ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৬

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

* সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
* ৮ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল শুরু
* রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্পীকারের শোক
* তূর্ণা নিশীথার চালক বরখাস্ত, পাঁচ তদন্ত কমিটি
* নিহতদের পরিবার পাবে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ভোর রাতে দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথার মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি শ্যামলকান্তি দাশ জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দশ জনের মৃত্যু হয়। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে আরো ছয় জন মারা যায়। আহত অর্ধশতাধিক যাত্রীকে কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে উদয়ন এক্সপ্রেস যাচ্ছিল চট্টগ্রামে। আর তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিল ঢাকায়।
তূর্ণা নিশীথার চালকের অবহেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা।
মিয়া জাহান বলেন, মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিং হচ্ছিল। সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন মেইন লাইন থেকে লুপ লাইনে প্রবেশ করছিল।
ট্রেনের নয়টি বগি লুপ লাইনে চলে যাওয়ার পর দশম বগিতে হিট করে তূর্ণা নিশীথা। ওই ট্রেনের লোকোমাস্টার সিগন্যাল অমান্য করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি।
সংঘর্ষের পর তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি উদয়নের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এর মধ্যে দুটি বগি ভীষণভাবে দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেখানে আরও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকর্মীরা।
দুর্ঘটনার পরপরই রেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট এবং পুলিশ সদস্যরাও যোগ দেন।
দুর্ঘটনাস্থলের কাছে বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ে খোলা অস্থায়ী ক্যাম্পে দশ জনের লাশ রেখেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এছাড়া কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দুইজন এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালে একজনের মৃতদেহ রয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার হবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এছাড়া নিহতদের মরদেহ দাফনে সহযোগিতার জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আবদুস সামাদ নামে একজন। তিনি জানান, তার বাবা-মা ছিলেন উদয়নের যাত্রী, সিলেট থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার বাবার ফোন থেকে এক লোক কল করে দুর্ঘটনার খবর দেয়। সামাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে জানতে পারেন, তার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আহত যাত্রী বলেন, তাদের বগির অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজ হয় আর তিনি আসন থেকে ছিটকে পড়ে যান।
পরে দেখি ট্রেন একবারে ছিন্নভিন্ন হইয়্যা গেছে। খালি চিৎকার আর চিৎকার মানুষের।
হাসপাতালে ভর্তি আরেক কিশোর জানায়, মা, ভাই, দুই বোন আর নানীকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল তারা। দুর্ঘটনায় নানী আর এক বোন পায়ে আঘাত পেয়েছে। হট্টগোলের মধ্যে মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি উদয়নের এক যাত্রী বলেন, তার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে, সিলেট গিয়েছিলেন মাজার জিয়ারত করতে। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়েছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে তিনটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলপথমন্ত্রী। রেলওয়ে সচিব মোহাম্মদ মোফাজ্জল করিম, জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, ৬০ বিজিবি সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনও ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন দুটি সরিয়ে লাইন আবার চলাচলের উপযোগী করতে লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ট্রেন চলাচল শুরু হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পরপরই লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। উদয়ন এক্সপ্রেস সামনের দিকের অক্ষত নয়টি বগি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। আর মূল লাইন মেরামত শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে তূর্ণা নিশীথা ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ট্রেনচালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন চালকদের যেন আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর ট্রেন চালাতে দেয়া হয়। এছাড়াও রেল সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) গভর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এ ব্যাপারে আমাদের রেলে যারা কাজ করেন তাদের সতর্ক করা উচিত। সেই সঙ্গে যারা রেলের চালক তাদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক জানি না কেন এই শীত মৌসুম আসলেই কিন্তু আমাদের দেশে নয় সারাবিশ্বেই রেলের দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে।
রেল যোগাযোগ নিরাপদ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ সবচেয়ে নিরাপদ এবং আমরাও এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা নতুন রেল সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি পণ্য পরিবহন মানুষ পরিবহন সবক্ষেত্রেই রেল নিরাপদ। উদ্ধার তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রেলমন্ত্রী ওখানে চলে গেছেন উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হচ্ছে।
৮ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল শুরু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে প্রায় আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো সরিয়ে মূল লাইন মেরামত করে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। বেলা পৌনে ১১টায় আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথার মধ্যে সংঘর্ষ হলে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন অর্ধশতাধিক যাত্রী।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে উদয়ন এক্সপ্রেস যাচ্ছিল চট্টগ্রামে। আর তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিল ঢাকায়। মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিংয়ের সময় সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন মেইন লাইন থেকে লুপ লাইনে প্রবেশ করছিল।
ট্রেনের নয়টি বগি লুপ লাইনে চলে যাওয়ার পর দশম বগিতে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। ওই ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) সিগন্যাল অমান্য করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি।
সংঘর্ষের পর তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি উদয়নের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এর মধ্যে দুটি বগি ভীষণভাবে দুমড়ে মুচড়ে যায়। চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেট ও ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
মিয়া জাহান জানান, দুর্ঘটনার পরপরই লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
উদয়ন এক্সপ্রেস সামনের দিকের অক্ষত নয়টি বগি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। আর মূল লাইন মেরামত শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে তূর্ণা নিশীথা ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, তূর্ণা নিশীথার ইঞ্জিন সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বগিতে তেমন ক্ষতি হয়নি। আরেকটি ইঞ্জিন লাগিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
এদিকে এ দুর্ঘটনার ফলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেটের পথে বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে।
ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস সকাল ৭টায় নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও রাস্তায় আটকে থাকে দীর্ঘ সময়। চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য ট্রেনের সময়সূচি পিছিয়ে দেওয়া হয়।
পূর্ব রেলের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) আনসার হোসেন বলেন, আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছাড়েনি। সাড়ে ১২টার মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রাও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকাগামী মেইল ট্রেন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে সকাল ১০টায়।
রেল দুর্ঘটনায় তূর্ণা নিশীথার চালক বরখাস্ত, পাঁচ তদন্ত কমিটি : ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের চালককসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন।
পাশাপাশি দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের পক্ষ থেকে মোট চারটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেল ক্রসিংয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথার মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি শ্যামলকান্তি দাশ জানান।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং পরে হাসপাতালে আরো ছয় জন মারা যায়। অর্ধশতাধিক আহত কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমাস্টার তাহের উদ্দিন, সহকারী লোকো মাস্টার অপু দে ও গার্ড আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আমরা মনে করছি, ড্রাইভারের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।তারপরও রেল মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি, রেলওয়ে থেকে একটি এবং জনপ্রশাসন থেকে একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।
দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে উদয়ন এক্সপ্রেস যাচ্ছিল চট্টগ্রামে; আর তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিল ঢাকায়। মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিংয়ের সময় সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন মেইন লাইন থেকে লুপ লাইনে প্রবেশ করছিল।
ট্রেনের নয়টি বগি লুপ লাইনে চলে যাওয়ার পর দশম বগিতে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। ওই ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) সিগন্যাল অমান্য করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, ওই রেলের লাইনে কোনো ত্রুটি ছিল না। ওই জায়গায় ট্রেন চলে সিঙ্গেল লাইনে। তূর্ণা নিশীথা বিরতিহীন ট্রেন। সে কারণে ওই স্টেশনে তূর্ণাকে পাস দিতে গিয়ে উদয়নকে লুপ লাইনে প্রবেশের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রেনটি লুপ লাইনে ঢোকার সময় তূর্ণা নিশীথা উদয়নকে ধাক্কা দেয়।
তখনও ওই ট্রেনের চারটি বগি প্রধান লাইনে ছিল। তাকে পাস দিয়েছে তার সিগন্যাল দেখার কথা। কিন্তু সে দেখেনি। আমরা মনে করছি, এটা (দুর্ঘটনা) চালকের অসচেতনতার জন্য হয়েছে।
পাঁচ তন্ত কমিটি : পাঁচটি তদন্ত কমিটির মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি, সরকারি রেলপরির্দকের দপ্তরের একটি ও জেলা প্রশাসনের একটি রয়েছে।
এর মধ্যে রেলওয়ের একটি কমিটির প্রধান রেলওয়ের মহাপরিচালক। বাকির দুটোর মধ্যে একটির প্রধান ডিটিও এবং আরেকটির প্রধান সিইএম (পূর্ব)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসনের কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক।
রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে করা তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পূর্ব রেলের বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার বা ডিটিও নাসির উদ্দিনকে। এই কমিটির সদস্য পূর্ব রেলের বিভাগীয় সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী-১।
বিভাগীয় প্রধান পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সিওপিএস নাজমুল ইসলামকে। কমিটির সদস্যরা হলেন- পূর্ব রেলের প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশলী মিজানুর রহমান, প্রধান সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীনকে।
মন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাজ শেষ করতে কিছুদিন দেরি হবে। মোটামুটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে।
ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে প্রায় আট ঘণ্টা বন্ধ থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল। দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো সরিয়ে মূল লাইন মেরামত করে বেলা পৌনে ১১টায় আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পীকারের শোক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। তিনি স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরেক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি দুর্ঘটনায় আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই ভাবে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন
নিহতদের পরিবার এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর আহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এবং রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চারটিসহ মোট পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে। এরপর কারণ জানা যাবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *