বিশেষ প্রতিবেদক ঃ গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমাবেশের সংবাদ কভার করা অনেকের কাছেই হয়তো এই প্রশ্নের সঠিক জবাব নেই। বিশ্বের কয়েক ডজন সংবাদমাধ্যম বলছে, সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে। এক হাজারকে দশ দিয়ে গুণ করলে দশ হাজার হয়, আর দশ হাজার মানেই লক্ষাধিক নয়। ইন্ডিয়া টুডে-তে প্রকাশিত এক কলামে কথাগুলো বলেন আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ। স্থানীয় যেসব সাংবাদিক বিদেশি সংস্থার হয়ে কাজ করছেন তারা অনেকেই গোলাপবাগের ধারণ ক্ষমতা জানেন। স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে একটি স্থানীয় সংবাদ সংস্থা বলছে, গোলাপবাগের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩০,০০০। তবুও ধরে নেওয়া যাক, দেরিতে পৌঁছানো, আশপাশের ভিড়সহ মিলিয়ে সেটা ৪০ হাজারের বেশি নয়। ফলে গোলাপবাগের জমায়েতকে হাজার হাজার বলাটা অনুমানভিত্তিক অতিরঞ্জিত সাংবাদিকতা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও উঠে এলো র্যালির তথ্য ঃ
গোলাপবাগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সাংবাদিক নিজের ফেসবুক পোস্টে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করা পলাতক তারেক রহমান যেন নেতা হয়ে ফিরছেন এমন কাল্পনিকতাও ছড়িয়েছেন। হাজার হাজার জমায়েতের কথা বলে মূলত সমাবেশটিকে আরও মহৎ করে দেখানোর চেষ্টা ছিল।
এছাড়া হাসিনা ভোট চোর স্লোগান ব্যবহারও ছিল ইচ্ছাকৃত নোংরামি। তারা ভেবেছিল আন্দোলনের বসন্ত দেখানো হবে এই সমাবেশ থেকে। এছাড়া বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ ছিল আরেকটি প্রচেষ্টা।
মহিলা লীগ সম্মেলনে জনতার ঢল, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারে বিএনপির অনিচ্ছার কারণ ছিল বিদেশী সমর্থন ও মিডিয়া প্রচারর পাওয়া। এছাড়া তাদের মধ্য ছিল দুরভিসন্ধি। এর কয়েকদিন পরেই ১৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বার্ষিক সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুব মহিলা লীগ। যুবলীগ কর্মীদের মতে, সম্মেলনে যোগদানকারী নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বিএনপির চাইতে অনেক বেশি ছিল। ফলে উদ্যানের প্রয়োজন ছিল। তারা বলেছে, যুব মহিলা লীগ সম্মেলনের সমাবেশে যে জমায়েত হয়েছে তা বিএনপি করতে সক্ষম নয়। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রিসোর্ট শহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে গোলাপবাগের সমাবেশের বিপরীতে অনেক বেশি জনসমাগম ছিল। আমরা এমন সব সমাবেশের ড্রোন ফুটেজ সম্বলিত মিডিয়া রিপোর্ট দেখেছি। সেগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতিনিধিদের দেখাতে পারি। বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে জোর দিয়েছিল কারণ এটি প্রকৃত জমায়েত আড়াল করবে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যবসায়িক এলাকা হওয়ায় সাধারণ দর্শনার্থীদেরও সমাবেশে অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখানো সহজ হতো। গোলাপবাগে বিএনপির মিছিলের পূর্বে জেলায় কয়েকজনের সমাবেশ বাস্তবে মিথ্যার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। মূলত তারা দেখাতে চেয়েছে বাংলাদেশে বিরোধী দলের সমাবেশ করার অধিকার নেই – এবং তাই গণতন্ত্র নেই। কিন্তু এসব সমাবেশ যেভাবে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে ও বাধাহীনভাবে করতে পেরেছে সেটি তাদের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। নয়া পল্টনের মতো ব্যস্ত ব্যবসায়িক এলাকায় সমাবেশ করতে জোর করার অন্যতম কারণ ছিল সেখানে সহিংসতা করা সহজ। কোন হট্টগোল হলে পুলিশ তা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কারণ বিএনপি সবসময় এমন সমাবেশ থেকেই সহিংসতা ঘটায়। এছাড়া লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ যেমন অক্সফোর্ড স্ট্রিট বা পিকাডিলি সার্কাসে সমাবেশের অনুমতি দেবে না। তেমনই পুলিশ জোর দিয়ে পল্টনে সমাবেশ না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেটি করার জন্য।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাসঃ এই স্থানটি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এখানে অনুষ্ঠিত জনসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৯০ সালে তার মেয়ে সামরিক জান্তাকে পতনের জন্য বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা করেছিলেন। বিএনপি যদি এমন ভান করে যে তারা ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, তাহলে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহার করতে কেন পিছপা হবে?
জবাবের জন্য রকেট বিজ্ঞান বোঝার দরকার নেই। তারা কোনোভাবেই হাজার হাজার জমায়েত জড়ো করতে পারে না। এ কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডাকলে সেটি ব্যর্থ প্রমাণিত হতো।
ব্যারাকে জন্ম নেওয়া ও অভিজাতদের পরিচালিত একটি দলের জন্য, গণসংহতি শিল্প সহজে আসে না। এ কারণেই বিএনপি ও তার মিত্ররা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতি আগ্রহী। তবে এই ডিসেম্বরে মার্কিনরা নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ বিএনপিকে রাস্তা থেকে সরকার গড়তে যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে দিত সেটিও এ কারণে ব্যর্থ হয়েছে।