ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে

এইমাত্র স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছেন ২৪০ জন। বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসের ১৯ দিনে ৪ হাজার ৫৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টের এই কয়েকদিনেই মারা গেছেন ১৯ জন আর জুলাইতে ১২ জন। গত জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী। তার আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৭২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ১১০ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ৮৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৫৬ জনে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৫ হাজার ৭৩৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আগস্ট মাসে। মাসটির ১৮ দিনে ৪ হাজার ২৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টের এই কয়েকদিনেই মারা গেছেন ১৮ জন আর জুলাইতে ১২ জন। জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী। তার আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৭২ জন।
বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। সেই বছর আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ালেও ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটা কম ছিল। গত বছর ১ হাজার ৪০৫ জন রোগী হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেন। চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে এর চেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের উপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি তাতে অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি নয়, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের। আমরা মনে করি, এ বিষয় নিয়ে সম্মিলিতভাবে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগ যেভাবে কাজ করছে, এই কাজের গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ডেঙ্গু বাসায় থাকা এডিস মশার কামড়ে হয়। নগরীর চার পাশের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকা, নোংরা ড্রেন পরিষ্কার না করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। অথচ নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করলেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কিন্তু নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যাদের দায়িত্ব তারা কি তাদের সেই কর্তব্যকাজ সঠিকভাবে করছে? সিটি করপোরেশনকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। জমাটবদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা হয়। তাই ঘরের আশপাশে পানি জমাটবদ্ধ অবস্থায় রাখা যাবে না। এডিস মশা ঘরের ভিতরেই থাকে। দিনের বেলায় কামড়ায়। এগুলো সবাই জানে, তাই সচেতন হলে এর প্রকোপ কমবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণেও জ্বর যেমন হয়, ডেঙ্গুতেও তাই হয়। করোনা ভাইরাস আর ডেঙ্গুর জোড়া প্রকোপে ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশার বংশবিস্তার থামাতে জোর দিতে বলছেন তারা।
এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। চোখ, নাক ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, বমি, পেটব্যথা, খাদ্যনালি, মূত্রনালিসহ বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণের উপসর্গ নিয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা হাসপাতালে বেশি আসছে। জ্বর, মাথাব্যথার উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কমই পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীরই রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই এবারের ডেঙ্গু অন্যবারের চেয়ে আলাদা বলে মনে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু চিহ্নিত একটি রোগ। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক। বর্তমানে কারো সর্দি, কাশি ও জ্বর হলে ডেঙ্গু ও করোনা দুটোর পরীক্ষা এক সাথে করতে হবে। ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে।
সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এবার ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে, প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। তাই সোসাইটি অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে করোনা ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রটোকল আপডেট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ১৩টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী শনিবার থেকে ৭ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ চলবে। তিনি বলেন, এবার ডেঙ্গুতে তরুণদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমাট বাঁধা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। মশা নিধন করতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করলে সামনে মহাবিপদ।


বিজ্ঞাপন