রামপুরায় এক ভবনেই ১৫জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। কোনো কোনো জেলায় কমছে রোগীর সংখ্যা। এছাড়া, কয়েকটি জেলায় শনাক্ত হচ্ছে এডিসের লার্ভা। এতে আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মনে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বুধবার রাত পর্যন্ত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নতুন করে ৩৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুধু এ হাসপাতালেই এ পর্যন্ত ৩২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। কোরবানির ঈদের পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়য়ে উদ্বেগ বাড়ছে জনমনে।
যশোর: যশোরেও একইচিত্র। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৮ উপজেলায় ৪৮ জন রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৯১ জন।
রংপুর: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২১ আগস্ট পর্যন্ত শুধুমাত্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৩৭ জন। এরমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৮১ রোগী। আর সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১০ জন ভর্তি হয়েছেন।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে গত কয়েকদিনের তুলনায় বুধবার কম ছিলো ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, ২১ শে আগস্ট পর্যন্ত জেলায় এক হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
নেত্রকোনা: এডিসের লার্ভার সনাক্তে নেত্রকোনায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলার বাস টার্মিনাল এলাকার পরিত্যক্ত টায়ারে লার্ভা সনাক্ত হয়। পরে আশাপাশের কয়েকটি বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়।
অন্যান্য: এছাড়া নাটোর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা কার্যক্রমের পাশাপাশি চলছে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি।
রামপুরায় এক ভবনেই ১৫জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত : রাজধানীর পূর্ব রামপুরায় বনশ্রী এলাকায় তিতাস রোডে ‘লুমিনাস স্বপ্ন চূড়া’ নামে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনে ১৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে।
নির্মাণাধীন ‘এল সাইজের’ বিশাল আয়তনের এই ভবনের ৭২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি ফ্ল্যাটে ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়িসহ নানা পেশার লোকজন বসাবাস শুরু করেছেন। আর বসবাসকারীদের মধ্যেই ১৫ জন ডেঙ্গু জীবানুবাহি এডিস মশার কামড়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভবনের বাসিন্দারা জানান, ওই ভবনের ডেভলপিংয়ে নিয়োজিত প্রকৌশলী রেজওয়ান এবার আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর একে একে অন্যরাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এ পর্যন্ত ১৫ জন বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিনিয়র সাংবাদিক মো. দিদারুল আলম দিদারের ৮ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আদিব। সে গত ৫ আগস্ট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর সাংবাদিক দিদারুল আলমের স্ত্রী ডাক্তার সৈয়দা ফারজানা আফরিনও গত ১৭ আগস্ট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
ওই ভবনের আরেক বাসিন্দা ‘আমাদের সময়’ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক আবুল হাসান হৃদয়ের ৩ বছর বয়সী ছেলে ফিদেল গত ৯ আগস্ট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ওই ভবনের বাসিন্দা আইটি ব্যবসায়ি সুমনের স্ত্রী ও সন্তানসহ ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় ফরাজী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মজিবর রহমানের ৩ সন্তানও চিকিৎসা নিয়েছেন।
বর্তমানে ওই ভবনের বাসিন্দারা রীতিমতো এডিস মশার আক্রমণ এবং ডেঙ্গু জ্বরের আতঙ্কে রয়েছে। অনেকই ওই ভবনটিকে এডিস মশা উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বলে মন্তব্য করছেন। বাসিন্দারা জানান, নির্মাণীন এই ভবনটির ভেতরে, ছাদে এবং আশ পাশে এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র। ভবনের ছাদের সব সময় পানি জমে থাকায় অনেক আগাছা, লতাপাতা জন্ম হচ্ছে, ভেতরে সিঁড়ির গোড়ায় এবং লিফট বসানোর জন্য ফেলে রাখা খালি জায়গায় অনেক আর্বজনা পড়ে রয়েছে।
তারা জানান, ৭২টি ফ্ল্যাটের জন্য ৪টি লিফটের ব্যবস্থা রাখা হলেও মাত্র ২টি লিফট বসানো হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩২টি ফ্ল্যাটে বাসিন্দারা বসবাস করছেন, আর বাকী ৪০টি ফ্ল্যাটে এখনো কেউ উঠেনি।
তারা আরো জানান, ২০১৪ সালের মধ্যে এই ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেও ফ্ল্যাট মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘লুমিনাস স্বপ্ন চূড়া’ ভনটির ডেভলপার কোম্পানীর মালিক নুর কুতুবুল আলম জহির রহস্যজনক কারণে এই ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছেন না।