হঠাৎ ১১ জেলায় বাস বন্ধ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ‘বিরোধিতায়’ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চালানো বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ঘোষণার পর হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১১টি জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন জানান, কোনো কারণ নেই স্বেচ্ছায় পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। জেলাগুলো হচ্ছে- রাজশাহী, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা বলে জানিয়েছেন তিনি।
শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না জানিয়ে মোর্তজা বলেন, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদেরকে ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে। সরকার সমাধানের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় শ্রমিকরা রোববার দুপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে আগের আইন কঠোর করে এই আইন করা হয়। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।
২০১৮ সালে পাশ হওয়া এ আইন গত পহেলা নভেম্বর প্রজ্ঞাপনের জারি করা হয়। তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই এর প্রবল বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। অন্য দিকে আইনটি সম্পর্কে সবার স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণ দেখিয়ে আরও দুই সপ্তাহ পর তা কার্যকর করে সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় এই কর্মবিরতি শুরু করে।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, ১৪ নভেম্বর যশোরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে সড়ক আইন ২০১৮ সংশোধনের দাবি করা হয়। এরপর রোববার সকাল থেকে যশোর ১৮ রুটের শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
তবে যশোর-বেনাপোল ও যশোর-সাতক্ষীরার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও প্রাইভেট, মাইক্রো, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানবাহন এবং অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করায় সোমবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ -মাগুরা, ঝিনাইদহ- চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ হাটফাজিলপুর ও ঝিনাইদহ–হরিণাকুন্ডু রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাড়ায় চালিত মাইক্রো বাস ও কার চালকরাও কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানা গেছে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হামানুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের অঘোষিত কর্ম বিরতিতে লোকাল রুটগুলোতে বাস মিনিবাস চলছে না। তবে দূর পাল্লার রুটে যান বাহন চলাচল করছে।
অন্যদিকে মোটর শ্রমিকরা রাজশাহী নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এবং ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ডাকা কোনো ধর্মঘট নয়। সকাল থেকে শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন। রাজশাহীর মালিকদের বাস দু-একটি করে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বাইরের জেলার মালিকদের বাসগুলো রাজশাহী আসার পর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাস চলছে না রাজশাহী-নওগাঁ রুটে। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়েও শহর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস বন্ধ করেছেন। এটা সমর্থন করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সমর্থন করি না। প্রতিবাদ জানানোর আরও ভাষা আছে। এভাবে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলা আমি সমর্থন করি না।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *