
নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে একটি জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দেখামাত্র গ্রেফতার করতে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
তার কারণ হলো- এতো কিছুর পরেও দেশে আওয়ামী লীগের অনেক নামি নেতারা আবার প্রকাশ্যে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর এখন অনেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে। তাঁদের পুনর্বাসন করছে অন্যদলের নেতারা। যে যার সাথে পারছে আঁতাত করে এলাকায় ফিরে আসছে। কেউ থানা পুলিশকেও ম্যানেজ করে ফেলেছে। তাঁদের এভাবে ফিরে আসা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
যেসব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকেও গায়েব ছিলেন। তাঁরাও এখন একে একে অনলাইনে সচল হচ্ছেন। বিভিন্ন হুমকি-ধামকি সহ উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন। এছাড়া মিথ্যা অপপ্রচার এবং গুজব ছড়াচ্ছেন।
অনেকের আত্মীয়-স্বজন অন্যদল করেন বা এক ভাই অন্যদলের আরেক ভাই আওয়ামী লীগের সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র থেমে নেই!
ঢাকা মহানগর উত্তর এর বনানী থানার অন্তর্গত ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শহর আলী তাদের মধ্যে একজন। তাঁর নামের আগে শেখ ছিল না। আওয়ামী লীগ করলে নামের আগে শেখ বসালে নাকি আলাদা সুবিধা পাওয়া যেত তাই পরে শেখ লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর অত্যাচারে মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজ বাড়িতে থাকতে পারেনি। পুলিশের সঙ্গে থেকে বাড়ি চিনিয়ে দিয়ে ধরিয়ে দিতেন। খুঁজে খুঁজে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়ার জন্য থানায় লিস্ট দিতেন। পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায় করতো। চাঁদা না পেলে লাঞ্চিত করতেন। এমন অসংখ্য অভিযোগ শহর আলীর বিরুদ্ধে।
শহর আলীর নিজ এলাকার মানুষের মুখে কথিত আছে যে তিনি ফকিরের কাছ থেকেও ভাগ নিতেন। টাকার প্রশ্ন আসলে কাউকে ছাড় দিতেন না। কড়াইল বস্তির মানুষের কাছ থেকে টিসিবির কার্ড করে দেওয়া সহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিতেন। কয়েকজন ভুক্তোভোগী এমন অভিযোগ করেছেন। বস্তির চাঁদার ভাগ পেতেন এবং অবৈধ গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও দখল বানিজ্যের সঙ্গে ছিলেন জড়িত। মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বলে তার ব্যাপক প্রভাব। এই প্রভাব আরো বেশি বিস্তার হয়েছে তার দুই ছেলেও চিহ্নিত সন্ত্রাস। বাপ আওয়ামী লীগ করে বলে ছেলেরাও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শহর আলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে বসে কড়াইল বস্তির বিভিন্ন জনের বিচার সালিশ করতেন। প্রতি বিচারে শুধু তিনি একাই নুন্মতম ১০ হাজার টাকা আদায় করতেন। তাঁকে খুশি করার জন্য ভুক্তোভোগী ধার করে টাকা এনেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। যে তাঁকে টাকা দিতে পারতো তার পক্ষে কথা বলতেন। টাকা পেলে তিনি আত্বীয়-স্বজনকেও চিনতেন না। ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশেই মেহেদী নামের এক ডিলার ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করেন।
মহাখালীর বাসিন্দা খাদিজা বেগম অভিযোগ করেছেন, প্রতিমাসে পণ্য বিতরণের দিন শহর আলী সেই বাড়িতে উপস্থিত থাকতেন। আওয়ামী লীগের লোকজনদের মুখ চিনে চিনে আগে পণ্য দেওয়ার জন্য তিনি তদারকি করতেন। এদিকে বাইরে সাধারণ মানুষ পণ্য নিতে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে শহর আলী বলতেন, ‘আওয়ামী লীগরে ভোট দিছো যে কথা কও। আমি চিনি আওয়ামী লীগরে কে ভোট দিছে আর কে দেয়নাই। বেশি কথা কইলে গলা ধাক্কা দিয়া সরায়া দিমু।’
ওয়্যারলেস গেট মোড়ে ফুটপাতের দোকান গুলোও ছিল শহর আলীর চাঁদাবাজির আওতায়। ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে শহর আলী ছিলেন নিজ বাড়িতে আত্মগোপনে। একদম বের হননি বাড়ির বাইরে। কিন্তু ইদানিং তাকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে বনানী থানায় একাধিক মামলা দায়ের হবার পরেও। প্রায়ই মহাখালীর বিভিন্ন অলিগলিতে তার দেখা মেলে।
সরেজমিনে নজরদারি করে দেখা গিয়েছে তার চলাফেরা খুবই রহস্যজনক! বনানী থানা বিএনপি অফিসের আশেপাশেও তাকে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। তবে বেশিক্ষণ থাকেন না মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যান। তার ঘনিষ্ঠ লোকেরা জানিয়েছে, তিনি এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়মিত আদান-প্রদান করছেন।
এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এতো অভিযোগ থাকার পরেও শহর আলী কার ইন্ধনে এভাবে প্রকাশ্যে এসে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছেন। তাঁকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি উঠেছে।
Post Views: 88