নিজস্ব প্রতিবেদক : রাত সাড়ে ১১টা। আকাশে তখন বৃষ্টির পূর্বাভাস ও বিজলি চমকাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই কারো। যতই বাধা আসুক রাতের আধারেই নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে হবে, সেই বাসনাতেই একটি পাঁচ টনের ট্রাকের উপরে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৫০ জন গাদাগাদি করে বসে আছেন। কিন্তু বাদ সাধে পুলিশ। আর তখন হতাশার কালো মেঘ যেন সবাইকে ঘিরে ধরে। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে যেখান থেকে এসেছিলেন সেখানেই পাঠিয়ে দেন।
বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পৃথক এলাকা থেকে ৯০জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগের রাতেও আটক করা হয় অন্তত ৫ শতাধিক মানুষকে।
কিন্তু ততক্ষণে ৫০ জনের অনেকেই জানিয়ে গেছেন তাদের নারায়ণগঞ্জ ছাড়ার কারণ। সবার কণ্ঠে একটাই কথা ছিল, ক্ষুধার যন্ত্রণায় নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে চাইছেন তারা।
ওই সময়ে একজন নারী বলেন, কয়েকদিন ধরে বাসায় খাবার নাই। ঘর ভাড়া দিতে পারতাছি না। কোনো কাজ-কর্ম নাই। ঠিকমত খাইতে পারতাছি না। পেটতো চালাইতে হইবো। মাইয়াডার চেহারাটা একটু দেখেন স্যার। গর্ভবতী কিন্তু খাওয়াতে পারছি না। আমরা কি সাধে যাইতাছি। এখানে থাকলে আমরা না খাইয়া মইরা যামু। স্যার আপনি কি আমাদের না খাইয়া মরতে কন?।
ওই নারীসহ আশেপাশের লোকজন জানান, তারা ফতুল্লার আলীগঞ্জ ও রেলস্টেশন এলাকাতে বসবাস করেন। দিনমজুর, লোড- আনলোড, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু তাদের এলাকাতে খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকায় একটি ট্রাকে চড়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামন থানা এলাকার বাসিন্দা। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, রাত পৌনে ১২টায় ফতুল্লার পাগলা রসুলপুল এলাকা থেকে ৪০ জনকে আট করা হয়েছে। তারাও কিশোরগঞ্জ জেলার যাত্রী।
ওসি আরও জানান, এরই মধ্যে করোনার কারণে নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ইনপুট-আউটপুট বন্ধ করা হয়েছে। নারায়গঞ্জকে করোনার হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় নারায়ণগঞ্জের লোকজন গিয়ে করোনা ছড়াচ্ছেন। সে কারণে এখানে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।