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৮ জন সদস্যের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে আজীবন রেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, জীবন মৃত্যুতে কারও হাত নেই। তবে চেষ্টা থাকবে কারও যেন অকালে বা অকারণে মৃত্যু না হয়। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য জীবন দেওয়া গৌরবময় বিষয়।
সচিব বলেন, নতুন নতুন অপরাধ যুক্ত হচ্ছে। অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন যেকোনো ধরনের সংকট মোকাবিলায় সক্ষম। পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, যেকোনো বিষয়ে মানুষ বিচার প্রত্যাশা করলে প্রথম আশ্রয়স্থল পুলিশ। গণমানুষের সবচেয়ে কাছের পুলিশ। সেজন্য আমরা বলি, পুলিশ হবে মানবিক, পুলিশ হবে জনতার। আমরা কেউ এখন ঔপনিবেশিক পুলিশ না, স্বাধীন দেশের মানবিক পুলিশ। বিভিন্ন সংকটে অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ। করোনায় পুলিশ বাহিনী কি না করেছে। প্রত্যেক জেলায় করোনা মোকাবিলায় পুলিশের সমন্বয়ের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, যা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ এ করোনায় যা করেছে, তা অন্য অনেক দেশ পারেনি।
সচিব আরো বলেন, যেকোনো সময় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আমাদের সবাইকে দেশ ও মানুষের জন্য সহানুভূতিশীল হতে হবে। শুধু চাকরি করি এ মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। উন্নত বাংলাদেশের প্রথম কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। সেটা পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।