পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনে লাগামহীন দূর্নীতি

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

এম এ স্বপন : পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ক্ষমতাধর কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক মনারুল ইসলাম। এই দারিদ্রসহ প্রতিষ্ঠানের তিনটি পদে বহাল আছেন। এই দায়িত্বসহ প্রতিষ্ঠানের তিনটি পদে বহাল আছেন। প্রতিষ্ঠানের একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগে পিডিবিএফের ওই কর্মকর্তা অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ যে তার দূর্নীতির মহা উৎসবে পরিনতি হয়েছে। পিডিবিএফের কর্মকর্তারা জানান, লাগামহীন দূর্নীতি করেই মনারুল প্রতিষ্ঠানের বিধি উপেক্ষা করে অল্প সময়ের মধ্যেই পদোন্নতি এবং একাধিক পদে থাকার সুযোগ পেয়েছেন।
পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, দূর্নীতির কারণে চাকরিচ্যূত হন এমডি মাহবুব। আর সেই দূর্নীতির একই ধারা ধরে রেখেছেন তার শিষ্য মনারুল। মাহবুব থাকার সময় থেকে এ পর্যন্ত গত ছয় বছরে ঋণ ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ নানাভাবে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দূর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা হিসেবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি। পিডিবিএফের ওই কর্মকর্তার দূর্নীতি নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগও করা হয়েছে।
মনারুল ইসলাম যুগ্ম পরিচালক (নীতি ও পরিকল্পনা) যুগ্ম পরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশিক্ষণ খাতে দূর্নীতি : ২০১৫ জানুয়ারী থেকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫ ২০১৬ সালে প্রতিটা উপজেলায় ৮ ব্যাচ, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালে প্রতিটা উপজেলায় ১২ ব্যাচ, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালে প্রতিটা উপজেলায় ৩০ ব্যাচ করে, মোট ৩টি অর্থ বছরে প্রতিটি উপজেলায় ৫০ ব্যাচ করে ১০০টি উপজেলায় ৫ বাজার ব্যাচ প্রশিক্ষণ সম্পাদিত হয়। প্রতি ব্যাচ প্রশিক্ষণ বাজেট ছিল ২৫ হাজার একশত টাকা। তিনি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে খরচের নাম করে প্রতিটা অঞ্চলের উপ পরিচালকের মাধ্যমে ব্যাচ প্রতি ১ হাজার টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। উক্ত টাকা গুলো তিনি ইউডিবিওদের মাসিক সম্মেলন সহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের সময় অঞ্চল পযায়ে গিয়ে নগদে, প্রধান কার্যালয়ের মতিয়ার রহমান ও মুনতাসির মামুনের (মামুনের ভাতিজা) ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এবং কিছু টাকা এস.এ পরিবহনের মাধ্যমে টাকা গুলো হাতিয়ে নেন।
সম্প্রসারণ প্রকল্পের বাইসাইকেল ক্রয়য়ে দূর্নীতি : প্রকল্পের ডিপিপি মোতাবেক মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের জন্য ৬০০টি বাইসাইকেল ক্রয়ের সংস্থান ছিল। দূর্নীতিবাজ মনারুল ইসলাম তার ঘনিষ্ট এক বন্ধুকে কাজ দেয়ার জন্য অফিস মেশিন অটোমেশিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে রাতারাতি সিপিটিইউতে ই-জিপির জন্য নিবন্ধন করান। যার বাইসাইকেল আমদানী বা ক্রয়-বিক্রয়ের এ ধরনের ব্যবসার সাথে যার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি ই-টেন্ডারিং করে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান অর্থ্যাৎ অফিস মেশিন অটোমেশিনকে ই-টেন্ডারিং এ অংশ গ্রহণ করান এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে আতাত করে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার বাজার মূল্যের সরবরাহ করে সাইকেল প্রতি তিনি ৫ হাজার ৩৭৫ টাকা করে আত্মসাৎ করেন। কর্মীরা নিতে না চাইলেও চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে বাইসাইকেল নিতে বাধ্য করান এবং এখান থেকে মনারুল ইসলাম সরকারি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
মেয়াদ উর্ত্তীন্ন প্যানেল থেকে জনবল নিয়োগ করে অর্থ উপার্জন : পিডিবিএফ সম্প্রসারণ প্রকল্পের জনবল নিয়োগের প্যানেলের মেয়াদ ছিল ২০১৬ জুন পর্যন্ত জুন পর্যন্ত। উক্ত মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের আগোচরে নিজের উচ্ছা অনুযায়ী তিনি ২০১৭ সালে ৩৮ জন মাঠ সংগঠক নিয়োগ দেন। প্রতিজনের নিকট থেকে ৩ লাখ করে টাকা গ্রহণ করে তিনি উক্ত নিয়োগ দেন। এক্ষেত্রে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি বা মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। মদন মোহন সাহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্পের জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এভাবে মনারুল ইসলাম এবং মদন মোহন সাহা মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে বিধিবর্হিভুক্ত ভাবে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ১১৪ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন করেন।
বিভাগীয় মামলায় প্রমাণিত আত্মসাৎকারী ও নি¤œ পারফরম্যান্সধারী কর্মীকে অর্থের মাধ্যমে প্রকল্প থেকে পিডিবিএফ এ অন্তভুক্তকরণ : নাটোর অঞ্চলের চারঘাট কার্যালয়ে কর্মরত অর্থ আত্মসাৎকারী মাঠ সংগঠক (পুঠিয়া কার্যালয়ে কর্মকালীন সময়ে আত্মৎসা) শাবনুর আক্তার এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তদন্তে আত্মসাৎ প্রমাণিত হলেও বিষয়টি কোন নিস্পত্তি না করে শাবনুর আক্তারকে এবং নি¤œ পারফরম্যান্সধারী কর্মী শাহীন আলীকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তনের পরপরই তিনি এইচআরএম বিভাগের যুগ্ম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর অতি গোপনে ৫ লক্ষ টাকার বিভাগের যুগ্ম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর অতি গোপনে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়মবহির্ভূত ও অনৈতিভাবে ২১ আগষ্ট ২০১৯ ইং তারিখে উক্ত ০২ জন কর্মীকে প্রকল্প থেকে পিডিবিএফ এ অন্তর্ভূক্ত করেন।
মনারুল পদোন্নতি : মনারুল ইসলামও একইভাবে পদোন্নতি পেয়ে প্রতিষ্ঠানের বড় পদে এসেছেন। ২০০৯ সালে জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক (সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর) থেকে চার পদ ডিঙ্গিয়ে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পান। সেই পদ থেকে আবার হন যুগ্ম পরিচালক। মনারুলের সঙ্গে যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা এখনো উপজেলা পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন অনুযায়ী এক ব্যক্তি একাধিক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমনটি করে থাকে সেটা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। সরকারের উচিত তদন্ত সাপেক্ষে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) কে রক্ষা করার স্বার্থে মনারুল ইসলাম কর্তৃক শত টাকা দূর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী অর্থ লুটপাট ও আত্মৎসাতের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অশুহস্তক্ষেপ কামনা করেন পিডিবিএফ এর সকল কর্মকর্তারা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *