করোনায় থেমে নেই উন্নয়ন

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

২৩ এপ্রিল মেট্রো ট্রেন সেট উত্তরা ডিপোতে পৌঁছবে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনায় সারাদেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। যদিও এই লকডাউনে দেশের অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দি। বন্ধ স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবুও থেমে নেই সরকারের উন্নয়ন কাজ। এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেল লাইন নির্মান কাজ।
জানা গেছে, রাজধানীতে পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এগুলোর কাজের গড় অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। শুরু থেকে প্রকল্পগুলোর অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, মেট্রোরেল-লাইন-৬ প্রকল্পটি। অন্যগুলো হলো- মেট্রোরেল লাইন-১ এবং মেট্রোলের লাইন-১ (ই/এস), মেট্রোরেল লাইন-৫ এর নর্দান রুট এবং সাউদার্ন রুট।
সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, এটি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। প্রত্যেক মাসে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয় ফাস্টট্র্যাক মনিটরিং টাস্কফোর্সের কাছে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চলমান করোনা মহামারির মধ্যেও প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা আছে।
ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ। এটি তৈরি হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০১২ সালের জুলাই হতে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কাজ শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ অর্থবছরের ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩০৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫৯১ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ২৯৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মেট্রোরেল লাইন-১ এর (ই/এস) অংশ বাস্তবায়নের ব্যয় হচ্ছে ৬০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২১০ কোটি টাকা। গত ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেট্রোরেল লাইন-৫ এর নর্দান রুট হেয়ামেতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৯ হতে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এ সময় পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০০ কোটি টাকা। গত ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ৯৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এদিকে, মেট্রোরেল রুট-৫ এর দক্ষিণ অংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা ও দরপত্র সহায়তার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে মেট্রোরেল রুট-৫ এর দক্ষিণাংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই, বিস্তারিত নকশা প্রণয়নসহ দরপত্র সহায়তার ফ্রান্সের ইজিআইএস রেলের সঙ্গে এই চুক্তি হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রায় ২৮৬ কোটি টাকার চুক্তিপত্রে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইজিআইএস রেলের প্রতিনিধি প্যাসকেল লিগনার্স স্বাক্ষর করেন।
মন্ত্রী বলেন, উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে গাবতলী হতে শুরু হয়ে টেকনিক্যাল-কল্যাণপুর-শ্যামলী-আসাদগেট-রাসেল স্কয়ার-কারওয়ান বাজার-হাতিরঝিল পশ্চিম-তেজগাঁও-নিকেতন-আফতাবনগর-দাশেরকান্দি হয়ে বালিরপাড় পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট-৫ এর দক্ষিণ অংশটি হবে প্রায় সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। যার প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড এবং প্রায় ১৩ কিলোমিটার হবে পাতালে। এছাড়া ১৬টি স্টেশনের ১২টিই হবে পাতাল।
রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল রুট-৬ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতোমধ্যে ডিপোর ভেতরে রেললাইন বসানোর কাজ সম্পন্নের পাশাপাশি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের উপর রেললাইন স্থাপনে ট্র্যাক প্লিন্থ কাস্টিংও সম্পন্ন হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের জানান, জাপানের কারখানায় রুট-৬ এর জন্য ছয়টি যাত্রীবাহী কোচ সম্বলিত পাঁচটি মেট্রো ট্রেন সেট তৈরি হয়েছে। জাপান থেকে সমুদ্রপথে প্রথম ট্রেন সেট শিগগিরই মংলা বন্দরে পৌঁছবে।
মেট্রোরেল রুট-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৬১ দশমিক ৩৩ ভাগ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ২৩ এপ্রিল নাগাদ মেট্রো ট্রেন সেট উত্তরা ডিপোতে পৌঁছবে বলে আশা করছি।


বিজ্ঞাপন