নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়নি জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির এই চিঠি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া কোনো কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, ‘একটি শব্দও’ বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে সেখানে নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে, বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কি-না।
সোমবার সচিবালয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিএনপির পত্র’ দেয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের সিগনেচারে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া হয়েছে। যেটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া গ্রহণ করেছেন। সেই চিঠি পড়লে আপনারা দেখতে পাবেন…বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে কোনো জায়গায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নেই। একটি শব্দও বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে সেখানে নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে, বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কি না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি নেতারা) যে সবসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কথা বলেন, শারীরিক বিষয়-আশায় নিয়ে কথা বলেন, সেগুলো নিছকই জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কি না, সেই প্রশ্ন জাগে। না কি খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বাইরে রাজনীতি করে জনগণের সহানুভূতি আদায় করতে চায়, কোনটি-সেই প্রশ্ন জাগে।
বিএনপি চিঠিটি মূলত দিয়েছে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, যে চুক্তিগুলো হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে জনগণ জানে না। অথচ এই সফরে কোনো নতুন চুক্তি হয়নি।
‘এই সফরে যেগুলো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা এমওইউ এবং স্ট্যান্ডার্ড অব অপারেশনাল প্রসিডিউর বা এসওপি। শুধুমাত্র লাইন অব ক্রেডিট, যেটা ভারত সরকার আমাদেরকে দিয়েছে, সেই এগ্রিমেন্টের আলোকে এক্সিম ব্যাংক ঢাকায় একটি অফিস খুলবে। সেই মর্মে চুক্তি হয়েছে, অন্য কোনো চুক্তি সেখানে হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, অথচ বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে চুক্তি। বিএনপির মতো একটি দল এবং বিএনপির মহাসচিব তারা চুক্তি ও এমওইউ-এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না, এটি দেখে আমার আশ্চর্য লাগছে।
তিনি বলেন, তারা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী এগুলো রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার বিষয় রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে রাষ্ট্রপতিকে সমস্ত বিষয়গুলো অবহিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ভারত সফরের বিষয় বিস্তারিত তথ্য জনগণকে অবহিত করেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদেও সব বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেছেন।
বিএনপির যে চিঠি এটি হচ্ছে অন্তঃসারশূন্য চিঠি এবং এই চিঠিতে তারা এমওইউ ও চুক্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটি স্পষ্ট হয়েছে’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যেসব প্রশ্ন তুলেছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী বারবার ব্যাখ্যা করেছেন, সেটা তারাও জানে। বিএনপির এই চিঠি দেয়া একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া কোনো কিছু নয়। তারা যে ভারতবিরোধী রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসেনি, সেটি বোঝানোর জন্য তারা মূলত এই চিঠিটি দিয়েছে। অন্য কোনো কিছু নয়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুটি সমুদ্রবন্দর ভারত ব্যবহার করবে আমাদের রেভিনিউ দিয়ে। এটি আমাদের অর্থনীতির সহায়ক, এটি তারা বোঝে (বিএনপি নেতা) না তা নয়। তারা মূর্খ বলে আমরা মনে করি না কিন্তু তাদের বক্তব্যগুলো মূর্খের মতো।
জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দুবার ভারত সফর করেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে সাতটি চুক্তি হয়েছে। সাতটি চুক্তি করে আসার পর বেগম জিয়া কি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন? করেননি। সংবাদ সম্মেলন করে কি জনসম্মুখে প্রকাশ করেছিলেন? করেননি। সংসদে বক্তৃতা করে কি এগুলো বলেছিলেন? সেটাও বলেননি।
তিনি বলেন, নিজেরা এগুলো করেননি অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারা যে প্রসঙ্গগুলোর অবতারণা করেছেন সবগুলোই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক এবং এসওপিগুলো করে এসেছেন তা প্রতিটি দেশের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে।
আমাদের নীতি হচ্ছে আমাদের স্বার্থকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে, কোনো অবস্থাতে আমাদের স্বার্থ আদায় করার ক্ষেত্রে (আমরা) পিছপা হই না, হব না। সেই নীতির আলোকের প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করছেন’ বলেন হাছান মাহমুদ।