ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ-এর ‘ইকোসিস্টেম ইন অ্যাকশন’ আয়োজন : তরুণ নেতৃত্বাধীন উদ্ভাবনের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির এক বিশেষ উদ্যোগ

Uncategorized অর্থনীতি কর্পোরেট সংবাদ জাতীয় ঢাকা বানিজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এবং অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ (ওসিবি) যৌথভাবে “ইকোসিস্টেম ইন অ্যাকশন: পাওয়ারিং ফিউচার বিল্ডারস” শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ-এর সহায়তা পাওয়া তরুণ উদ্যোক্তারা, বেসরকারি খাত, সরকার, দূতাবাস এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তরুণদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও ব্যবসায় আরও সহায়তা ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।


বিজ্ঞাপন

ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগকারী, কর্পোরেট নেতৃত্ব এবং উদ্যোক্তা সহায়তাকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান। এতে করে তারা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ, পরামর্শ ও বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ গড়ে তুলতে পেরেছেন।


বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল একটি আলোচনা পর্ব, যেখানে অংশ নেন বিকাশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল কাদীর এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন সাজিদা ফাউন্ডেশন-এর ইমপ্যাক্ট পার্টনার্স বিভাগের প্রধান সারা ইকবাল।


বিজ্ঞাপন

আলোচনায় উঠে আসে নেতৃত্ব, ব্যবসার প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। কীভাবে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অংশীদারদের সঙ্গে আস্থা গড়ে তোলা যায়, অনিশ্চয়তা সামলে পথ খুঁজে নেওয়া যায় এবং কীভাবে বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরিকারী ব্যবসাকে বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব- এসব বিষয়ে বক্তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন।


বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ ছিল “ট্রেইলব্লেজার গ্যালারি”, যেখানে অরেঞ্জ কর্নারস-এর পোর্টফোলিওভুক্ত পাঁচটি উদ্ভাবনী স্টার্টআপ- বিডি রিসাইকেল টেকনোলজিস, ড্রিপ ইরিগেশন বিডি, পলকা ফ্লেক্স, অ্যাকোয়ালিংক বাংলাদেশ এবং ওয়াট মোটরস তাদের অসাধারণ ও নতুন ধরনের সমাধান উপস্থাপন করে। এই উদ্যোগগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, কৃষি প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব যাতায়াত এবং বৃত্তাকার অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাজ করছে। অন-ডিমান্ড রিসাইক্লিং সেবা, সৌরচালিত সেচ ব্যবস্থা, সহজে পচনশীল ফ্লেক্স ব্যানার, পরিবেশ পর্যবেক্ষণের যন্ত্র এবং হালকা ইলেকট্রিক যানবাহনের মতো নানা উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে এই তরুণ উদ্যোক্তারা সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে জরুরি সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সমাজের উপকারে আসে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে- এমন সমাধান তৈরি করার জন্য অরেঞ্জ কর্নারস-এর উদ্যোক্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি তাদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগকে প্রশংসা করেন।

দেশের টেকসই উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে উল্লেখ করে তিনি জানান, অরেঞ্জ কর্নারস-এর মতো উদ্যোগগুলো দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও তরুণ উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মানানসই।

তিনি বিভিন্ন খাতের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত, উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তা সহায়ক সংগঠনগুলোর একসঙ্গে কাজ করাই বাংলাদেশকে তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেন্স বলেন, “বাংলাদেশের তরুণরা নতুন ভাবনায় ভরপুর, প্রযুক্তি-বান্ধব এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানের আগ্রহে এগিয়ে আসছে, যা দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শুধু মেধা আর আগ্রহই যথেষ্ট নয়। স্টার্টআপগুলো একা একা বড় হতে পারে না, তাদের বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ বা ইকোসিস্টেম প্রয়োজন। নেদারল্যান্ডস অরেঞ্জ কর্নারস কর্মসূচি চালু করেছে, যাতে বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা যায়, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারা বেড়ে উঠতে পারে। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে অভিজ্ঞতা, পুঁজি, নেটওয়ার্ক এবং সাপ্লাই চেইনের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। তাছাড়া তারা এই নতুন উদ্যোগগুলোর প্রথম ক্রেতাও হতে পারে, যার ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি সবার জন্য লাভজনক এক পরিস্থিতিতে পরিণত হতে পারে।”

ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বলেন, “ইউনিলিভারে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণদের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একটি আরও টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের নেতৃত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। অরেঞ্জ কর্নারস-এর সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি কৌশলগত বিনিয়োগ, যা উদ্দেশ্যনির্ভর উদ্যোক্তাদের সহায়তা উদ্ভাবন ও সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করছে। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্যবসাগুলো তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও দৃঢ় মনোভাবের বাস্তব উদাহরণ, যা দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, এই উদ্যোগগুলোর পেছনে বেসরকারি খাতের সক্রিয় ভূমিকা থাকা জরুরি, আর ইউনিলিভার সেই ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের পাশে থাকতে প্রস্তুত, যারা বাংলাদেশ এবং তার বাইরেও আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।”

এক অর্থবহ নেটওয়ার্কিং সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়, যেখানে উদ্যোক্তারা সম্ভাব্য অংশীদার, ক্লায়েন্ট, বিনিয়োগকারী ও সহযোগীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পান। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়, পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা পরিমণ্ডলে তাদের উপস্থিতি আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বেসরকারি খাতের জন্য এটি ছিল একটি বিশেষ সুযোগ, তারা এমন সব প্রাথমিক পর্যায়ের উদীয়মান স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে, যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বাজারের জন্য প্রস্তুত এবং কার্যকর ও প্রভাবশালী সমাধান নিয়ে কাজ করছে।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) সম্পর্কে : ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্য-ব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী বহুজাতিক কোম্পানি, যার রয়েছে ৬০ বছরের ঐতিহ্য। বাংলাদেশের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৯টির বেশি পরিবার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে ইউনিলিভারের কোনো না কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করে। লাক্স, লাইফবয়, সার্ফ এক্সেল, ক্লোজআপ, সানসিল্ক, পন্ডস, ভ্যাসলিন এবং ডাভসহ ২৫টিরও বেশি ব্র্যান্ড রয়েছে ইউনিলিভারের, যা বাংলাদেশের লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ হলো ইউনিলিভার গ্রুপ-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে কনজ্যুমার প্যাকেজড পণ্যের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। ইউনিলিভার এবং আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন- www.unilever.com.bd

অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ সম্পর্কে : ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করা অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ একটি বহু-বছরব্যাপী (৩.২ মিলিয়ন ইউরো) উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও অর্থায়ন সুবিধা, যেটির লক্ষ্য ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী এবং প্রাথমিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের টেকসই, বিনিয়োগযোগ্য ব্যবসা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সম্পদ ও পুঁজি সরবরাহ করা। এটি নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বৈশ্বিক সরকারবেসরকারি উদ্যোগ, যা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করছে ওয়াইওয়াই ভেঞ্চার্স, সাজিদা ফাউন্ডেশন এবং বিওয়াইএলসি। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এই উদ্যোগকে সহায়তা করছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ধারণা উন্নয়ন, ইনকিউবেশন, অ্যাকসেলারেশন, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অর্থায়নের মতো সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান করা হয়।

এর উদ্দেশ্য হলো নতুন উদ্যোগে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা, স্থানীয় উদ্যোক্তা পরিবেশকে শক্তিশালী করা এবং ব্যবসাগুলোর মাধ্যমে সামাজিক ও পরিবেশগত ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করা। ২০২৩ সাল থেকে অরেঞ্জ কর্নারস বাংলাদেশ ৪০টিরও বেশি প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবসা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যার ফলে ৫৪০-এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে।প


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *