উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোথাও কোনও রকম অনিয়ম দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ কোনও নির্বাচনি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এসব বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
রোববার (১০ মার্চ) ৭৮টি উপজেলায় ভোট নেওয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। পাঁচ দফায় হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এটি প্রথম ধাপ।
নির্বাচনপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনি দয়িত্বে নিয়োজিত কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণে অনিয়ম হলে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতাকে দায়ী করা হবে। ওই কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করা হবে। অনিয়ম হলে সেখানকার ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে একটি স্থানীয় নির্বাচন। প্রার্থীরা যথেষ্ট তৎপর থাকেন। তারা সেভাবে প্রচার করেছেন, ক্যাম্পেইন করেছেন। এ ভোটার উপস্থিতির হার অনেক বেশি হবে বলে আমরা ধারণা করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে আপনারা জানেন যে, অল্প সময় ছিল এবং দিনটিও ছিল অত্যন্ত বর্ষামুখর। ইত্যাদি কারণে হয়তো উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। নতুন যে ওয়ার্ডগুলো ছিল যেখানে কাউন্সিলররা নির্বাচন করেছে, সেখানে কিন্তু উপস্থিতির সংখ্যা বেশি ছিল। কাজেই উপজেলা পর্যায়ে কিন্তু উপস্থিতি বেশিই থাকে।’
কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও নজির কি আছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একেবারে যে হয় নাই তা না। অনেক সময় বিভিন্ন সময়ে আমরা করেছি। স্পেসিফিক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এমন কোনও নিদর্শন দেখাতে পারবেন না যে, যেখানে কমিশন অত্যন্ত লিনিয়ান ছিল, নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত অবহেলা করেছে। এরকম আপনি লক্ষ্য করবেন না। সব সময় নির্বাচন কমিশন তার নিজের অবস্থানে রয়েছে।’
গতকাল শুক্রবার তিন উপজেলার ভোট বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিশন মনে করেছে যে, এখানে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন এ পর্যায়ে সম্ভব নয়। পরবর্তীতে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে যে, এই নির্বাচন বন্ধ করা প্রয়োজন।’
মোখলেছুর রহমান জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথমে ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। তার মধ্যে থেকে আদালতের আদেশে তিনটি এবং কমিশন তিনটি উপজেলার ভোট স্থগিত করে। আর তিনটি উপজেলার সব পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। সুতরাং রবিবার ৭৮টি উপজেলায় ভোট হবে।
এসব উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৮ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এসব উপজেলায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মোখলেসুর রহমান।