সদরঘাটের নৈরাজ্য

অপরাধ অর্থনীতি আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা বানিজ্য রাজধানী

লঞ্চ নোঙরে অনিয়ম

বিশেষ প্রতিবেদক : কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সদরঘাটে লঞ্চ নোঙর করাকে কেন্দ্র করে অরাজকতা চরম আকার ধারণ করেছে। রুট অনুযায়ী টার্মিনাল নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরও তা মানছেন না অনেক লঞ্চচালক। অভিযোগ রয়েছে, তারা লঞ্চমালিকদের সুবিধা অনুযায়ী পন্টুনে নোঙর করছেন। এভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে এক লঞ্চের জন্য নির্দিষ্ট পন্টুনে অন্যটি নোঙর করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর তড়িঘড়ি করে নোঙর করতে গিয়ে একটি অন্যটিকে ধাক্কা দেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া, নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নিয়ে অনেকে নির্ধারিত ঘাটে ব্যবহার না করে নৌকায় নামছেন। আর এই নৌকাগুলো দুই লঞ্চের মাঝখানে চাপা পড়ে প্রায় ডুবছে নদীতে। এতে প্রাণহানিও ঘটছে।
সবশেষ গত ২১ জুন সকালে লঞ্চের ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা ডুবে গিয়ে দুই ভাই-বোনের মৃত্যু ঘটেছে। এমন দুর্ঘটনার জন্য যাত্রীদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা এ-ও বলছেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অবহেলাও কম দায়ী নয়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে এ প্রবণতা কিছুটা রোধ করা সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চমালিকদের মধ্যে আলোচনা মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার পরেও কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না লঞ্চ থেকে নৌকায় নামার প্রবণতা।
দেখা গেছে, লঞ্চঘাটের পন্টুনে নোঙর করার সময়ে আনসার সদস্যদের কেবল নজর থাকে যেন কোনও যাত্রী বিনা টিকিটে ঘাটে উঠতে না পারেন, সেদিকেই। লঞ্চমালিকদের নির্দেশেই তারা এ কাজটি করেন বলে জানিয়েছেন আনসার সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরবন ও সুরভী লঞ্চের দুই আনসার সদস্য বলেন, অনেক যাত্রীই টিকিট না কেটে বেরিয়ে যেতে চান। তারা যেন টিকিট না দেখিয়ে বের হয়ে যেতে না পারেন, সেটা দেখাশোনা করাই আনসারদের প্রধান কাজ। মালিকদের নির্দেশেই আমরা সেই কাজটি করি। এরপরও যাত্রীরা যেন নৌকায় না নেমে ঘাটেই নামেন, তা দেখা হয়।
এ প্রসঙ্গে পারাবাত লঞ্চের মালিক শহীদুল ইসলাম বলেন, সব যাত্রী যেন ঘাটে নামেন, সে বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। কোনও যাত্রী যেন লঞ্চ থেকে সরাসরি নৌকায় নামতে না পারেন, সে বিষয়ে আনসার সদস্যদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া আছে। এরপরও অনেকে চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘাটে না নেমে নৌকায় নামেন। এতে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
আরো জানা গেছে, সদরঘাটে বর্তমানে যে জায়গা রয়েছে, তাতে মাত্র ২০টি লঞ্চ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বর্তমানে লঞ্চের পরিমাণ বেড়েছে। তাই ঘাটের সীমানা ও পন্টুনের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই পন্টুন তৈরির কাজ চলছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে পন্টুন সেট করার কাজ শুরু হবে। একপর্যায়ে ঢাকা নদী বন্দর নামে সদরঘাট প্রশস্ত হয়ে তা যাবে বাদামতলী বাবুবাজার ব্রিজ ঘাট থেকে শ্যামপুর পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত চীন মৈত্রী ব্রিজ পর্যন্ত। যা বর্তমানের কাঠামোর তুলনায় তিনগুণ। তখন জেলাভিত্তিক নির্ধারিত পন্টুনে লঞ্চগুলো নোঙর করবে। ফলে নোঙরের ধরনও বদলে যাবে। এই পদ্ধতি কার্যকর হলে সদরঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ কমবে। জেলা অনুযায়ী আলাদা করে এই টার্মিনাল নির্মাণে সময় লাগবে কমপক্ষে দুই বছর।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, সদরঘাট টার্মিনালের পরিসর বাড়াতে ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মূল কাজ জুনের শেষ দিকে শুরু করা না গেলেও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে। বছর দুই সময় লাগবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বলেন, শুধু টার্মিনাল প্রশস্ত করাই নয়, যাত্রীসেবা বাড়ানোরও নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সদরঘাটের যে জায়গা রয়েছে, তাতে স্থান সংকুলান হয় না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে লঞ্চে ওঠানামার জন্য ঘাট ব্যবহার করতে পারবেন। এতে সদরঘাটের ওপর চাপ কমবে। কমবে দুর্ঘটনাও।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, নৌপুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীরা যেন লঞ্চ থেকে সরাসরি নৌকায় না নেমে ঘাটে নামেন, সেদিকে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। এজন্য লঞ্চমালিক ও আনসার সদস্যদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচেষ্ট বলেও তিনি দাবি করেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *