নিজস্ব প্রতিনিধি : কক্সবাজারে সড়কে একই পরিবারের ৬ টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ার ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা নয় বরং ইচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় রবিবার ১১ জুন পিকআপ চালক সাহিদুল ইসলমা ওরফে সাইফুল(২৭) কে আমৃৃত্যু কারাদন্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। বয়স বিবেচনায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় নাই।
এ ধরনের মামলার তদন্ত ও রায় বাংলাদেশে এটাই প্রথম।
প্লাবন সুশীল (২২) বাদী হয়ে তার ৬ ভাই ও বোনকে হত্যা করার ঘটনায় গাড়ীর চালক, চালকের সহকারী ও মালিকের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানার মামলা নং ১৫, তারিখ ০৮/০২/২০২২ ইং, ধারা-সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৫/৯৮/১০৫ দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ তদন্ত করে। এটি চাঞ্চল্যকর মামলা হওয়ায় তদন্ত চলমান অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।
পিবিআই কক্সবাজার জেলার তদন্তকালে জানা যায় যে, গত ০৮/০২/২০২২ তারিখ বাদীর মৃত পিতার দশম দিনের পূজা শেষে ইং ০৮/০২/২০২২ সালে সকাল অনুঃ ৬ টার সময় তারা মহাসড়ক পার হওয়ার জন্য বাদী প্লাবন সুশীল ও বাদীর বোন মুন্নী সুশীল রাস্তা পার হওয়ার জন্য রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান করেন এবং ভিকটিম মৃত ডাঃ অনুপম সুশীল, চম্পক সুশীল, নিরুপম সুশীল , দিপক সুশীল এবং স্মরন সুশীল ৬। রক্তিম সুশীল বাদীর পিছনে অনুঃ ৩/৪ ফুট পুর্বে চলাচলের কাঁচা রাস্তায় উত্তর থেকে দক্ষিনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে ছিলেন। বাদীর বোন ভিকটিম হীরা সুশীল তাদের দক্ষিনে অবস্থান করছিলেন।
তখন চট্টগ্রামের দিক হতে কক্সবাজার গামী ঘাতক পিকআপ (চট্রমেট্রো ন ১১-৪৭৪০) পিকআপ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে রাস্তার বাঁকে এসে গাড়ী নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে বাদীর ভাই ও বোন ভিকটিম ডাঃ অনুপম সুশীল, চম্পক সুশীল, নিরুপম সুশীল , দিপক সুশীল, স্মরন সুশীল এবং রক্তিম সুশীল সর্বপিতা-মৃত সুরেশ চন্দ্র সুশীল, সাং-সরিষা কাটা, রিংভং, মালুমঘাট, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজারদেরকে চাপা দিয়ে মূল রাস্তার বাহিরে রাস্তার পূর্ব পাশে আনুমানিক ৫৪ ফুট দুরে বনবিভাগ,কক্সবাজার ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃৃষি সংস্থা কর্তৃক স্থাপিত সচেতনমুলক সাইন বোর্ডের লোহার খুঁটিতে আঘাত করে ।
পিকআপ গাড়ীটির সামনের বাম্পারের সাথে ভিকটিম ১। ডাঃ অনুপম সুশীল ২। চম্পক সুশীল ৩। নিরুপম সুশীল ,৪। দিপক সুশীল আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মুল রাস্তার বাহিরে আহত অবস্থায় কাঁচা রাস্তায় পড়ে থাকে। ভিকটিম স্মরন সুশীল ও রক্তিম সুশীল ধাক্কা লেগে জঙ্গলের মধ্যে পড়ে।
অভিযুক্ত সাহিদুল ইসলাম @ সাইফুল ইচ্ছাকৃতভাবে পালানোর উদ্দেশ্যে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার না করে বরং দুুর্ঘটনাজনিত অপরাধ হতে নিজেকে আড়াল করার জন্য গাড়ী পিছনের দিকে চালনা করে মুল রাস্তার বাইরে মাটির রাস্তায় পড়ে থাকা ভিকটিম অনুপম সুশীল,মৃত নিরুপম সুশীল,মৃত চম্পক সুশীল,মৃত দিপক সুশীলদেরকে পুনরায় গাড়ী চাপা দিয়ে হত্যা করে এবং মাটির রাস্তায় দক্ষিন দিকে দাড়ানো জখমী হীরা সুশীলকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
মৃত্যুর সম্ভাবনা অবধারিত জেনেও সে নিজ স্বার্থে সজ্ঞানে পুনরায় গাড়ী চাপা দিয়ে চার জন ভিকটিমকে খুন করেছে।কাজেই এ ক্ষেত্রে -Beyond all reasonable doubt/ “যুক্তি সঙ্গত সকল সন্দেহের বাইরে” এটিই প্রমানিত হয় যে, অভিযুক্ত ড্রাইভার সাহিদুল ইসলাম @ সাইফুল এর উদ্দেশ্যেমুলক আঘাতের ফলে তাৎক্ষনিক ভাবে ৪ জন ভিকটিম ডাঃ অনুপম সুশীল, চম্পক সুশীল, নিরুপম সুশীল এবং দিপক সুশীল এর মৃত্যু ঘটেছে।
সাজাপ্রাপ্ত ড্রাইভার সাহিদুল ইসলাম @ সাইফুল দন্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারার অপরাধ ও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬৬/৮৭/৯৫/১০৫ ধারায় গত ৯ নভেম্বর ২০২২ পৃথক পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
ঘাতক পিকআপের মালিক অভিযুক্ত মাহমদুল করিম @ বাদল ঘাতক পিক আপের অনভিজ্ঞ ড্রাইভার সাহিদুল ইসলাম @ সাইফুল এর ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও জ্ঞাতসারে তাকে ফিটনেস,ট্যাক্সটোকেন,রুট পারমিট বিহীন গাড়ীটি চালাতে দেয়ায় তার বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬৬/৭৫/৭৬/৭৭/৯৫/৯৯/১০৫ ধারার অপরাধে অভিযোগপত্র দাখিল ও দুর্ঘটনা সংঘটনকারী পিক আপের মালিক অভিযুক্ত মাহমদুল করিম @ বাদল এর প্রতিনিধি ও ঘাতক পিকআপের চালকের সহকারী অভিযুক্ত মোঃ তারেক দুঘটনায় জখম প্রাপ্ত ভিকটিমদের উদ্ধার বা চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পালিয়ে যাওয়ায় উক্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৫ ধারায় গত ৯ নভেম্বর ২০২২ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর মামলাটির বিচার চলছে।