বিশেষ প্রতিবেদক : প্রতিবেশীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো নয় বছর বয়সী রাকিব (ছদ্মনাম)। এরপর থেকেই তার আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সারাদিন চুপচাপ থাকে। অপরিচিত কাউকে দেখলে আতঙ্কিত হয়। অসুস্থতা কাটিয়ে তুলতে তাকে বেশ কয়েক মাস ধরে তার চিকিৎসা করিয়েছে তার পরিবার। এ নিয়ে রাকিবের বাবা বলেন, তাদের তার আরেকটি মেয়ে আছে যার নিরাপত্তা নিয়েই সবসময় সচেতন থাকতেন তারা। কিন্তু তার ছেলেটাও যে ধর্ষণের মত ঘটনার শিকার হতে পারে, এটা তাদের কল্পনাতেও ছিলো না।
সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমার ছেলেটাকে এক প্রতিবেশী খাবারের লোভ দেখাইয়া তার বাড়িতে ডাইকা নিয়া যায়। আমরা জানতাম না। সারাদিন ছেলেটার কোন খোঁজ পাই নাই। সন্ধ্যায় যখন ছেলে বাড়িতে আইলো তখন কেমন জানি করতেছিলো। চুপচাপ ছিলো। কিন্তু ওর প্যান্টের পিছনে রক্ত দেখে সন্দেহ হয় ওর নানির।
এরপর তার পরিবার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে কোনো কথা বলতে চায়নি রাকিব। পরে সে নিজের ধর্ষিত হওয়ার কতা খুলে বলে। সে জানায়, ওই ধর্ষক মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
এই ঘটনায় রাকিবের পরিবার থানায় মামলা করার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এরকম অনেক ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়া দূরে থাক, অনেক সময় ঘটনাটি প্রকাশই পায় না।
এরকমই একজন সুমন আহমেদ (ছদ্মনাম)। তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। কিন্তু সে ঘটনা কাউকে বলেননি। গত ১৫ বছর ধরে নিজেই বয়ে বেড়াচ্ছেন সে ঘটনা।
সে দিনের নির্মম অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি জানান, আমার বয়স তখন ১৪ বছর। বেড়াতে গিয়েছিলাম কাজিনের বাসায়। সেখানে রাতে আমাকে থাকতে দেয়া হয় আমার চেয়ে ১৫ বছরের বড় একজনের সঙ্গে। রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, দেখতে পাই ফিজিক্যালি আমি তার পুরো কন্ট্রোলে। সে প্রচ- জোরে কিস করছিলো, শরীরের বিভিন্ন অংশে টাচ করছিলো। আমি চেষ্টা করেও তার কব্জা থেকে বের হতে পারছিলাম না। ভয়ে আমি কোন চিৎকারও করতে পারিনি।
কিন্তু সেই রাতের কথা কাউকে বলেননি সুমন। কারণ, পরিবারে তার একটা ভালো অবস্থান ছিলো। তার মধ্যে একটা ভয় বা আতঙ্ক কাজ করছিলো। আর এ ধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয় সে বিষয়েও তার স্পষ্ট কোন ধারণা ছিলো না। তাই এ নিয়ে নিশ্চুপ থাকাকেই শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন সুমন আহমেদ।
বাংলাদেশে ছেলেশিশুর উপর এ ধরনের যৌন র্নিযাতন কোনো নতুন বিষয় নয়। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১১ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে এই নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো ৯ জন। আর ২০১৭ সালে ১৫ জন।
কিন্তু বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ বলেই মনে করে শিশু অধিকার সংগঠনগুলো।
বেসরকারি শিশু সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সে’র নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা মনে করেন, বাংলাদেশে সামাজিকভাবেই ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের বিষয়ে একধরণের নিরবতা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছেলেশিশুদের উপরও যে যৌন নির্যাতন হয়, সেটাই তো আমাদের সমাজ এখনো গ্রহণ করতে পারেনি। এখানে পথশিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়, আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এধরণের ঘটনা আমরা পেয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের ঘটনা হয় পরিবারে। কারণ, সেখানে অপরাধীদের জন্য শিশুদের কাছে পাওয়াটা সহজ। ছেলেশিশুদের কাছে পাওয়াটা আরো সহজ।