আজকের দেশ রিপোর্ট : ১৯৮০ সালে, ভারতে শেখ হাসিনার বাড়িতে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা আসতে লাগলেন। তারা তাকে ক্রমাগত বোঝাতে লাগলেন, তার কেনো দেশে ফেরা উচিৎ এই মুহুর্তে, তাকে শক্ত হাতে দলের দায়িত্ব নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলতেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গৌরব। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।
একদিন স্বপ্নে তিনি তার বাবাকে দেখেন, তিনি বাবাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আব্বা, আপনি কোথায় আব্বা? আওয়ামীলীগ যদি ভেঙ্গে যায়, আমাদের আর কোনদিন ঘরে ফেরা হবে না’।
স্বপ্নেই তার বাবা তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তুই চিন্তা করিস না, আওয়ামীলীগ ভাঙ্গবে না।‘
১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারী, ঢাকায় আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সে সম্মেলনে আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটি নেয়, সিদ্ধান্তটি ছিলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি নির্বাচন।
সেদিন শেখ রেহানা লন্ডন থেকে ভারতে এসে শেখ হাসিনাকে খবরটি দেন
পরবর্তীতে আসে সেই মাহেন্দ্রাক্ষন, ১৭ই মে, ১৯৮১।
আওয়ামীলীগের দুই নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি রওনা দেন ঢাকায়। সেইদিনটি ছিলো রবিবার, বৃষ্টিস্নাত এক দিন।
প্রায় পনের লক্ষ জনতা সেদিন ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসে। দেশের মাটিতে নেমে কান্নায় ভেঙ্গে পরে শেখ হাসিনা।
তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে বলেন, ‘’যেদিন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন আমার সবাই ছিলো। আমার মা-বাবা, আমার ভাইয়েরা, ছোট্ট রাসেল সবাই বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছিলো।
আজকে আমি যখন ফিরে এসেছি, হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন, স্বাগত জানাতে এসেছেন, কিন্তু আমার সেই মানুষগুলো আর নেই। তারা চিরতরে চলে গেছেন।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তিনি তাদের বাড়ি ধানমন্ডি ৩২ এ যান, কিন্তু তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে সে বাড়িতে ঢুকতে বাধা প্রদান করেন।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয় যাতে শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে না ঢুকতে পারে। তিনি রাস্তাতে বসেই সেদিন সবার জন্য দোয়া করেছিলেন।
শেখ হাসিনা ধানমন্ডি লেকের পাড়ে, বাড়ির দরজার এসে বসে থাকতেন। তার নিজের বাবার বাড়ি তার জন্য নিষিদ্ধ ছিলো।
৮২ সালে ডঃ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনে যোগদানের আবেদন জানান।
মহাখালীতে দুই কামরার একটা ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছিলো পরমানু শক্তি কমিশন, শেখ হাসিনা সেই ফ্ল্যাটেই স্বামীকে নিয়ে থাকতেন।
সেদিনের সেই ১৭ই মে, শেখ হাসিনার আরেকটি নতুন জীবনের শুরু।
রেফুজি জীবন শেষে এই নতুন জীবন আন্দোলনের, সংগ্রামের।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সে আন্দোলনে সেই যে এক নতুন হাসিনার জন্ম, আজকের পরিপুর্ণ শেখ হাসিনায় আমি খুজে ফিরি সেই দিনের সেই তরুনী হাসুকে, পরিবার হারিয়ে দিগবিদিকশুন্য, আবেগপ্রবণ শেখ হাসিনাকে।
এই খুজে ফেরা তার সংগ্রামমুখর জীবনকে একটা টাইমলাইনে দেখবার জন্য।
এক উত্থান পতনময় জীবনের মধ্যে দিয়ে সেদিনের রাষ্টনায়ক, জাতির পিতার কন্যা থেকে রেফুজি কন্যা হয়ে আজকের বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রামমুখর জীবন আমাদের শক্তি দেয়, আমাদের সাহস যোগায়।
পরিবারের সকলকে হারিয়ে হতবিহবল সেদিনের তরুণীর এই ঘুরে দাঁড়ানো আমাদেরকে উজ্জীবিত করে।
আর? আর আমাদের ভালোবাসতে শেখায়, যে ভালোবাসায় অকাতরে বোনের প্রাণ বাঁচাতে চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে সহস্র ভাই গুলির বৃষ্টির সম্মুখে বুক পেতে দিতে পারে, তাদের বোন হাসুকে বাঁচাতে।
যে ভালোবাসায় গ্রেনেডের সামনে প্রাণ বিলিয়ে দিতে পারে কর্মীরা, তাদের বুবু শেখ হাসিনাকে বাঁচাবার জন্য।
পিতা শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘জেল-কারাবাস আমায় দুর্বল করে না, আমায় দুর্বল করে ফেলে আমার জনগনের ভালোবাসা।‘ তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।
আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, আমি তাদেরকে অনেক বেশী ভালোবাসি’। এ ভালোবাসা তারই প্রতিদান, এ ভালোবাসা কখনও শেষ হবার নয়।
১৯৮১ সালের ১৭ই মে, দিনটি তাই ইতিহাসে লেখা থাকুক ঘুরে দাড়াবার দিনের নামে, সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে, বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করবার প্রত্যয়ের দিন হিসেবে।