৮৮’র বন্যার প্রতিচ্ছবি যাত্রাবাড়িতে
মহসীন আহমেদ স্বপন : কয়েক ঘণ্টার থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর একটি বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে যারা বাইরে ঘুরতে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তাদের আশায় গুড়েবালি। কোথাও কোথাও বসতবাড়িতেই পানি ঢুকে পড়েছে।
তীব্র পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শতশত মিষ্টি কুমড়া। ভেসে যাওয়া কুমড়া উদ্ধারে পিছু পিছু ছুটছেন কয়েকজন নারী ও পুরুষ। অদূর থেকে উচ্চ কণ্ঠে কয়েক যুবক চিৎকার করে বলছেন, ‘হায় হায় রে, আহেন দেইখ্যা যান, যাত্রাবাড়িতে ৮৮ সালের বন্যা।
যুবকদের একজন তার পরিচিত একজনকে উদ্দেশ করে বলছিলেন, ‘সাবধান! খেয়াল কইরো, পানি থাইক্যা কুমড়া তুলতে গিয়ে আবার পকেটের মোবাইল না পইড়া যায়।
শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ১টায় যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজার আড়তের সামনে এমন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি এ পর্যন্ত দেখেছেন ৭ হাজার ৯০০ জন। শেয়ার হয়েছে ৫ হাজারের বেশি। মন্তব্য করেছেন ৩০০ জন।
রাজধানীর অন্যতম কাঁচামালের এ আড়তে সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূলের বেচাকেনা চলে। আড়তের ভেতর ছাড়াও বাইরে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়।
দুপুর আনুমানিক ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
মুষলধারে বৃষ্টিতে মূল সড়কের উত্তর পার্শ্বে অপেক্ষাকৃত একটু নিচু স্থানে অবস্থিত এ আড়তে বৃষ্টিতে পানি জমতে থাকে। একপর্যায়ে পানি নেমে যাওয়ার সময় প্রবল স্রোত আড়তের বাইরে থাকা কুমড়া বিভিন্ন কাঁচা পণ্যসামগ্রী ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ব্যবসায়ীদেরকে বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের মালামাল পানি থেকে উদ্ধার করে আড়তের ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়।
কেউ কেউ কৌতুকের ছলে এ বৃষ্টিকে ১৯৮৮ সালের বন্যার সঙ্গে তুলনা করেন। তারা বলেন, মুষলধারে বৃষ্টির কারণে যাত্রাবাড়ি এলাকায় ৮৮ সালের বন্যার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে দুর্বল পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থার এই নগরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছে। দুপুরের আগে আগে নামে ঢল। আর বৃষ্টি এলেই মিরপুর তলিয়ে যায় অবধারিতভাবে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কেন্দ্রস্থলে কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, শান্তিনগর, ইস্কাটন, মগবাজারেও পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক।
মোহাম্মদপুর, রামপুরার বেশ কিছু এলাকা আর পুরান ঢাকার পরিস্থিতিও একই রকম। পানিতে তলিয়ে থাকায় চলাচলের দুর্ভোগ বেড়েছে। ছুটির দিনও ভিআইপি রোডে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।
টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকার লিমিটেড-৭ নম্বর খাল পাড়। এখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২২টি বাড়ির বাসিন্দারা। একই সাথে লিমিটেড-৬ নম্বর সড়কেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কাজল বলেন, বৃষ্টি হইলেই পানি জমে। চলাচল করা যায় না। নিচা কালভাট, খালে ময়লা সরকার এগুলা দেখে না।
রামচন্দ্রপুর খালের নবোদয় হাউজিং, আদাবর, শেকেরটেকসহ বিভিন্ন এলাকায় খালে পানির বাড়ার কারণে তা মূল সড়কে উঠে এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মূল সড়কে পানি থাকার কারণে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার মূল সড়ক রোকেয়া সরণীতে বৃষ্টি পানি জমে সৃষ্টি করেছে তীব্র জলজট। মূল সড়কে এক হাঁটু পানি মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
মহাখালীর আজরতপাড়া, নাখালপাড়া, গ্রিন রোড, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, ডিআইটি রোড, বাড্ডার কিছু অংশের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে কারওয়ান বাজার, মগবাজার, পান্থপথ, বঙ্গভবন এলাকায়। এছাড়া ধানমন্ডি-২৭, শুক্রাবাদ, জিগাতলা, মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকাও পানির দখলে।
জলাবদ্ধতার কারণে ছুটির দিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির কারণে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে জলে ডুবে থাকা এলাকার ব্যবসায়ীদের একটি অংশকে।