নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ঘন কুয়াশাকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে লালবাতি সিগন্যাল আগেভাগে দেখতে না পাওয়ার এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টায় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন রেলওয়ের মহাপরিচালক। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও অনুসন্ধান করে প্রাথমিকভাবে ঘন কুয়াশার কারণেই চালক সিগন্যাল দেখতে পাননি বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
শামছুজ্জামান বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি ৬০-৬৫ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। ঘন কুয়াশার কারণে চালক লাল সংকেত সিগন্যাল দেখতে পাননি। তূর্ণা নিশীথার চালক যখন সংকেত দেখতে পান, তখন ইর্মাজেন্সি ব্রেক করেন। ট্রেনের গতিবেগ ২০ কিলোমিটারে নেমে আসলেও পুরো গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমরা স্পিড রেকর্ডারও পরীক্ষা করে দেখেছি। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পরও ঘন কুয়াশা দেখেছি আমি। তাই আমরা মনে করি, ঘন কুয়াশার কারণেই মূলত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে মন্দনাগ রেল স্টেশনের মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী বলছেন, আউটার ও হোম দু’জায়গাতেই তূর্ণাকে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল।
রেলের মহাপরিচালক যে সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন, সেটি হোম সিগন্যাল। স্টেশন মাস্টারের কথা অনুযায়ী চালক দুটা সিগন্যালই মিস করেছেন। যখন হোম সিগন্যাল দেখেছেন, ইঞ্জিনের গতি ৬০-৬৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ২০ কিলোমিটারে নামিয়ে আসেন চালক।
রেলওয়ে স্টেশন, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তূর্ণা নিশীথা গতকাল রাত ২টা ৪৮ মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাত্রা করে। ট্রেনটিকে আউটারে থামার জন্য সংকেত দেওয়া হয়। আর উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করার পথে ট্রেনটিকে মেইন লাইন ছেড়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেওয়া হয়। উদয়নের ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটির মাঝামাঝি ঢুকে পড়ে। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পরে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটির চালক তাছের উদ্দিন ইঞ্জিন চালু রেখে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় নিহত হন ১৬ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমান (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী কুলসুম (৪০), সদর উপজেলার উত্তর বালিয়া গ্রামের বিল্লাল মিয়াজির মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৫), হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ ঈশানপুর গ্রামের মইন উদ্দিনের স্ত্রী কাকলী আক্তার (২০) ও মরিয়ম বেগম (৬); হবিগঞ্জের সৈয়দাবাদ এলাকার আজমত উল্লাহের ছেলে রিপন মিয়া (২৫), সদর উপজেলার বাহুলা গ্রামের ইয়াছিন আরাফাত (১২), চুনারুঘাট উপজেলার তীরেরগাঁও গ্রামের সুজন আহাম্মেদ (২৪), বানিয়াচং উপজেলার মদনমুরক গ্রামের মো. আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জ পৌরসভার আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা ও হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), বানিয়াচং উপজেলার বড়বাজারের মো. সোহেলের মেয়ে আদিবা (২), চুনারুঘাট উপজেলার আহমাদাবাদ গ্রামের আবদুল ছালামের স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৪১); মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গাজীপুর গ্রামের জাহেদা খাতুন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহেল রানার মেয়ে সোহামনি (৩), নোয়াখালীর মাইজদীর শংকর হরিজনের ছেলে রবি হরিজন (২৩) এবং অজ্ঞাত ৪১ বছর বয়সী এক নারী।
এই দুর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।