করোনায় মৃত্যুর ১৩০৫০, আক্রান্ত প্রায় ৪ লাখ

আন্তর্জাতিক এইমাত্র স্বাস্থ্য

স্পেন এখন মৃত্যুপুরী

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : দিনে দিনে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি। শনিবার রাতারাতি মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষ। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা রাতারাতি ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এই সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। বিপর্যস্ত জনপদের তালিকার শীর্ষে এখনও ইটালি, স্পেন ও ইরান।
শনিবার সবমিলিয়ে ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চলে থাবা বসিয়েছে কোভিড-১৯। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫ জন এবং বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫০য়ে। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৫ হাজার ৭৯৭ জন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছেন।
ইটালিতে করোনাভাইরাসে শনিবার আরও ৭৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় কোনও দেশে একদিনে এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।এর আগে বিশ্বের কোথাও এমনকি করোনার সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত চীনের উহান শহরেও একদিনে এত লোক মারা যায়নি।
গত কয়েকদিন ধরেই দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। শুক্রবার সেদেশে রেকর্ড ৬২৭ জন মারা গিয়েছিল।
গত বুধবারই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় প্রথমবারের মতো চীনকে ছাড়িয়ে যায় ইতালি। সেদিন সেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটাই ছিল যেকোনও দেশের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
শুক্রবার ও শনিবার নিজেদের সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা। ফলে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪৮২৫ জনে পৌঁছেছে।
শনিবার সেখানে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৫৫৭ জন। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তুলনায় ইতালিতে এখনও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা অনেক কম। শনিবার অব্দি সেখানে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৬০৭২ জন। এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২ হাজার ৬৮১ জন। এদের মধ্যে ২৮৫৭ জনের অবস্থা গুরুতর।
চীন: চীনে শনিবার নতুন করে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৪৬ জন। ফলে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫৪ জন এবং মোট মৃত্যু ৩ হাজার ২৬১ জন। তবে দেশটিতে সার্বিক করোনা পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। করোনার সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত উহান শহরে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসায় সেখানে আতশবাজি ফাটিয়ে আনন্দপ্রকাশ করেছে শহরবাসী।
বিশ্বের পরাক্রমশালী এই দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। শনিবার করোনায় আক্রান্ত মোট ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর সেখানে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩১৬।
এর মাত্র একদিন আগে দেশটিতে ৫৭ জন মারা গিয়েছিল। করোনা ঠেকাতে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন দেশটির মোট ২৩ শতাংশ মানুষ।
স্পেন এখন মৃত্যুপুরী : ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। শনিবার সেখানে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ মারা গেছে, ২৮৫ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮২৫য়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মাত্র একদিন আগে শুক্রবার সেখানে করোনা আক্রান্ত ২৬২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শনিবার দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৩৯২৫ জন, মোট আক্রান্ত ২৫৮৯৫। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ২১২৫ জন। এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ২১৯৯৩ জন।
ফ্রান্স: শনিবার ইউরোপের এই দেশটিতে আরও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ৫৬২। এছাড়া ফ্রান্সের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৪৫৯, মোট সুস্থ মাত্র ১৫৮৭ এবং সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন এখনও ১৫২৫ জন।
জার্মানি: এখানে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২৩৬৪ জন। শনিবারও দেশটিতে ১৬ জন মারা গেছেন। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
ইরান: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে শনিবার করোনায় আক্রান্ত আরও ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংখ্যা গত দিনের চেয়ে কম। শুক্রবার সেখানে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৪৯ জন।শনিবার দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫৫৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৬১০ জন। এদের মধ্যে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১৪১৯ জন। সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৭৬৩৫।
দক্ষিণ কোরিয়া: এশিয়ার এই দেশটিতে শনিবার আরও ১০ জন মারা গেছেন। ফলে মোট মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ১০৪। সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৪৫ জন, মোট আক্রান্ত ৮৮৯৭। এদের মধ্যে সেরে উঠেছেন ২৯০৯ জন এবং এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৫৮৮৪ জন। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৫৯ জনের অবস্থা গুরুতর।
সুইজারল্যান্ড: দেশটিতে শনিবার আরও ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ জন। আর মোট মোট আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৮৬৩ জন।
যুক্তরাজ্য: সেখানে শনিবার আরও ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে এটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। মাত্র একদিন আগে ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। সেখানে নতুন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও বিপুলভাবে বেড়ে গেছে, ১০৩৫ জন। ফলে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০১৮তে। মাত্র একদিন আগে এ সংখ্যা ছিল ৩৯৮৩ জন।
নেদারল্যান্ডস: দেশটিতে নতুন করে মারা গেছেন ৩০ জনের বেশি মানুষ। ফলে মোট মৃত্যু ১৩৬ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৩১ জন।
অস্ট্রিয়া: ইউরোপের এই দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। শনিবার সেখানে নতুন করে আরও ৩৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯৯২। তবে আক্রান্তের তুলনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অনেক কম। শনিবার নতুন করে দুজন মারা যাওয়ার পর মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে আটে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশ: বেলজিয়ামে নতুন মৃত্যু ৩০, মোট মৃত্যু ৬৭ এবং মোট আক্রান্ত ২৮১৫ জন। শনিবারই সেখানে ৫৫৮ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
নরওয়েতে নতুন আক্রান্ত ২০৫, মোট আক্রান্ত ২১৬৪ জন এবং মৃত্যু ৭। সুইডেনে নতুন আক্রান্ত ১৩১, মোট আক্রান্ত ১৭৭০ এবং মোট মৃত্যু ২০। ডেনমার্কে মোট আক্রান্ত ১৩২৬ ও মোট মৃত্যু ১৩। পর্তুগালে শনিবারই মারা গেছেন ৬ জন। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে শনিবার আরও ২৬০ জন নতুন করে আক্রান্ত হওয়ায় মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৮০ জন। রাশিয়ায় নতুন করে ৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০৬ জন। সেখানে মারা গেছে একজন।
এশিয়ার অঞ্চলের ১০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ। এরপরই রয়েছে জাপান। সেখানে মোট মৃত্যু ৪৭ ও আক্রান্তের সংখ্যা ১০৫৪ জন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে শনিবার নতুন করে কেউ মারা যায়নি। ফলে সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা তিনে স্থির আছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়শ বেড়ে ৬৪৫য়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র একদিন আগে শুক্রবারই সেখানে ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০১ জন।
ইন্দোনেশিয়ায় শনিবার আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মৃত্যু ৮১ এবং মোট আক্রান্ত হলো সাড়ে ৪শ জন।
সিঙ্গাপুরে শনিবার করোনায় দুইজন মারা গেছেন। এটি দেশটিতে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। এছাড়া নতুন করে ৪৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ৪৩২।
মালয়েশিয়ায় শনিবার আরও ৫ জনের মৃত্যু হওয়ায় এই সংখ্যা বেড়ে আটে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১৮৩ জন। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে জনসাধারণের গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে দেশটির নতুন সরকার।
ভারতে শনিবার নতুন করে ৮৩ জন আক্রান্ত হওয়ায় মোট করোনার সংখ্যা বেড়ে ৩৩২য়ে পৌঁছেছে। মারা গেছেন মোট পাঁচজন।
বাংলাদেশে শনিবার একজনের মৃত্যু হওয়ায় এ সংখ্রা বেড়ে ২ এবং মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন।
এছাড়া ফিলিপাইনে মৃত্যু ১৯ ও আক্রান্ত ৩০৭; শ্রীলঙ্কায় মোট আক্রান্ত ৭৭; থাইল্যান্ডে মোট আক্রান্ত ৪১২, মৃত্যু ১; হংকংয়ে মোট আক্রান্ত ২৭৪, মৃত্যু ৪; ভিয়েতনামে আক্রান্ত ৯৪; কাজাকিস্তানে আক্রান্ত ৫৪; আজারবাইজানে আক্রান্ত ৫৩ ও মৃত্যু ১; কম্বোডিয়ায় আক্রান্ত ৫৩, মৃত্যু ২; উজবেকিস্তানে আক্রান্ত ৪১; আফগানিস্তানে আক্রান্ত ২৪; মালদ্বীপে আক্রান্ত ১৩; মেেঙ্গালিয়ায় ১০ এবং ভুটানে আক্রান্ত ২ জন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থা নেপালের। সেখানে যে একজন আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনিও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে দেশটি এখন করোনাশূন্য।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থার কথা তো আগেই বলেছি। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে শনিবারও ১২ জন মারা যাওয়ায় মোট মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ২১। ওই একই দিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৭৭ জন। ফলে মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ৯৪৭।
এছাড়া ইসরায়েলে মোট আক্রান্ত ৮৮৩ (শনিবার আক্রান্ত ১৭৮ জন) এবং মারা গেছেন একজন; সৌদি আরবে মোট আক্রান্ত বেড়ে ৩৯২ ও মৃত একজন; লেবাননে আক্রান্ত ২৩০, মৃত্যু ৪; ফিলিস্তিনে আক্রান্ত ৫৩; বাহরাইনে মোট আক্রান্ত ৩১০, মৃত্যু ১; মিশরে শনিবার দুজন মারা যাওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে ১০ এবং মোট আক্রান্ত ২৯৪; ইরাকে মোট আক্রান্ত ২১৪ ও মৃত্যু ১৭; কুয়েতে মোট আক্রান্ত ১৭৬; সংযুক্ত আরব আমিরাতে আক্রান্ত ১৫৩ ও মৃত্যু ২; আলজেরিয়ায় মোট আক্রান্ত ১৩৯ ও মৃত্যু ১৫; জর্ডানে মোট আক্রান্ত ১০০; মরক্কোতে আক্রান্ত ৯৬, মৃত্যু ৩; ব্রুনেইয়ে মোট আক্রান্ত ৮৩; তিউনেসিয়ায় মোট আক্রান্ত ৬০, মৃত্যু ১; ওমানে মোট আক্রান্ত ৫২ এবং নাইজেরিয়ায় মোট আক্রান্ত ২২।
তুলনামূলকভাবে আফিক্রার দেশগুলোতে করোনা সেভাবে থাবা বিস্তার করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মিশর যার কথা আগেই বলেছি। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর কঙ্গোতে ২৩ জন আক্রান্ত ওএকজন মারা গেছেন। এই মহাদেশের অন্যান্য দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা খুবই নগণ্য।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *