বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের লিজেন্ড দ্যা বস প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন আজ। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারে স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা ও তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।

কিশোর বয়স থেকেই তিনি সঙ্গীতের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল ছিলেন। সে কারণেই ওই বয়সে একটি গিটার নিয়ে পুরো চট্টগ্রাম চষে বেড়াতেন। তখন তার গিটারের মূর্ছনায় চট্টগ্রামের হাজার হাজার তরুণ তরুণী উন্মক্ত হয়ে পড়তো। এমনকি ক্রমশঃ তার পরিচিতি চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।

জীবদ্দশায় আইয়ুব বাচ্চু বলেছেন, এক জীবনের পুরোটা সময় গিটার আর গানকে ভালবেসে উৎসর্গ করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্বপ্ন দেখতেন একটা গিটার ও মিউজিক স্কুলের। খুব করে চাইতেন যেন কেউ পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়ায়।
তিনি বলতেন “আমি বোহেমিয়ান এর মত এই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছুটেছি গানের টানে। কখনো এক চিলতে সময় পাইনি নতুন প্রজন্মকে গীটারটা শেখানোর কোন আয়োজন করতে। এটা আমাকে খুব পোড়ায়। কৈশোরে আমি গিটার শেখার জন্য চট্টগ্রামের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটেছি।
গিটার শেখাটা খুব অরাধ্য চিল। ছিলনা কোণ ভাল শিক্ষক। ওই সময়ে যাকে পেতাম তাঁর পেছনেই লেগে থাকতাম কিছু শেখার জন্য। সব কিছু ঘুছিয়ে একটু সময় বের করতে চাই ছোট ছেলে মেয়ে গুলির জন্য। ওরা কোথাও যদি ভাল একটা স্কুলিং পায় তাহলে আর ওদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ওরাই আমাদের মিউজিক সামনে নিয়ে যাবে”
জীবনের সব চাওয়া পাওয়া হয়ে ফিরলে পূরণ হয়নি কিংবদন্তীর শেষ ইচ্ছেটা। আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে গিটার অরাধ্য কিছু নয়। একটা বাজানোর মঞ্চ অরাধ্য নয়। কিন্তু কেউ কি জানে কি সংগ্রামটাই করেতে হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুকে এই প্রজন্মকে এই অবাধ সাবলীলতা উপহার দিতে। একজন আইয়ুব বাচ্চুর কতটা বঞ্চনা, নিগ্রহ আর সংগ্রামের ইতিহাসের উপর আমাদের আজকের এই রক মিউজিকের অনন্য সুন্দর সময় দাঁড়িয়ে আছে যেই গল্প কি কোথাও লেখা আছে?
কিছুই চাওয়া পাওয়ার চিল না চির অভিমানী মানুষটির। ডুবে থাকতেন সুর আর সংগীতের গভীর ধ্যানে। সৃষ্টিতেই চিল তাঁর সব আনন্দ। নিজের মনে সেই আনন্দ আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সারাটা জীবন। ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের শিল্পীর জীবদ্দশায় মিলেনি বাংলাদেশ সরকারের কোণ সন্মাননাও! ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সমান যার সৃষ্টির উচ্চতা তাঁর অবশ্য স্বীকৃতির দরকার কি!
আজ এই সুন্দর দিনগুলি আমরা উপভোগ করতে চাই। আমরা চাই আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন কিংবদন্তীর ফেলে আসা পথ ধরে সুন্দর আগামীর গান কণ্ঠে তুলে নেয়। ইতিহাস কখনো ভুল বলে না।
আজ দেশের আনাছে কানাচে হাজার হাজার কিশোর-তরুণ গিটার হাতে কিংবদন্তীর দীর্ঘ ছায়ায় সুন্দর আগামীর গান ছড়িয়ে দিচ্ছে। “Learn Guitar With Asad” গিটার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কিংবদন্তীর জন্মদিনে একটি চমৎকার সমবেত ট্রিবিউট পরিবেশন করেন। LGWA পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা ও বিশেষ ধন্যবাদ এই সুন্দর আয়োজনটির জন্য।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর এই ব্যান্ড লিজেন্ড হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দেশের ব্যান্ড জগতে একটি বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
দর্শকদের মতে, এই শূন্যতা পূরণ করার মতো বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতে সে রকম গায়ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।