মানুষকে বাঁচানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এই আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সবাইকে এখন এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের যারা এই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে, দিন-রাত পরিশ্রম করছে তাদেরকেও আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলেই আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব ইনশা-আল্লাহ।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রমের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন তিনি। কাজেই সেই মানুষকে বাঁচানোটা আমাদের জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে উল্লেখ করে ফসল উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমাদের যেন খাদ্যের অসুবিধা না হয়, কাজেই যেখানে যেই ফসলটা হওয়ানো যাবে..যেমন ধান কাটার পরপরই আমরা কোন কোন ফসল ফলাতে পারিৃএক খ- জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।
সঙ্কটময় এ সময়ে কৃষি সচল রাখতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা আলাদা ৫ হাজার কোটি টাকার একটা তহবিল গঠন করে দিয়েছি, যাতে কৃষিকাজটা অব্যাহত থাকতে পারে।
ক্ষুদ্র, মাঝারি চাষী, কৃষিতে যারা সরাসরি কাজ করে, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য খামার,পোল্ট্রি ফার্ম যাদের আছে প্রত্যেকেই এখান থেকে সহযোগিতা পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সকলেই কিন্তু এখান থেকে অর্থ নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এখানে আমরা প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোরো ধান উঠার সাথে সাথে আমরা ধান ক্রয় করব। ইতিমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ ২১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
করোনা ভাইরাসে সব কিছু বন্ধ থাকলেও যারা ধান কাটবেন তারা যেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।
আস্তে আস্তে আমরা চেষ্টা করব। আপনারা যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এই সংক্রমণের হার কমাতে পারেন, মৃত্যুর হার গতকালকে ৫ জন মারা গেছেন, কিন্তু আজকে মৃত্যুর হারও কমুক।
জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পণ্য পবিহনের ব্যাপারে কোন বাধা নেই উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া নির্দেশনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
পণ্য পবিহনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে এবং আরও কিভাবে আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারিৃকারণ যাতায়াত করতে গেলে তো ট্রাক লাগে অথবা ভ্যান লাগে বা অন্য কিভাবে আমরা বা নৌপথে পণ্য পবিহন করা, সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দেব পর্যায়ক্রমিকভবে, যাতে পণ্য পরিবহনে অসুবিধা না হয়। তাহলেই জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে।
সোমবার বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত জেলার প্রশাসক, পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, নার্স, রাজনীতিক, সেনাসদস্য, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮ জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ : করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বরের আগে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ৮ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি যদি না বদলায় তাহলে সেপ্টেম্বরের আগে কোনো স্কুল-কলেজ খুলবে না। আগে করোনা বিদায় নেবে, তারপরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে।
তিনি বলেন, করোনায় উন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ সবার একই অবস্থা। স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশবাসী নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকছে। আমরা সবার ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। ১০ টাকার চাল সবাইকে দেয়ার চেষ্টা করছি।
‘প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেস্ট করছে। যা হচ্ছে তাই বুলেটিন আকারে জানাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৪১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৪৫ জন। বিশ্বের এর থেকে আরও বেশি লোক মারা গেছেন। যা যা করা দরকার তা করে যাচ্ছি। ৩০০৯ চিকিৎসক অনলাইনে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা মানুষকে সুরক্ষা রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করছেন তাদের প্রণোদনা দিয়েছি। যদি কেউ অসুস্থ হন তাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া আমরা পাঁচ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেব। এভাবে বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস আমরা দিয়েছি এবং সেটা করে যাচ্ছি।
এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করছেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংকট উত্তরণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজেরও ঘোষণা দেন।


বিজ্ঞাপন