নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগতে অপরাধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী ও অনলাইনে সাইবার ক্রাইম প্রতারণা সম্পর্কে র্যাব তথ্য পায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী ও সাইবার প্রেট্রোলিং অব্যাহত রাখে।
ভিকটিম রুবেল চন্দ্র মজুমদার (২৮), নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইডিইএ (২য়) পর্যায় প্রকল্পে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভারে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংরক্ষিত থাকে।
শুধুমাত্র চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উক্ত সার্ভার ব্যবহারের অনুমতি নাই। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান সমূহ শুধুমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহিতাদের তথ্য উপাত্ত যাচাই করতে পারে।
কিন্তু গত ৬ জুলাই, অফিসে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার কালে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ০২টি এ্যাপস নজরে আসে, যার মধ্যে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভারে রক্ষিত তথ্য উপাত্ত উম্মুক্তভাবে যাচাই করা হচ্ছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা গুগল প্লে-স্টোরে “ঘওউ ছঁবৎু” নামীয় দুইটি এ্যাপস্ ব্যবহার করে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়।
উক্ত এ্যাপস এর মাধ্যমে এনআইডি ধারী সকল নাগরিকের ছবিসহ এনআইডির তথ্য উপাত্ত যাচাই ও সার্ভারে রক্ষিত তথ্য বেআইনিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। যার ফলে জাতীয় তথ্য ভান্ডারে রক্ষিত নাগরিকদের তথ্য হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। এসংক্রান্তে ভিকটিম র্যাব-১, এর নিকট একটি অভিযোগ করেন এবং আইনগত সহায়তা কামনা করে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১, ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ৮ জুলাই, সকাল আনুমানিক ৬ টা ১৫ মিনিটের সময় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জিএমপি গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া দক্ষিনপাড়া এলাকাস্থ জনৈক এস এম শাওন এর ছয় রুম বিশিষ্ট টিনসেড বিল্ডিং এর পশ্চিম পার্শ্বের রুমে অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরীর মূলহোতা এস এম শাওন (২৯), পিতা- এসএম শফিকুর রহমান, জিএমপি, গাজীপুর, মো: খালেদ আহম্মেদ শান্ত (১৯), পিতা- মো: ওয়ালি উল্লাহ, জিএমপি, গাজীপুর এবং মো: আল আমিন (২৩), পিতা- এসএম শফিকুর রহমান, জিএমপি, গাজীপুর’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় গ্রেফতার কৃত আসামীদের নিকট হতে ৩ টি সিপিইউ, ৪ টি হার্ড ডিক্স, ২ টি পাওয়ার ক্যাবল, ১ টি মোবাইল ক্যামেরা, ২ টি জাতীয় পরিচয়পত্র, ২ টি এটিএম কার্ড, ২ টি নগদ কার্ড, ১ টি ভ্যাকসিন কার্ড, ২ টি হেডফোন, ২ টি ম্যানিব্যাগ, ৬ টি মোবাইল ফোন, ৭ টি সীম কার্ড ও নগদ ৮,১৯২ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ধৃত আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে অবৈধভাবে জাতীয় এনআইডি সার্ভারের এপিআই (এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেইস) ব্যবহার করে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী ও সহায়তা, যাচাই, স্মার্ট কার্ডের তথ্য যাচাই, জাতীয় পরিচয় পত্রে নতুন তথ্য সংযোজন এবং বিয়োজন করে আসছে।
এছাড়াও উক্ত “ঘওউ ছঁবৎু” মোবাইল এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে শুধু মাত্র এনআইডি নম্বর ও জম্ম তারিখ দিয়ে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত সকল তথ্য অবৈধভাবে বের করে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট তৈরী করে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন করে আসছে। ধৃত আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল এপ্লিকেশনটির সোর্সকোড চেক করে দেখা যায় আসামীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সার্ভিস ওয়েবসাইট থেকে অবৈধভাবে এপিআই সংগ্রহ করে নিজেদের মোবাইল এপ্লিকেশন ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা আদায় করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত এস এম শাওন’কে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে উক্ত ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী ও সহায়তা, যাচাই, স্মার্ট কার্ডের তথ্য যাচাই, জাতীয় পরিচয় পত্রে নতুন তথ্য সংযোজন এবং বিয়োজনকারী চক্রের মূলহোতা। সে এ্যাপসগুলোর মার্কেটিং এর কাজ করে এবং এর প্রধান দায়িত্বে থাকে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ খালেদ আহম্মেদ শান্ত’কে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে উক্ত এ্যাপসগুলোর সহযোগী এ্যাপস ডেভোলপার হিসাবে কাজ করে এবং তা ব্যবহার করে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ উর্পাজন করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ আল আমিন’কে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে তাদের অন্যতম সহযোগী এবং পরামর্শদাতা। সে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার, তথ্য যাচাই, নতুন তথ্য সংযোজন বিয়োজন করা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের সংগ্রহ করার দায়িত্বে ছিল। তারা উক্ত জালিয়াতির সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
এভাবে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া গুরুত্বপূর্ন তথ্য পরিকাঠামো জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে জাল এনআইডি কার্ড তৈরী বা তৈরীতে সহায়তা করা এমনকি সোর্স কোড পরিবর্তন করে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য যে কোন অননুমোদিত ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা সংগ্রহ ও ব্যবহার করা দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
