নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা হতে গতকাল এক ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী প্রতারককে আটক করেছে আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট,এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
গ্রেফতারকৃত প্রতারকের নাম মোঃ রবিউল ইসলাম রবি (৩০)। সে রাজশাহী মহানগরীর দামকুড়া থানার কলার টিকর গ্রামের মোঃ আসাদ আলীর ছেলে।
ঘটনাসূত্রে জানা গেছে , পাবনা সুজানগরের মোসাঃ ফরিদা আক্তার(ছদ্মনাম) নামের এক বিবাহিতা নারীর সাথে ফেসবুকে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী প্রতারক রবিউলের পরিচয় হয়।
গত ১ বছর যাবৎ তাদের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। রবিউল নানাভাবে বিভিন্ন মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদার বিশ্বস্ততা অর্জন করে।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে এবং সাক্ষাৎ হয়। রবিউল মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদার প্রথম স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এরপর রবিউল গত ১৩ আগস্ট ফরিদাকে বিয়ে করে।
বিয়ের পর থেকেই গোপনে রবিউল তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করে। ফরিদা একসময় বিষয়টি জানতে পারে এবং তার অনুমতি না নিয়ে রবিউল গোপনে প্রায়ই তার ফেসবুক মেসেঞ্জার হতে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে চ্যাট করে। এক সময় কৌশলে রবিউল ফরিদাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।
ফরিদা জানায়, রবিউল প্রায়ই মোবাইলে লে: কর্নেল পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিসার ও ব্যক্তির সাথে কথা বলতো এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রদানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করতো।
এক পর্যায়ে ফরিদা রবিউলের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারলে, রবিউল ফরিদার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে এবং তকে ভয় ভীতি দেখাতে থাকে। ফরিদা তার মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রবিউলকে তালাক দেয়।
এতে রবিউল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ফরিদার নামে গোপনে একটি ফেসবুক একাউন্ট খোলে।
এরপর সেই ফেসবুক একাউন্টের মেসেঞ্জার হতে তার আত্মীয় স্বজনদের নিকটে তার নামে বিভিন্ন মানহানিকর ম্যাসেজ এবং গোপনে ধারণকৃত তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আপত্তিকর ছবি পাঠায়।
রবিউল কেন গোপনে এই কাজ গুলো করছে ফরিদা জানতে চাইলে রবিউল টাকার দাবি করে এবং টাকা না দিলে তার প্রথম পক্ষের স্বামী, সন্তানসহ নিকট আত্মীয়দের ক্ষতিসাধনসহ মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
এমনকি রবিউলের মোবাইলে গোপনে ধারনকৃত ফরিদার আপত্তিকর ও অশ্লীল ছবি ফেসবুক আইডি থেকে ভাইরাল করে দিবে বলে ভয় দেখায়।
ফরিদা নিরুপায় হয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের দামকুড়া থানায় এসে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
পরবর্তীতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযোগটি বিশ্লেষণ করে সত্যতা পায় এবং আসামীর ব্যবহৃত ডিভাইসসহ পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশনায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম টিম কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের সহায়তায় কোর্ট স্টেশন এলাকা হতে ভূয়া লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী প্রতারক মোঃ রবিউল ইসলাম রবিকে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক রবিউল তার অপরাধের কথা স্বীকার করে।
সে আরো জানায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভুয়া সেনাকর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রতরণামূলক কাজ করে আসছে।
পরবর্তীতে প্রতারক রবিউলকে দামকুড়া থানায় প্রেরণপূর্বক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।