নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনারকালে স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়ে দেশে শুরু হয় নানা ধরণের আলোচনা। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয় জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে। এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলোচনায় এসেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা। যে নথিগুলো গায়েব হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, নিপোর্ট অধিদফতরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ১৭টি নথি গায়েবের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার জিডিটি করেন। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. শাহ্ আলমকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য ৩ সদস্য হলেন- মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) মো. আহসান কবীর, উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের ও মল্লিকা খাতুন। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত রোববার (৩১ অক্টোবর) তারা সংশ্লিষ্ট কক্ষে আলামত সংগ্রহ ও কর্মরতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই কক্ষের ৬ জন কর্মচারীকে সিআইডি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তারা হলেন- জোসেফ, আয়েশা, বাদল, বারী, মিন্টু ও ফয়সাল।
তবে গায়েব হওয়া ১৭টি ফাইল তেমন গোপনীয় নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর। তিনি বলেন, ফাইল হারিয়ে যাওয়াটাই বড় বিষয়। ফাইল হারানোর পর পুলিশের তদন্ত শুরুর দিন নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সচিব বলেন, ‘এগুলো ক্রয় সংক্রান্ত। এগুলো তেমন গোপনের কিছু নেই। প্রতিটি ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, আমাদের কম্পিউটারেও আছে, আমাদের ডিজি অফিসগুলোতেও আছে। এটা নিয়ে তেমন সমস্যা নয়, কিন্তু মূল বিষয়টা হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়াটা। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। এটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করে বলেছে, এবারই প্রথম নয়, মাত্র দেড় মাস আগেও একই শাখার কক্ষ থেকে ফাইল গায়েব হয়েছিল। ফাইলটি ছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া কক্ষে।
সে কক্ষে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল এবং এই কেবিনেটের চাবিও থাকে তাদের দুজনের কাছেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত ওই ফাইল গায়েব হওয়ার পর তিন দিনের ভিতরে খুঁজে দেওয়ার জন্য আয়েশা সিদ্দিকাকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি চিঠির জবাব না দিলে তাকে শোকজ করা হয়। আয়েশা সিদ্দিকা বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। সে সময় চিঠির জবাবে তিনি বেশির ভাগই তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।’ এরপর নিয়ম অনুযায়ী জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনিক শাখায় অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তার শরীরের অবস্থা বিবেচনা ও সন্তানের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি না চিন্তা করে অ্যাকশনের বিষয়টি স্লো হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটা লকারের একটা ড্রয়ার থেকে কিছু ফাইল মিসিং হয়েছে, এটা জানার পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অফিসারদের পাঠাই। নিশ্চিত হওয়ার পর আমি স্পটে যাই। আমাদের অতিরিক্ত সচিবরাও ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে খবর দিই। এডিসিসহ আরও দুজন কর্মকর্তা এসেছিলেন। তাৎক্ষণিক মন্ত্রী ও ক্যাবিনেট সচিব মহোদয়কে অবহিত করি এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলি। এর বাইরে সিআইডিকে অনুরোধ করি, বিষয়টা টেক আপ করার জন্য, যাতে আমাদের যে বিষয়টা ঘটে গেছে, এটা তো আমাদের উদ্ধার করতে হবে, যেভাবেই হোক। যারা এর সঙ্গে জড়িত, এটা খুঁজে বের করতে হবে। আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে চাই।’ এ ঘটনায় চার সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘সেই কমিটিও কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই একটি তথ্য জানতে পারব, কারা কীভাবে কাজটি করেছে এবং কেন করেছে।’