অবৈধপথে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়  : দুদকের তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন রাজউক’র প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক  :  রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকে আরেক পি.কে হালদারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই পি.কে হালদারের নাম প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক। যার দুনীতি ও অপকর্মের বর্ণনা লিখে শেষ করা যাবে না। রাজউক এর এই নব্য পি. কে হালদার উজ্জল মল্লিক নির্দ্বিধায় তার থেকে অভিজ্ঞ সিনিয়র ৪/৫ জনকে ডিঙ্গিয়ে রাজউক এর প্রকৌশল শাখার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদ, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। পদটি পেতে তাকে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন স্তরে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে । প্রকৌশলী আ: লতিফ হেলালীকে উক্ত পদে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে পদায়ন করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজউক এর অধুনা-প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইদ নুর-আলম বিশাল উৎকোচের বিনিময়ে হেলালীকে সরিয়ে উজ্জল মল্লিককে একতরফা ভাবে পদায়ন করে গেছেন। এটি প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক এর জাদুকরী গুনের অন্যতম নিদর্শন। অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে অধিষ্ঠিত হবার পর হতেই উজ্জল মল্লিক রাজউক এর প্রকৌশলীদের মধ্যে গ্রুপিং এবং তার কথার বাইরে কেউ যাতে যেতে না পাারে সে জন্য প্রয়োজনে তার নিয়ন্ত্রণাধীন মাস্তান বাহিনী দিয়ে সিনিয়র প্রকৌশলীদেরকে হেনস্থা করতে সিদ্ধহস্ত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতা কিছুদিন আগে উজ্জল মল্লিকের চেয়ে সিনিয়র প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম এর রুমে মাস্তান পাঠিয়ে টেবিল চেয়ার ভাংচুর ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করা হয়েছে। এমনকি জনশ্রুতি আছে যে, নুরুল ইসলাম এর গায়ে হাত পর্যন্ত তোলা হয়। এছাড়াও উজ্ঝল মল্লিক এর লেলিয়ে দেওয়া মাস্তান বাহিনী গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ রাহাত মুসলেমীন নামে অন্য একজন প্রকল্প পরিচালককে বিএনপির সমর্থক বানিয়ে তার রুমে ভাংচুর করা কম্পিউটার ভাঙ্গা, অফিসারদের গায়ে গাত দেওয়া সর্বেপরি মহিলা প্রকল্প পরিচালককেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। যারা এ অপকর্মগুলি করেছে তারা যাবার সময় বিভিন্ন উক্তি করেন। তন্মধ্যে একটি উক্তি জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছে যে, প্রধান প্রকেীশলী (বাস্তাবায়ন) উজ্জল মল্লিকের কথা যারা না শুনবে তাদেরকে রাজউক এ চাকুরী করতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের এবং ভীতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিজ্ঞাপন

কে এই উজ্জল মল্লিক ?  সুত্রমতে রাজউক এর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুর ইসলাম (বিএনপির মন্ত্রী নোমান এর জামাই) এর হাত ধরেই উজ্জল মল্লিক এর চাকুরীর সূত্রপাত। শোনা যায় যে, বিএনপির আরেক নেতা নিতাই রায়-এর ভ্রাতুষ্পুত্র যিনি নিজ নিয়োগ কালে সহকারী প্রকৌশলী পদ খালি না থাকায় প্রভাব খাটিয়ে একজন কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে প্রথমে মাষ্টার রোল-এ যোগ দেন। অত:পর ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল সরকারী চাকুরি বিধান লঙ্ঘন করে বিশেষ ব্যবস্থায় তৎকালীন বি.এন.পি-র দুনীতিবাজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাকে রাজউক-এ সহকারী প্রকৌশলী পদে মাষ্টার রোল-ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে বি.এন.পি-র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাকুরি হওয়ায় রাজউক এর অনুরূপ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকুরিচ্যুতি ঘটলে তৎকালীন মন্ত্রী মির্জ আব্বাস-এর পৃষ্ঠপোষকতায় উজ্জল মল্লিক বহাল থেকে যান। ফলে বিএনপির আমলে চাকুরি সংশ্লিষ্ট অনৈতিক সবরকম সুবিধা তিনি ভোগ করবার সুযোগ পেয়েছিলেন। অপরদিকে ২০০৮ আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে উজ্জ্বল মল্লিক রাতের আধারে ভোল পাল্টে ফেলেন। সংসদীয় কমিটি-র সভাপতি জনাব ফজলে করিম চৌধুরী (চিটাগং থেকে নির্বাচিত) এর নাম ভাঙ্গিয়ে নিজ পদ মর্যাদা বাড়িয়ে নেয়। পরবর্তীতে ইঞ্জি: মোশারফ হোসেন (চট্রগ্রাম ) মন্ত্রী হবার পর উজ্জ্বল মল্লিক-এর স্বেচ্ছাচারিতা সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়ায়। তারই ধারাবাহিকতা সিনিয়র-দেরকে ডিঙ্গিয়ে অনেক পদন্নোতি তিনি নিয়েছেন। বিএনপির ছত্রছায়ায় নিয়োগ ও অনৈতিক সুবিধাপুষ্ট উজ্জ্বল মল্লিক ঠিক সময়ে খোলস পাল্টে একজন হিন্দু ও চিটাগাং-এর জন্মপরিচয় ব্যবহার করে অদ্যবধি আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্বেকেও বিভ্রান্ত করে চলেছেন। বলা বাহুল্য তার দুনীতিপূর্ণ ক্ষমতার অপব্যবহার দৃষ্টান্ত অনেক।


বিজ্ঞাপন

র‌্যাংগস ভবন অপসারণ ও ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পে দুনীতি :  ২০০৭-২০০৮ ইং সময়ে বিজয় সরণির মুখে তেজগাঁ রেলক্রসিং এর উপর ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক থাকাকালে র‌্যাংগস ভবন ভাঙ্গা ও অপসারণের সময় একই এলাকার ঠিকাদার এর সাথে যোগসাজশে চরম অব্যবস্থাপনার দরূন ১৩ (তের) জন নিরীহ শ্রমিক এর অপর্মতুর জন্য দায়ী উজ্জল মল্লিক। র‌্যাংগস বিল্ডিং এর মালিক এ সংক্রান্ত মামলাও দায়ের করেন। এত বৃহৎ অবকাঠামো অপসারণের কাজে যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরামর্শকের নি:সন্দেহে প্রয়োজনীতায় ছিল। তথাপি তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক এর ছত্রছায়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার একক দায়িত্ব নেন উজ্জ্বল মল্লিক। যার ভার বহন করতে না পারায় পরবর্তী ছাদগুলি একসাথে ভেঙ্গে পড়ে এবং অকালে ১৩ (তেরো) জন শ্রমিক মারা যায়। কিন্তু উজ্জ্বল মল্লিক এর কিছুই হয়নি।

পূর্বাচল প্রকল্পে যে সব অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন উজ্জল মল্লিক : বিএনপি ঘরানার হলেও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এর নাম ভাঙ্গিয়ে রাজউক এর দুর্বত্তায়নের নতুন মাহাকাব্য লিখেছেন উজ্জল মল্লিক। এক এক করে সব সিনিয়রদেরকে সরিয়ে পূর্বাচল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রকল্প ব্যবস্থাপক অত:পর সহকারী প্রকল্প পরিচালক এবং পরিশেষে প্রকল্প পরিচালক বনে যান তিনি । আশ্চর্যের বিষয় বিভিন্ন সময়ে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপক-সহ অনেককেই ঐ প্রকল্পে থেকে বদলি করা হলেও উজ্জ্বল মল্লিককে কখনই বদলি করা হয়নি। তিনি একই পূর্বাচল প্রকল্পে একটানা ১২(বারো) টি বছর বিভিন্ন পদে নিযুক্ত থাকলেও কোন এক জাদু গুণে নিষ্কালন্ক রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং নুরুজ্জামান খানকে একই গ্রুপের একই জায়গায় উভয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই বিভিন্ন খাতে বিল প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি রাজউক এর তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী গণ অবগত। পূর্বাচল প্রকল্পে প্রায় ৪৮ (আটচল্লিশ) কি.মি. দীর্ঘ লেক আছে।

প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুযায়ী সারা বছর এ সকল লেক-এ পানি থাকবে এবং দেশের ঐতিহ্য পাল তোলা নৌক চলবে।অথচ আনোয়ার হোসেন (সাবেক প্রধান প্রকৌশলী) এর প্রিয়ভাজন এই উজ্জ্বল মল্লিক লুটতরাজের ছিদ্র হিসেবে ডিজাইন এর বত্যয় ঘাটিয়ে প্রতিটি ব্রীজের ডেক বাস্তবে নিচু করে দিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনৈতিকভাবে লাভবান করে বখরাবাজির লক্ষ্যে এমনভাবে ব্রীজগুলো তিনি নির্মাণ করিয়েছেন যাতে পাল তোলা নৌকাতো দুরের কথা ছোট ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে পারবে না। এ ব্যাপারের রাজউক এর ৪৬৫ কোটি টাকা ক্ষতি শিরোনামে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়। কিন্তু এই উজ্জল মল্লিক এর অপকর্মের কোনই বিচার হয়নি।

এছাড়ও পূর্বাচল প্রকল্পের বিভিন্ন মৌজায় বিভিন্ন উচ্চতা রেখে প্রকল্পের সৌন্দর্য্য ও ভুমির ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা। যেমন-ইছাপুর মৌজায় ৭.০০ আর০এল এর বিপরীতে কমতা-হাড়ারবাড়ী রঘুরামপুর মৌজায় ১৩০০ আর-এল থাকবে। অথবা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে সব মৌজার আর. এল এক সমান করে উপরস্থ মাটি নিচে ভরাট করে উপরোক্ত মাটি ভরাটের বিল হিসেবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উজ্জল মল্লিক। পক্ষান্তরে প্রকল্পের সৌন্দর্য্য হয়েছে বিকৃত।

পূর্বাচল প্রকল্পে নিযুক্ত থাকাকালে পায় ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা ঠিকাদারী বিল পরিশোধের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট উজ্জল মল্লিক। লেক ও মাটি ভরাট এর পাশাপাশি ৩০০ কি.মি আশা রাস্তা ও ১৫০ কি.মি ঊর্ধ্বে ড্রেন-এর কাজ তার হাত ধরেই সম্পন্ন হয়েছে। অবনমিত মানের কাজ হওয়ায় সরেজমিনে এই সবই ভঙ্গুর অবস্থায় নিপতিত দেখা যাচ্ছে। জনশ্রুতি আছে যে এক পূর্বাচল প্রকল্পের উক্ত বিল হতেই উজ্জল মল্লিকের অবৈধ উপর্জন শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পূর্বাচল প্রকল্পে সার্বিক বত্যয় বাস্তবায়নের শ্লথগতি ও দুনীতি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নির্দেশে আই.এম.ই.ডি, প্ল্যানিং কমিশন ও দুদক এর একাধিক প্রতিনিধি দল অনুসন্ধান শুরু করলেও কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। গুঞ্জন রয়েছে যে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে উজ্জল মল্লিক সকলকেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন।

বলাবাহুল্য, দুর্নীতির ঢাকনি যোগান দিতে আরও দুর্নীতি প্রয়োজন হয়। তেমনই উজ্জ্বল মল্লিক এর অবৈধ কর্মের আরো কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো, (১) ঠিকাদারী কাজের টেন্ডার ডকুমেন্টে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে এই উজ্জ্বল মল্লিক। (২) ওয়েস্টার্ন নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা মূল্যের কাজ দেওয়ার বিনিময়ে মন্ত্রী ইঞ্জিঃ মোশারফ হোসেন ও তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যান এর চামচা হিসেবে এই উজ্জল মল্লিক সামগ্রিক কাজের উপর নিজেই শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। (৩) পূর্বাচল প্রকল্পের ওয়াটার সাপ্লায় কাজের পিপিপি খাত থেকেও উজ্জল মল্লিক পাকা ০৬ (ছয়) কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন । (৪) টেন্ডার ডকুমেন্টে এ তথ্যের ঘাপলা করে অনৈতিকভাবে অযোগ্য ঠিকাদারগণকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই উজ্জ্বল মল্লিক। উদাহরণ স্বরূপ, প্যাকেজ নং ১৯ আর সি -৬ জিআই লট নং ০২, ০৩, ০৪ প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রথমবারের টেন্ডার মুল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত আমূল পাল্টে দ্বিতীয়বারের টিইসি এর মাধ্যমে পছন্দসই ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে প্রায় দুই কোটি কামিয়ে নেন।

(৫) অজক নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ১০০ (একশত) কোটি টাকার রাস্তার কার্পেটিং কাজে ঘষা-মাজা করে প্রায় ১৭ (সতের) কোটি টাকা হাতিয়েছেন উজ্জল মল্লিক। (৬) হঠাৎ করেই রাজউক-এর প্রধান প্রকৌশলীর পদে সমাসীন হয়েছেন উজ্জ্বল মল্লিক। নিয়োগ বিধি অনুযায়ী উক্ত পদোন্নতি প্রাপ্তির জন্য “তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে ন্যূনতম ০৫ (পাঁচ) বছর চাকুরিরত থাকা প্রয়োজন এবং উজ্জল মল্লিক এর সিনিয়র একাধিক কর্মকর্তার অনুরূপ বা ততোধিক কর্মকাল বিদ্যমান। তদুপরি উজ্ঝল মল্লিক এর এরূপ অভিজ্ঞতা একদমই প্রয়োজন হয়নি।

(৭) পূর্বাচল প্রকল্পে মাত্র ০৩ (তিন) কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়ে স্বীয়প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সেটিকে বদলিয়ে ৮.৫০ কাঠার প্লটে রূপান্তরিত করেছেন উজ্জ্বল মল্লিক। রাজউক এর বনানী নিবাসস্থ কোয়র্টারে থাকলেও সেখানে বিশাল বাংলো বানিয়ে প্রায়শঃই অবকাশ যাপন করেন তিনি। (৮) ভ্রমণ পিপাসু উজ্জ্বল মল্লিক রাজউক-এর সকল কর্মকর্তার বিদেশ সফরের সমষ্টির চেয়েও অধিক সংখ্যক বার একাই সরকারী খরচে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় তার লন্ডন, কানাডা প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অবৈধ অর্থ পাচার করেছেন বলে মোনা যায়।

অতি সম্প্রতি রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে ১.৫০০(পনের শত) ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। জানা গেছে, দুটি বরাদ্দে যে স্থান নির্ধারন করা হয়েছে তা এপার্টমেন্ট ফর মিডিল এন্ড রৈা ইনকাম পিপিলদের জন্য সংরক্ষিত। পূর্বাচল প্রকল্পের লে আউট উপযুপরি ৪র্থবার সংশােধন করার পর প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের কারণে বেলা কর্তৃক রাজউক এর বিরুদ্ধে মোকদ্দমা রুজু করা হয়। উক্ত প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দে জনশ্রুতি রয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটেক্স কে দিয়ে প্লটের বিবর্তন ঘটানোর সার্বিক কার্যক্রম সম্পাদন করেছে এই উজ্জ্বল মল্লিক। ঐসময় প্রায় ৪৫ শত কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়। উক্ত অপকর্মে জড়িত ছিলেন সে সময়কার মন্ত্রী চট্রগ্রামের ইঞ্জিঃ মোশারফ হোসেন, তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যান আঃ রহমান, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন এবং উজ্জ্বল মল্লিক। পূর্বাচলের ৪র্থ সংশোধনীর উপর যেখানে মামলা চলছে সেখানে কিভাবে পুণরায় সংশোধনী করা হল তা কারো জানা নেই। সম্প্রতি এরূপ, ১০০ টি বরাদ্দে অনিয়মের আশ্রয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদেরকে বাদ রেখে টাকা খেয়ে অন্যান্য নন ডিজার্ভিং লোককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে গণপূর্ত মন্ত্রী, রাজউক এর অধুনা-প্রক্তন চেয়ারম্যান সাঈদ নুর, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন, পরিচালক প্রশাসন হাসানসহ এই কার্যক্রমের সাথে জড়িত অন্যান্যরা মিলে প্রায় ১০০ (একশত ত্রিশ) কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন যার সর্বাধিনায়ক এই উজ্জল মল্লিক ।

শেষ কথা : রাজউক এর মত স্বায়ত্তশাসিত উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি কোনক্রমেই একটি “রাজনৈতিক পদ” হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে না। উপরন্তু সকলের জানা যে, উজ্জ্বল মল্লিক গংরা কখনই কারও হয়না। বিএনপির কাঁধে চড়ে মাষ্টার রােলে নিয়োগপ্রাপ্ত হবার পর সুদীর্ঘ পথ পেরিয়ে হিন্দু বিবেচনায় আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই উজ্জল মল্লিক আওয়ামী লীগ-এর সামান্যতম দুর্গতির আশঙ্কা দেখলেই “চাচা আপন প্রাণ বাঁচা” বলে সর্বাগ্রে দেশ ছেড়ে পালাবে এটা সুনিশ্চিৎ। হাজার কোটি টাকা কামিয়ে উজ্জল মল্লিক যা করেছেন, তাও জানা আবশ্যক। যতটুকু জানা গেছে, লন্ডনে বাড়ি ক্রয়, ভারতে কয়েকটি বাড়ি তৈরী, গুলশানে ২টি ফ্ল্যাট এবং একইসাথে পূর্বাচল প্রকল্পের ৫নং সেক্টরে লেক ভরাট করে ৫ (পাঁচ) কাঠার প্লটকে ৮ (আট) কাঠা বানিয়েছেন উজ্জল মল্লিক। পূর্বাচল প্রকল্পের লে-আউট এমন নানামুখী ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ৪র্থ সংশােধনী পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্লটখোরদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলাও চলছে। ১৫০০ লোকের (আদিবাসী) প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার সিংহভাগই ভুলে পরিপূর্ণ, অথচ ভ্রম সংশােধন করার কোন উদ্যোগই নেই। সে সুযােগেই নিজ প্লটের কলেবর বর্ধনের ক্ষেত্রে তিলমাত্র কার্পণ্য করেন নি উজ্জল মল্লিক । বলা চলে সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহারে তার মত ট্রেনিং এক্সপাট পাওয়া দুষ্কর। জনগণ ও সরকারকে প্রতারিত করে দেশ বেঁচে খেতে তার একটুও বিবেকে বাঁধবে না।

উজ্জল মল্লিকের ভাষ্য : এ প্রসংগে কথা বললে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। এমন কি যিনি অভিযোগকারী সেও সঠিক নন। তার কোন অবৈধ সম্পদ নেই বলেও তিনি দাবী করেন। এসব রিপোর্ট না ছাপার জন্যেও তিনি অনুরোধ জানান।

দুদকের পদক্ষেপ : দুদক সূত্রে জানা গেছে, উজ্জ্বল মল্লিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে দুদকের একটি টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত বছরের ৩ মে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে পূর্বাচল প্রকল্পে কর্মরত থাকাকালীন লেক, মাটি ভরাট, ঊর্ধ্ব রাস্তা নির্মাণ এবং ঊর্ধ্ব ড্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি এবং ৫ নম্বর সেক্টরের লেক ভরাট সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। ফলে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়- সাবেক আইজিপি বেনজির ও কাস্টমস কমিশনার মতিউর রহমানের মত দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *