বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা এই প্রথম। দুবাই-ইউরোপেরে সড়কপথে এমন ক্লোভারলিফের নজির নতুন কিছু না হলেও দেশে এরকম সড়কের দেখা মেলেনি এতদিনেও। ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এই এক্সপ্রেসওয়েতেই পদ্মাসেতুর মাধ্যমে যানজট এড়িয়ে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২৫টি জেলা। পদ্মাসেতুর জন্য এখনো অপেক্ষা থাকলেও এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশের অংশটি উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর, কেবল এ বছরই নয়, আগামী বছরেরও বেশ বড় একটি সময় এই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো টোল দিতে হবে না। আগামী বছর যখন পদ্মাসেতু চালু হবে, তখন থেকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নেওয়া শুরু হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, আগামী বছর পদ্মাসেতু চালুর দিন থেকে সমন্বিতভাবে এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা হবে। তবে যেসব সেতু রয়েছে, সেগুলোর টোল দিতে হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য, আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে। তখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। একই সময় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য টোল আদায় শুরু হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। সংস্থাটি বলছে, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও আগের মতোই কেবল সেতুগুলোর টোল দিয়ে গাড়িগুলো চলছে। এখন এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও টোল লাগছে না।
এই এক্সপ্রেসওয়ের টোল কত হতে পারে- জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, টোল প্লাজা ও পদ্মাসেতু নির্মাণের পর টোল আদায়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
স্বপ্নের পদ্মাসেতু চালু হলে মূলত সেতু আর এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশের অংশ মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হবে ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ের শুরুটা ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে। সেতুর এ পাড়ের অংশটি শেষ হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। অন্যদিকে, সেতুর ও পাড়ে শরীয়তপুর-মাদারীপুর হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হয়েছে ফরিদপুরে গিয়ে। মাঝখানে সাড়ে ৯ কিলোমিটার পদ্মাসেতু আর দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক মিলিয়ে রয়েছে ১২ কিলোমিটার।
যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়েতে বাধাহীনভাবে যান চলাচলের জন্য থাকছে ছয়টি ফ্লাইওভার, ৩১টি সেতু, ১৯টি আন্ডারপাস। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীসহ চারটি বড় সেতু রয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে। ৫৫ কিলোমিটারের এই সড়কের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন অংশ ভাঙ্গা মোড়ের ক্লোভারলিফ। এই অংশটি যেন চার পাঁপড়ির এক ফুল, কিংবা ডানা মেলা প্রজাপতি।
দেখা গেছে, ৫৫ কিলোমিটারের কিছু কিছু অংশে এখনো শেষ মুহূর্তের কাজ বাকি। কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও মাস দুয়েক লাগবে। তবে এসব কাজ ছাড়াও এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলে বাধা নেই বলেই এটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর এখন ঢাকা-মাওয়া দূরত্ব নেমে এলো ৩০ মিনিটে। আর পদ্মাসেতু হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত যেতে লাগবে একঘণ্টা। আর পদ্মাসেতু চালু হলেই মূলত এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে। ফেরি পারপারের ঝামেলা না থাকায় ঢাকা থেকে খুলনা-বরিশালসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে যাতায়াতের সময় কমে যাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।