ধরপাকড়ের বেড়াজালে বিএনপির আন্দোলন

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই রাজপথে কর্মসূচিহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। হামলা-মামলা ও পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে নির্বাচনের আগে আগেই ঘরকুনো হয়ে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে ‘নিশিরাতের নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করলেও এর প্রতিবাদে বড় ধরনের কোন সভা-সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। নির্বাচনের আগে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী হলেও নির্বাচনের পর তাকে মুক্তির জন্য জোরালো কোনো কর্মসূচি এখনও দিতে পারেনি বিএনপি।
দিনে দিনে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বর্তমানে হাত-পা নাড়াতে পারছেন না বলে তার সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতেও দলীয় প্রধানের মুক্তির ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া ও ঘরোয়া প্রোগ্রাম নিয়েই সময় কাটিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
অনেক দিন ধরেই বিএনপি নেতারা বলছেন খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে না, তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথে আন্দোলন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদসহ দলটির নীতি নির্ধারণী অনেক নেতাই বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।
কিছুদিন যাবত আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা ভাবছিল বিএনপি। বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে চাইছে দলটি। গুঞ্জন আছে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। প্রয়োজনে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিন্ধান্ত নেবেন তিনি।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেশকিছু প্রদক্ষেপও নেয় বিএনপি। ইতিমধ্যে দলের অঙ্গ সংগঠনসহ কয়েকটি শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর থেকে তাদের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মহড়া ও মধুর ক্যান্টিনে বসছেন। একাধিকবার হামলার শিকার হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতাদের নিয়মিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
এর মধ্যে গত রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশের অনুমতি না নিয়ে আগামীতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে কিছুটা অগ্রসর হতে না হতেই ফের ছন্দপতনের আশঙ্কায় বিএনপি। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়। যদিও তাদের বেশির ভাগ আদালতে জামিন পেয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হাইকোর্টের সামনে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকনকে আটক করা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই মামলায় হাইকোর্ট এলাকা থেকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এই নেতাদের ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাজপথের আন্দোলনে নামার আগেই হঠাৎ মামলা ও ধরপাকড়ের ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কতটুক অগ্রসর হতে পারবে তা জানার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *