গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সম্মানে বিনা তেলে তৈরি সাওল ইফতার

Uncategorized ইতিহাস ঐতিহ্য কর্পোরেট সংবাদ ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক  :  শত শত বছরের তেলময় খ্যাদ্যাভ্যাসের বিপরীতে বিনা তেলে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ ও সুস্বাদু ’সাওল ইফতার’ আয়োজন করেছে সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ। বুধবার, ৩ এপ্রিল রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে ‘কাজল মিলনায়তনে’ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সম্মানে সাওলের ’ওয়েল ফ্রি কিচেন’-এর তৈরি ব্যতিক্রমী, অভিনব ও জনসচেতনতামূলক এ ইফতার।


বিজ্ঞাপন

মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সংযম সাধনের মাস রমজানে। কাটাছেঁড়া-রক্তপাত ছাড়া বিনা রিং, বিনা অপারেশনে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ ’জনস্বাস্থ্য আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে রমজানে বিনা তেলে ইফতার তৈরি করে থাকে। হৃদরোগ সৃষ্টির ১৫টি কারণের মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল। এরমধ্যে ভোজ্যতেল মহাঘাতক।


বিজ্ঞাপন

খাবারে ভোজ্যতেল পরিহার করতে পারলে হৃদরোগের, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অতিওজন, গ্যাস্ট্রিকসহ অনেক রোগের বিরাট ঝুঁকি দূর হয়ে যায়। ২০০৮ থেকে বিনা তেলে রান্না আর ২০০৯ সাল থেকে রমজানে সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ বিনা তেলে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ ও সুস্বাদু ’সাওল ইফতার’ সরবরাহ করছে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, আমি হলাম সাওলের ফেরিওয়ালা। সাওলের শুরু থেকে আমি এর সঙ্গে জড়িত। সাওলের সব কর্মসূচিতেই আমি নিয়মিত অংশ নেই। ২০০৯ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাওল যখন প্রথম বিনা তেলে তৈরি ইফতার বিক্রি শুরু করে, সেখানে আমি একজন বিক্রেতা ছিলাম। কাজেই আমি সাওলের ফেরিওয়ালা। বিশ্বসাহিত্য কেদ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সেই সাওল ইফতার বিক্রয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। সেখানে দেশের প্রধান প্রধান ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন, দেশের সব জাতীয় দৈনিক সেই খবর প্রকাশ করে এবং বিস্ময়কর ও অভিনব বলে অভিহিত করে। তিনি বলেন, অনেক প্রতিকুলতার পরেও বাড়িতে আমি তেল ছাড়া খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। আমার বাসায় রান্নায় তেলের মাত্রা অনেক কমিয়ে এনেছি।’

অভিনেত্রী, নাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক ফালগুনী হামিদ তার মজার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি জানান, একবার ল্যাবএইডে হার্টের রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তার তাকে বলেছিলেন, এখানে তো আপনাদের চিকিৎসা হবে না, কারণ আপনারা সাওলের লোক।’

দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আমরা বলি অমুকের তেল বেশি। আমাকে দেখলে বুঝবেন আনিসুল হকের তেল বেশি। কিন্তু ভাই যে তেল ছাড়া হয়ে গেল, বিপ্লবটা হবে কীভাবে! মোহন রায়হান একজন বিপ্লবী। মোহন রায়হানের বিপ্লব থামে না। তিনি দেশের জন্য বিপ্লব করতে রাজপথে নেমেছেন। মানুষের জীবনের মুক্তি জন্য বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন, এখন মানুষের হৃদয়ের (হৃদরোগ) মুক্তির জন্য তিনি বিপ্লব করছেন। এ দেশের একটি মানুষও যেন হৃদরোগে মারা না যায়, এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ুক। আমি মোহন রায়হানের এই সাওল আন্দোলনের সাফল্য কামনা করি।’

সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. লিয়াকত আলী বলেন, হৃদরোগের জন্য ভোজ্যতেল এক মারাত্মক ঘাতকের নাম। তাই হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে তেলবর্জিত লাইফস্টাইল তৈরি করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ মাইন্ড সেটাপ পরিবর্তনের বিষয়। আজকের খাবারগুলো খেয়ে একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না যে এগুলো তেল ছাড়া রান্না করা হয়েছে। সাওল একটি লাইফস্টাইল পরিবর্তনের আন্দোলন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা হৃদরোগহীন একটি জাতি তৈরি করতে পারবো।’

আইইডিসিআরের পরামর্শক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মোহন রায়হান ও আমি একসাথে অনেক পথ হেঁটেছি। রাস্তাঘাটে আন্দোলন-মারামারি করেছি। মোহন আগে যেমন বিপ্লবী ছিল, এখনো বিপ্লবই করছে। সাওল পদ্ধতি একটি বৈপ্লবিক চিন্তা। ডায়েবেটিস, ব্লাডপ্রেসার ও হৃদরোগ থেকে মুক্তির প্রধান পথ হলো লাইফস্টাইলের পরিবর্তন। মোহন তার রাজনৈতিক আন্দোলনের মতো জীবন যাপন পরিবর্তনের আন্দোলনেও সমানভাবে একাগ্র।’

সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, তেলে গাড়ির চাকা ঘোরে, মানুষের মন গলে। মোহন এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। কেবল খাদ্য থেকে তেল বর্জনের কথা বলেছে। মোহন সারা জীবন বহু কিছু বর্জনের আন্দোলন করেছে। এবার খাদ্য থেকে তেল বর্জনের আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে। রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে মোহন এখন স্বাস্থ্য রক্ষার আন্দোলন করছে। তার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি অনেক চেষ্টা করে খাবার থেকে পঞ্চাশ পারসেন্ট তেল বর্জন করতে পেরেছি।’

সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি বলেন, আমার হার্টের অপারেশনের তারিখ ঠিক হয়েছিল সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। যাওয়ার আগে আমি দেখা করতে যাই আমার বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের সঙ্গে। তিনি আমাকে মোহনের সাওল হার্ট সেন্টারের খোঁজ দেন। আমি সোজা সাওলে চলে আসি। সাওলের বিনা অপারেশনের চিকিৎসা নিয়ে আমি ছয় বছর হলো সুস্থ আছি।’

সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ও লেখক হোসেন আবদুল মান্নান বলেন, বিনা তেলে রান্না ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের এই কর্মসূচি আসলে একটি আন্দোলন। আমি তখন স্বাস্থ্য সচিব, মোহন রায়হানের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, সরকার যদি এই আন্দোলনকে প্রমোট করে তাহলে আমাদের বিরাট অংকের স্বাস্থ্য বাজেট অনেক কমে যাবে। এখন বছরে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা এই আন্দোলন সফল করতে পারলে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব। আমরা আজ এখানে যে খাবার খেলাম, আমাদের কাছে কোনো পার্থক্য মনে হয়নি। তাহলে আমরা কেন তেলময় খাবার খাবো। তেল ছাড়লে আমরা ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার ও হৃদরোগ থেকে বাঁচতে পারি।’

সিনিয়র সাংবাদিক মুন্নি সাহা বলেন, সাওলের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমি প্রথম থেকেই আছি। হার্টের ডাক্তারদের সমালোচনা উপেক্ষা করে আমি ডা. বিমল ছাজেড়কে নিয়ে টকশো করি। যেখানে কটাক্ষ করে এক ডাক্তার বলেছিলেন, কারো হার্ট অ্যাটাক হলে, রোগীকে রান্না ঘরে পাঠানো হবে। ডা. বিমল ছাজেড়কে নিয়ে অনুষ্ঠান করার জন্য এমনকি চাকরি হুমকিতে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি পিছু পা হইনি। কারণ সেটি ছিল স্বাস্থ্য রক্ষার আন্দোলন। আজ এক যুগ পরে তেল ছাড়া রান্না ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের এই আন্দোলন মহিরুহে পরিণত হয়েছে, দেশময় ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সব ডাক্তাররা তাদের উপযুক্ত জবাব পেয়ে গেছেন।’

কথাসাহিত্যিক আন্দালীব রাশদী বলেন, ছোটবেলায় বাড়িতে রান্নায় তেল কম হলে বাবা চেঁচিয়ে বলতেন, আমি কি তেল কিনি না! এত বছর পর আমরা সেই তেল বর্জনের আন্দোলন করছি। বিষয়টি সম্পূর্ণ মাইন্ড সেটআপের বিষয়।’

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী খুদিস্তা নূর ই নাহারিন মুন্নি বলেন, তেল ছাড়া রান্না খাবারের স্বাদের কোনো পার্থক্য দেখছি না। তাহলে আমরা কেন তেল খাই! আমি মনে করি এই আন্দোলন দেশময় ছড়িয়ে পড়ুক। আমি সাওলের এই ব্যতিক্রমী ও অভিনব সাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে আছি, থাকবো।

স্বাস্থ্য সচেতনতার এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কবি মোহন রায়হান অতিথিদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষের চিকিৎসা অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বাংলাদেশের একটি মানুষকেও আর হৃদরোগে মারা যেতে দিতে চাই না। আমার এই কথা আজ স্বপ্নবিলাস মনে হতে পারে কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, পারি আমার এই স্বপ্ন একদিন বাস্তবে পরিণত হবে। যে কারণে মানুষের যে রোগ হয় সে কারণ সরলে সেই রোগ আর থাকে না। আমাদের অধিকাংশ রোগের কারণ ফুডহ্যাবিট আর লাইফস্টাইল। সেটা ঠিক করলে মানুষ আর হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবে না। এমনকি অধিকাংশ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। সাওলের এই মানবিক আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানাই আমি।’

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও নির্মাতা এরশাদুর রহমান টিংকু বলেন, আমি অন্তত ৭০ জন রোগীকে মোহন রায়হানের সাওল হার্ট সেন্টারে পাঠিয়েছি। হার্ট ফাউন্ডেশন কিম্বা অন্য কোন অন্য কোন হসপিটালে অপারেশন করবে, ওই অবস্থায় আমি অনেক রোগীকে তুলে নিয়ে এসেছি সাওলে। এ জন্য হৃদরোগের অনেক ডাক্তার আমার ওপর ক্ষেপেছেন। কিন্তু আমি পিছু পা হইনি। সেসব রোগীরা সবাই সুস্থ আছে।’

কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান বলেন, আমার বন্ধু মোহনের তেল ছাড়া রান্নার এ আন্দোলনের সাথে আমি প্রথম থেকেই সম্পৃক্ত। খাওয়ার আগে যদি বলে দেয়া না হতো তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম না যে, এগুলো তেল ছাড়া রান্না করা হয়েছে। দেখতে দেখতে সাওল আন্দোলনের বয়স এখন ষোল বছর। সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য একটি সাশ্রয়ী এমন একটি পদ্ধতি আজ পূর্ণ অবয়ব পেয়েছে। সমাজ থেকে যেমন তেলবাজ দূর হওয়া দরকার, তেমনি খাবার থেকেও তেল বর্জন করতে হবে।’

সাওল ইফতার অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহিদ খান, সমাজকর্মী নার্গিস মিনি, লেখক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মুজতবা সওদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ইসলাম, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান, বার্ড বগুড়ার সাবেক ডিজি আব্দুল মতিন, একুশে টিভির হেড অফ দ্যা নিউজ রাশেদ চৌধুরী, প্র প্রকাশনের কর্ণধার ও কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা প্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুব হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও আরবান হেলথের পিডি আব্দুল হাকিম মজুমদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শাহাবুদ্দিন খান, কবি ও লেখক ফরিদুর রহমান, কবি কামরুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী রওনাক হোসেন, ডেইলি সানের বিজনেস ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, সংবাদ প্রকাশের সিইও বিধান রিবেরু, আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক মোহাম্মাদ মোহসিন, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক তারিফ রহমান, ছড়াকার দন্তস রওশন, সাংবাদিক রুমি নোমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্ল্যানিং এডিটর মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মানব জমিনের প্রধান বার্তা সম্পাদক কাজল ঘোষ, কবি সাখাওয়াত টিপু, এটিএন নিউজের আসাদ কাজল, কবি জাহানারা পারভীন প্রমুখ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *