ধামরাইয়ের চাঞ্চল্যকর সামিনা হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম এবং রোকেয়া’কে চাঁদপুর জেলা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিগত দিনগুলোতে র‌্যাব-৪ চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দীর্ঘ সময় যাবত পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুর্র্ধষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর, চাঞ্চল্যকর আজাহার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী কাউছারকে ৩১ বছর পর, চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতি’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)’কে ১২ বছর পর এবং চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আলম (৪০)’কে ঢাকার বংশাল এলাকা হতে থেকে গ্রেফতার উল্লেখযোগ্য।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২২ অগাস্ট র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের চাঞ্চল্যকর নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে গৃহবধু সামিনা হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম (৬৪) এবং রোকেয়া (৫০)’কে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানাধীন নারায়নপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত ২০০৩ সালে সাভারের কাউন্দিয়া নিবাসী ভিকটিম সামিনা (১৮) এর সাথে সাভারের বক্তারপুরের গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়ার ছোট ভাই মামলার মূল আসামী জাফরের পারিবারিকভাবে বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় কন্যা পক্ষ সাধ্য অনুযায়ী নগদ টাকা পয়সা, আসবাসপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী প্রদান করে।

কিন্তু অত্যান্ত লোভী, ধুর্ত, উগ্র এবং বদমেজাজী ভিকটিমের স্বামী জাফর বিয়ের পর হতেই যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধূকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। দাবীকৃত যৌতুকের ষোল হাজার টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও ভিকটিমের দরিদ্র বাবা জুরা মিয়া ছয় হাজার টাকা জাফর ও তার পরিবারকে প্রদান করেন এবং বাকি দশ হাজার টাকা পরে দিবে বলে আসামীর পরিবারকে জানায়।

কিন্তু ভিকটিমের পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় তাদের পক্ষে বাকী টাকা দিতে আপাদত প্রকাশ করে যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভিকটিমের স্বামী জাফর, গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া, রোকেয়ার স্বামী আঃ রহিম এবং অন্যান্যরা ভিকটিমকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতে থাকে। এমনকি ঘটনার দুই তিন দিন আগে ভিকটিমের বাবার বাড়ি থেকে উক্ত টাকা এনে দেওয়ার জন্য ভিকটিমের মুখে সিগারেটের আগুন দিয়ে সেঁকা দেয়।

মূলত উক্ত যৌতুকের বাকী টাকা ভিকটিমের স্বামী জাফর তার বোন গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়াকে বিদেশে যাওয়ার জন্য দেয়ার কথা ছিলো। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৭ জুন ২০০৫ তারিখ পূর্ব পরিকল্পনা মতে ভিকটিমকে ফুসলিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া ও আঃ রহিম এর ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন সৈয়দপুর তাদের ভাড়া বাড়িতে স্বামী জাফর দাওয়াত করে নিয়ে আসে।

সেখানে গ্রেফতারকৃত আঃ রহিম, রোকেয়া, ভিকটিম এবং ভিকটিমের স্বামী জাফরের উপস্থিতিতে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা সেই যৌতুকের বাকি টাকা দাবি করলে ভিকটিম সামিনা জানায় যে তার পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় আপাদত টাকা দিতে পারবেনা।

এতে ভিকটিমের স্বামী জাফর গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহিম, রোকেয়া এবং অন্যান্য আসামীর উপস্থিতিতে ভিকটিমের উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে এবং মারধরের একপর্যায়ে ভিকটিমের স্বামী জাফর ঘরে থাকা দাহ্য জাতীয় পদার্থ ভিকটিমের শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাহির থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।

ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে নয়ারহাট গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি দেখলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ ই জুন ২০০৫ তারিখ ভিকটিম সামিনা মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর আগে ভিকটিম আসামীদের নাম উল্লেখ করে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি প্রদান করে।

ভিকটিমের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি অনুযায়ী পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা মোসাঃ নাজমা বেগম ০৯ জুন ২০০৫ বাদী হয়ে ভিকটিমের স্বামী জাফরকে মূল অভিযুক্ত, জাফরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর, সালেক, জাফরের বড় বোন রোকেয়া ও তার স্বামী আঃ রহিম এবং জাফরের মামা ফেলানিয়া ও মোট ০৬ জনকে আসামী করে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৭(৬)০৫; ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (সংশোধনী ২০০৩) এর ৪ (১)/৩০।

এই ঘটনায় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ হতে ঘটনার তথ্যানুসন্ধান, ঘটনার শিকার পরিবারের পাশে দাড়ানো, চিকিৎসা সহায়তা, মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে চিঠি প্রেরণ করে।

পিপি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে ভিকটিমের পরিবারকে আদালতে এ মামলা পরিচালনা সহায়তা প্রদান করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *