করোনায় মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়ালো

আন্তর্জাতিক এইমাত্র স্বাস্থ্য

ডেস্ক রিপোর্ট : কোনও যুদ্ধ নয়, নয় কোনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি সংগঠনের হামলার ভয়, গোটা পৃথিবী এখন থরথর করে কাঁপছে এক ভাইরাসে। করোনাভাইরাস নামক এই ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে রোগটির আতঙ্কে কম্পমান গোটা বিশ্বের মানুষ। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশ বা অঞ্চল এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ১৮০টি দেশ বা অঞ্চল।
আর এই ভাইরাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে।
শুক্রবার ওয়ার্ল্ডমেটার প্রকাশিত সর্বশেষ খবরে জানা যায়, কোভিড-১৯ ভাইরাসে বিশ্বে সবমিলিয়ে ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৪ জন আক্রান্ত। এতে মারা গেছে আরও ১০৪০৫ জন। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সুস্থ হয়েছেন আরো ৮৮৪৩৭ জন।
ইতালি এখন মৃত্যুপুরী : করোনার আঘাতে ইউরোপের পর্যটনসমৃদ্ধ দেশ ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। দেশটিতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪২৭ জন মারা গেছে। এনিয়ে দেশটিতে ৩ হাজার ৪০৫ জন মারা গেল। এর ফলে মৃতের সংখ্যায় ইউরোপের এ দেশটি ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেল। গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার আড়াইশ’ মানুষ।
বুধবার ইতালিতে রেকর্ড সংখ্যক ৪৭৫ জন মানুষ মারা যায়। সেদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪০৫ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দেশটির ৪১০৩৫ জন। আর সুস্থ হয়েছে ৪৪৪০ জন।
তবে আশার কথা এই যে, দেশটি বৃহস্পতিবার নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি এবং কোনও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি।
তবে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্তের দিক দিয়ে এখনও শীর্ষে চীন। দেশটিতে বৃহস্পতিবার আরও ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে দেশটির মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৯৬৭তে গিয়ে দাঁড়ালো। দেশটিতে করোনায় মারা গেছে ৩২৪৮ জন। নতুন মারা গেছে মাত্র ৩ জন। বৃহস্পতিবার নতুন আক্রান্তদের কেউই চীনের মূল ভূখ-ের নয়। তারা সবাই বহিরাগত।
উত্তর কোরিয়া বলেছে, তারা তিন বিদেশি ছাড়া কোয়ারান্টাইন থেকে হাজার হাজার মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এর সংক্রামণ প্রতিহত করতে দেশজুড়ে কঠোর অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে কোয়ারান্টাইনে নেয়া হয়েছে। তবে দেশটিতে কোনও ব্যক্তি করোনায় সংক্রামিত হয়েছেন কিনা সরকারিভাবে এখনও সেটি জানান হয়নি।
তবে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ভাইরাস প্রতিরোধের প্রচেষ্টাকে ‘জাতীয় অস্তিত্ব’হিসাবে বর্ণনা করেছে।
শুক্রবার পিয়ংইয়াংয়ের সরকারি বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানায়, করোনায় আক্রান্তের কোনও লক্ষণ না থাকার বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত হওয়ার পর উত্তর ও দক্ষিণ পিয়ংগান এবং কংওন প্রদেশগুলিতে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে কোয়ারান্টাইন থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর আগে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো কোয়ারান্টাইন থেকে ৮ হাজার মানুষকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লোকজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে বিদেশে বসবাসরত মার্কিনীদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সরকার। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২১৪ জনে পৌঁছানোর পর এই নির্দেশ জারি করলো রাজ্য দুটি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউজম বৃহস্পতিবার বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই রাজ্যের র ৫৬ শতাংশ বাসিন্দা আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে কোভিড -১৯য়ে আক্রান্ত হতে চলেছেন। এদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে বর্তমানের তুলনায় আরও প্রায় ২০,০০০ বেশি শয্যার প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, লস অ্যাঞ্জেলেস দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসাবে আগামী সপ্তাহগুলিতে এ মহামারি দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত অব্দি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ৫৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটির মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩২২য়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইরান-স্পেনের জন্য সুখবর : গত ২৪ ঘণ্টায় ইরান ও ইউরোপের দেশ স্পেনে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি, মারাও যাননি কেউ। যদিও ইতালির পর সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেই হয়েছে। সেখানে এতে সবমিলিয়ে ১২৮৪ জন মারা গেছেন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৪০৭।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৭ জন নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮৬৫২ হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার আরও ৩ জন মারা যাওয়ায় দেশটিতে মোট ৯৪ জন মারা গেল।
দেশটিতে বৃহস্পতিবার একদিনে ৪৬ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৬৪তে গিয়ে পৌঁছেছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, মাত্র তিনজন।
ব্রাজিলে নতুন করে ৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬৪৭। নিউজিল্যান্ডে নতুন আক্রান্ত ১১ি এবং মোট আক্রান্ত ৩৯; হন্ডুরাসে নতুন আক্রান্ত ১২ এবং মোট করোনার রোগী ২৪ জন; বলিভিয়ায় নতুন আক্রান্ত ২, মোট আক্রান্ত ১৭; কিউবায় নতুন আক্রান্ত ৫ এবং মোট আক্রান্ত ১৬; হাইতিতে প্রথমবারের মতো ২ জন করোনা সংক্রামিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সবমিলিয়ে মোট ৭৫৯ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নতুন মৃত্যু মাত্র ১৮।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *